নিজস্ব প্রতিবেদক
অন্তর্বর্তীকালীন ইউনূস সরকারের আমলে দেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপাসনালয়গুলোর ওপর সহিংসতা উদ্বেগজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। সর্বশেষ রাজধানীর খিলক্ষেত এলাকায় অবস্থিত একটি সার্বজনীন দুর্গামন্দির ভেঙে ফেলা হয়েছে রেলওয়ের উচ্ছেদ অভিযানের অংশ হিসেবে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বছরের পর বছর ধরে খিলক্ষেতের ওই স্থানে দুর্গাপূজাসহ কালীপূজা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছিল। যদিও মন্দিরটি ছিল অস্থায়ী এবং পাকা স্থাপনা ছিল না, তবে সম্প্রতি মন্দিরের চারপাশ টিন দিয়ে ঘিরে ইটের গাঁথুনির কাজ শুরু হয়। এই উন্নয়নকাজের জের ধরেই সোমবার রাতে অজ্ঞাত একটি দল দাবি করে মন্দিরে ভাঙচুর করতে যায়।
সংশ্লিষ্ট মহলে প্রশ্ন উঠেছে—যদি রেলের জমিতে অবৈধ স্থাপনা থেকেই থাকে, তবে উচ্ছেদ অভিযান রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের করা উচিত। কিন্তু সাধারণ মানুষের হাতে কেন হামলা?
মন্দিরে হামলা অরও কয়েকটি ঘটনা
গত বছরের সেপ্টেম্বরে পাবনার চাটমোহরের হান্ডিয়াল পশ্চিমপাড়ায়, ভদ্রা কালীমাতা মন্দিরে গভীর রাতে অজ্ঞাত দুর্বৃত্তরা তিনটি প্রতিমা ভাঙচুর করে পালিয়ে যায়।
ওই বছরের নভেম্বরে পাথরঘাটায় শান্তন্বেশ্বরী মাতৃমন্দিরে হামলা ও ভাঙচুর করা হয়, সেই সাথে মন্দিরের আশপাশের দোকান ও বাড়িও ভাঙচুর করা হয়
গত ডিসেম্বরে ধর্ম অবমাননার ফেসবুক পোস্টকে কেন্দ্র করে দুয়ারাবাজার উপজেলায় হিন্দুদের বাড়ি-ঘর ও মন্দিরে হামলা, লুটপাট করা হয়। এতে ২০-২৫টি মন্দিরে হামলার ঘটনা ঘটে।
গত ফেব্রুয়ারিতে রাজশাহীর ফুদকিপাড়ায় সরস্বতীপূজার একটি মণ্ডপে স্থানীয় যুবকদের হামলায় সাউন্ডবক্স ভাঙচুর হয়। এরপর ক্ষুব্ধ সনাতন ধর্মাবলম্বীরা বোয়ালিয়া থানা ঘেরাও করে বিচারের দাবি জানান।
একই মাসে পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলায়, এক ব্যক্তির দোকান ও সংলগ্ন মন্দিরে হামলার ঘটনা ঘটে। বাধা দিতে গেলে কমপক্ষে ১০ জনকে মারধর করে আহত করা হয়।
এদিকে, বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোট জানিয়েছে, শেখ হাসিনার সরকার পতনের পরের চার মাসে সারা দেশে ৬৯টি মন্দিরে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে।
জোটের অন্যতম সংগঠক গৌরাঙ্গ দাস ব্রহ্মচারী বলেন, “গত ৫ আগস্ট থেকে ২১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বিভিন্ন জাতীয় ও স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবরের ভিত্তিতে এই প্রতিবেদন তৈরি হয়েছে।”
শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তীকালীন ইউনূস প্রশাসনের সময়ে দেশে রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ ও নিরাপত্তা ব্যবস্থার চরম দুর্বলতা প্রকাশ পেয়েছে। ৫ আগস্টের মাত্র দুদিন পর কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কারাগার থেকে সংঘবদ্ধভাবে ২০৯ জন বন্দির পালিয়ে যাওয়া এবং তার আগে নরসিংদীতে জঙ্গিদের ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনা গোটা নিরাপত্তা ব্যবস্থার ওপর বড় ধরনের প্রশ্নচিহ্ন তুলে দিয়েছে।
এমন প্রেক্ষাপটে সারাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের উপাসনালয়ে ধারাবাহিক হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগকে অনেকেই রাষ্ট্রীয় মদদে জঙ্গিবাদের পুনর্বাসনের ইঙ্গিত হিসেবে দেখছেন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, জঙ্গিদের সংগঠিতভাবে মুক্ত করে দেওয়া এবং সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার ঘটনায় একদিকে যেমন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিষ্ক্রিয়তা, অন্যদিকে রাজনৈতিক জঙ্গিবাদের উত্থান লক্ষ করা যাচ্ছে।
এই প্রবণতা কেবল সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির জন্য হুমকি নয়—এটি দেশের সার্বভৌমত্ব, অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ও আন্তর্জাতিক অবস্থানের ওপরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।