নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
গত ৫ আগস্টের পর দেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের মধ্য দিয়ে সরকারের সঙ্গে পরিবর্তন আসে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে (বিএসইসি)। খন্দকার রাশেদ মাকসুদের নেতৃত্বাধীন নতুন কমিশন ১৮ আগস্ট দায়িত্ব নেওয়ার পর কারসাজি রোধে তৎপর হলেও বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরাতে ব্যর্থ হয়েছে। দায়িত্বে এসেই আগের সময়ের কারসাজি ও দুর্নীতির ঘটনাগুলোকে একে একে তদন্ত করতে থাকেন। আর সেসবের বিপরীতে জরিমানা করতে থাকেন শত শত কোটি টাকা। কিন্তু দায়িত্ব নেওয়ার ৯ মাস সময় অতিবাহিত হতে চললেও সেই শত শত কোটি টাকা জরিমানার ১ টাকাও আদায় হয়নি। ফলে এসব জরিমানা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে নানা মহলে।
জরিমানার কোনো টাকা আদায় করতে না পারলেও বিনিয়োগকারীদের অনাস্থা ঠিকই কুড়িয়েছেন রাশেদ মাকসুদ। তার দায়িত্ব নেওয়ার দিন ডিএসইর সূচক ছিল ৫ হাজার ৭৭৮ পয়েন্ট। তখন বাজারে কয়েকদিন ৫০০ থেকে হাজার কোটি টাকা লেনদেনও হয়েছে। কিন্তু কিছুদিন যাওয়ার পরই তার নেওয়া কিছু সিদ্ধান্তের পর বিনিয়োগকারীরা তার ওপর থেকে আস্থা হারাতে শুরু করেন। এরপর শুরু হয় পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীদের জন্য দুঃখের সময়। প্রতিদিনই টানা পতনের মধ্যে কমতে থাকে বাজারের সূচক ও মূলধনের পরিমাণ।
রাশেদ মাকসুদ কমিশনের সময় গত ২৫ মে ডিএসইতে সর্বনিম্ন লেনদেন হয় ২৩৫ কোটি টাকা। আর ডিএসইর সূচক নেমেছে একদম তলানীতে, যা ২০১০ সালের ধসের সময়ে হয়েছিল। ২০১০ সালের ধসের সময় পুঁজিবাজারের সূচক সর্বনিম্ন নেমেছিল ৪ হাজার ৫৬৮ দশমিক ৪০ পয়েন্টে। বর্তমানে ডিএসইর সূচক অবস্থান করছে ৪ হাজার ৭০৯ দশমিক ৯২ পয়েন্টে।
রাশেদ মাকসুদ কমিশনের ৯ মাস: রাশেদ মাকসুদ কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর বাজারের সুশাসন নিশ্চিত করবে বলেছিল। কিন্তু ৯ মাস অতিবাহিত হতে চললেও দেখা যাচ্ছে বাজারে কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেই। বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরাতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ। ফলে দিন যত যাচ্ছে বাজার পরিস্থিতি ততই খারাপ হচ্ছে। গত ১৮ আগস্টে যেখানে বাজার মূলধন ছিল ৭ লাখ ১ হাজার ৭৮ কোটি টাকা, সেখানে ৯ মাসের ব্যবধানে বাজার মূলধন ৫৪ হাজার ৯৩ কোটি টাকা কমে দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ৪৬ হাজার ৯৮৪ কোটি টাকায়। একই সময়ে ডিএসইর প্রধান সূচক ছিল ৫ হাজার ৭৭৮ পয়েন্ট। তা ৯ মাসে ১ হাজার ১৪০ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৬৩৭ পয়েন্টে।
ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ডিবিএ) সভাপতি সাইফুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, মৌলিকভাবে দেখলে বর্তমান সময়টা ২০১০ থেকেও শোচনীয়। ২০১০ সালে বাজারে এত বাজে কোম্পানি ছিল না। ব্যাংকিং খাত তখন বেস্ট পারফরমার ছিল; কিন্তু ২৫ সালে এসে ব্যাংক তা করতে পারছে না। তখন এনবিএফআই কোম্পানিগুলো ভালো ছিল; কিন্তু বর্তমানে সেগুলো খুবই খারাপ অবস্থায় আছে। ২০১০ সালে জীবন বিমা কোম্পানিগুলোর অবস্থা ভালো ছিল; কিন্তু ২৫ সালে আমরা দেখতে পাচ্ছি সম্পূর্ণ ভিন্ন। তাই মৌলিকভাবে দেখলে বর্তমান অবস্থা তখনকার থেকেও শোচনীয়।
ডিএসইর একজন পরিচালক গণমাধ্যমকে বলেন, বর্তমান পরিস্থিতি অন্যান্য যে কোনো সময়ের থেকে খারাপ। ৯৬ ও ১০ সালে আমরা ধস বলতে পারলেও এখন ধস বলতে পারছি না। কিন্তু আমরা সেই সময়ের থেকেও খারাপ পরিস্থিতিতে অবস্থান করছি। নামমাত্র যে লেনদেন হচ্ছে, এতে চোখের সামনে অনেক ব্রোকারেজ হাউস অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে। অনেক শাখা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে ধসের থেকেও খারাপ কিছু হবে আমাদের জন্য।
ঈদের ছিল না আনন্দ: একটি ব্রোকারেজ হাউসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে বলেন, আমাদের কয়েকটি শাখা বন্ধ হয়েছে। কয়েকজন কর্মী ছাঁটাই করা হয়েছে। আরও ছাঁটাইয়ের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বাজারের যে পরিস্থিতি এতে অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে মুশকিল হয়ে যাচ্ছে। আগে ঈদের সময় বাজারে কত আনন্দ দেখা যেত সবার মধ্যে। কিন্তু গত ঈদ এবং কোরবানি ঈদে সেই আনন্দ কোথায় যেন বিলীন হয়ে গেল। তাই আনন্দহীন একটি ঈদ উদযাপন করতে হয়েছে।
শিমুল আহমেদ নামে একজন বিনিয়োগকারী বলেন, আমি একদম নিঃস্ব হয়ে গেছি। গত ঈদটাও আনন্দে করতে পারিনি। এবারের কোরবানি ঈদটাও সে রকমই হয়েছে। যেই টাকা বিনিয়োগ করেছিলাম, তা প্রায় নাই হয়ে গেছে। ফলে দিনশেষে হতাশা ছাড়া আর কিছুই অবশিষ্ট নেই।