
নিজস্ব প্রতিবেদক
মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) নেতা মেরাজুল ইসলামের বিরুদ্ধে একের পর এক চাঞ্চল্যকর অভিযোগ উঠেছে। বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে নারী নির্যাতন, অন্তরঙ্গ ভিডিও ধারণ করে ব্ল্যাকমেইল, অর্থ আত্মসাৎ, অবৈধ বালু ব্যবসা ও রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে চাঁদাবাজিসহ নানা অনিয়মে জড়িয়ে পড়েছেন এই এনসিপি নেতা।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শিক্ষকতা দিয়ে কর্মজীবন শুরু করা মেরাজুল ইসলাম নারীঘটিত কেলেঙ্কারি ও আর্থিক দুর্নীতির কারণে পরপর চারটি কিন্ডারগার্টেন স্কুল থেকে বহিষ্কৃত হন। পরে সরকারবিরোধী আন্দোলনের সুযোগে এনসিপির রাজনীতিতে সক্রিয় হয়ে অল্প সময়ের মধ্যেই মাদারীপুর জেলা সমন্বয় কমিটির সদস্য পদে আসীন হন তিনি।
ভুক্তভোগী এক নারী অভিযোগ করেছেন, বিয়ের আশ্বাসে মেরাজুল তার সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে জোরপূর্বক শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করেন এবং গোপনে ভিডিও ধারণ করে তা ফাঁসের ভয় দেখিয়ে টাকা হাতিয়ে নেন। এ ঘটনায় ওই নারী রাজৈর থানায় এবং সেনা ক্যাম্পে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
এদিকে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ফাঁস হওয়া একাধিক ভিডিও ও অডিও রেকর্ডে মেরাজুলের অশালীন কথোপকথন ছড়িয়ে পড়েছে, যা স্থানীয় জনমনে ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে।
মেরাজুল ইসলাম থ্রি-ডি ডিজিটাল স্কুল, ইকরা স্কুল, কিডস ইন্টারন্যাশনাল স্কুল ও মডেল স্কুল থেকে নারীঘটিত কেলেঙ্কারি ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে বরখাস্ত হন। স্কুল কর্তৃপক্ষ জানায়, প্রধান শিক্ষক থাকা অবস্থায় তিনি প্রায় চল্লিশ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেন এবং প্রবাসী পরিবারের নারীদের লক্ষ্য করে অনৈতিক কর্মকাণ্ড চালান।
রাজনীতিতে প্রভাব বাড়াতে গিয়ে মেরাজুল ইসলাম রাজৈর, তাতিকান্দা, হোসেনপুর ও পাইকপাড়া এলাকায় অবৈধ বালু উত্তোলনের সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন। স্থানীয়দের অভিযোগ, এ কারণে নদী ভাঙন ও ভূমিক্ষয়ের হার উদ্বেগজনকভাবে বেড়েছে। সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কথা বললেই হামলা ও মামলার হুমকি দেওয়া হয়।
অভিযোগ রয়েছে, গোপালগঞ্জ সদর থানার মিথ্যা মামলার ভয় দেখিয়ে আওয়ামী লীগের জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয় নেতাদের কাছ থেকেও চাঁদা আদায় করেছেন তিনি।
তবে সব অভিযোগ অস্বীকার করে মেরাজুল ইসলাম দাবি করেছেন, তার হারানো মোবাইল থেকেই এসব বিভ্রান্তিকর তথ্য ফাঁস করা হচ্ছে।
এনসিপির মাদারীপুর জেলা যুগ্ম সমন্বয়কারী আজগর শেখ জানিয়েছেন, “অভিযোগগুলো তদন্ত করে সত্য প্রমাণিত হলে কেন্দ্রীয় কমিটিতে জানানো হবে এবং দলীয় শৃঙ্খলা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
রাজৈর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাহফুজুল হক বলেন, “বালু উত্তোলন সংক্রান্ত একাধিক অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রশাসন বিষয়টি গুরুত্বসহকারে পর্যবেক্ষণ করছে। আইন ভঙ্গকারীদের কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।”
মাদারীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অবস) জাহাঙ্গীর আলম বলেন, “যে কেউ হয়রানি বা মিথ্যা মামলার অভিযোগ দিলে পুলিশ তা তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে।”
মেরাজুল ইসলামের বিরুদ্ধে একাধিক দুর্নীতি, অনৈতিক আচরণ ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগে এনসিপি নেতাদের ভাবমূর্তি এখন প্রশ্নবিদ্ধ। স্থানীয়রা বলছেন, এমন ব্যক্তির কারণে একটি রাজনৈতিক দল যেমন নৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তেমনি সমাজেও সৃষ্টি হচ্ছে অবিশ্বাস ও হতাশার পরিবেশ।