নিজস্ব প্রতিবেদক
বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তে ফের ভয়াবহ মাইন বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এতে আরাফাতুল ইসলাম ওরফে বাদল (১৭) নামে এক বাংলাদেশি যুবকের বাম পায়ের নিচের গোড়ালি বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।
রোববার দুপুর ২টার দিকে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার সদর ইউনিয়নের জামছড়ি সীমান্ত এলাকায় এই বিস্ফোরণ ঘটে। আহত আরাফাতুল ইসলাম জামছড়ি গ্রামের বাসিন্দা খুইল্লা মিয়ার ছেলে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সীমান্তের শূন্যরেখার কাছে মিয়ানমারের বিদ্রোহী সশস্ত্র সংগঠন আরাকান আর্মির পুতে রাখা ল্যান্ডমাইনে বিস্ফোরণ ঘটে। বিকট শব্দ শুনে স্থানীয়রা সেখানে গিয়ে আহত আরাফাতকে দেখতে পান। পরে তাকে উদ্ধার করে প্রথমে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়।
গত এপ্রিল মাসে বান্দরবানে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা সীমান্তে আবারও স্থলমাইন বিস্ফোরণে যুবকের পা বিচ্ছিন্ন হয়। তার আগে একই সীমান্তে গত মার্চ মাসে তিন দিনের ব্যবধানে দুজন যুবক মাইন বিস্ফোরণে পা হারান। সীমান্তবর্তী এলাকাজুড়ে এখন আতঙ্ক বিরাজ করছে। এছাড়া কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার হোয়াইক্যং সীমান্তে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে তোতার দিয়া এলাকায় মাইন বিস্ফোরণে পা উড়ে যায় বাংলাদেশি যুবক মোহাম্মদ ফিরোজ ওরফে ফিরোজ আলমের (৩০)। তিনি সেখানে মাছ ধরেত গিয়েছিলেন বলে স্থানীয়রা জানান।
স্থানীয়রা বলছেন, সীমান্তের ওপার মিয়ানমারে সশস্ত্র সংঘাত চলমান থাকায় বাংলাদেশ সীমান্তে নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়েছে। সাধারণ মানুষ জীবিকার তাগিদে সীমান্তে গেলেই ঝুঁকির মধ্যে পড়ছে। সীমান্তে মিয়ানমারের আরাকান আর্মি ও সেনাবাহিনীর চলমান সংঘর্ষ এবং এর প্রভাব বাংলাদেশের অভ্যন্তরে পড়া—এই বিষয়গুলো নিয়ে স্থানীয়রা প্রশ্ন তুলছেন: “নাইক্ষ্যংছড়ি কি এখন যুদ্ধক্ষেত্রে রূপ নিয়েছে?”
এদিকে গত ১৬ ও ১৭ এপ্রিল বান্দরবানের থানচির রেমাক্রি ইউনিয়নের ঝিরিমুখ এলাকায় অনুষ্ঠিত হয়েছে ‘জলকেলি উৎসব’। ওই উৎসবে মিয়ানমারের বিদ্রোহী সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মির সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। এসময় বিজিবি উপস্থিত থাকলেও ছিলো সম্পূর্ণ নিষ্ক্রিয়। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রবল বিতর্ক শুরু হয়েছে।
এই অনুষ্ঠানে মিয়ানমারের আরাকান আর্মির গুরুত্বপূর্ণ সদস্য উপস্থিত ছিলেন। তারা হলেন, ইউএলএ কমান্ডার লাভ্রের (স্থানীয় নাম কুখাই রাখাইন) ইউএলএ লিডার মংথুইহ্লা মারমা, আরাকান আর্মির সক্রিয় সদস্য, লেফটেন্যান্ট জোকা, ক্যাপ্টেন ক্যজো রাখাইন, ক্যাপ্টেন ভোলং রাখাইন প্রমুখ। এছাড়াও নাম না জানা মিয়ানমারের অভ্যন্তর হতে আগত আরাকান আর্মির বেশ কয়েকজন সিনিয়র সদস্যসহ আরাকান আর্মির প্রায় শতখানেক বর্ণিত অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ সরকারের উচিত হবে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা এবং সর্বজনীন রাজনৈতিক ঐকমত্যের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা। অন্যথায়, দেশের অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতা ও জাতীয় নিরাপত্তা আরও গভীর সংকটে পড়তে পারে।