নিজস্ব প্রতিবেদক
চাঞ্চল্যকর জুলাই আন্দোলন নিয়ে আবারও সামনে এলো নতুন এক বিস্ময়কর তথ্য। যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়ার সঙ্গে থাকা ব্যাগ থেকে একটি অ্যামোনেশন ম্যাগজিন উদ্ধার হয়েছে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। রোববার (২৯ জুন) সকালে প্রি-বোর্ডিং স্ক্রিনিংয়ের সময় তাঁর ছোট একটি পাউচ থেকে ম্যাগাজিনটি শনাক্ত করে কর্তৃপক্ষ।
ঘটনার সময় আসিফ মাহমুদ তার্কিশ এয়ারলাইন্সের টিকে-৭১৩ নম্বর ফ্লাইটে তুরস্ক হয়ে মরক্কোর মারাক্কেশে যাচ্ছিলেন, যেখানে তিনি ওআইসি ইয়ুথ ক্যাপিটাল ২০২৫ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের কথা ছিল। বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন এসএম রাগীব সামাদ জানান, ম্যাগজিনটি শনাক্তের পর আসিফ মাহমুদ বিষয়টিকে ‘ভুলবশত লাগেজে চলে এসেছে’ বলে ব্যাখ্যা দেন এবং দুঃখ প্রকাশ করেন। পরে তিনি ম্যাগজিনটি প্রোটোকল অফিসারের কাছে হস্তান্তর করেন।
অ্যামোনেশন ম্যাগজিন হলো একধরনের ডিভাইস, যা আগ্নেয়াস্ত্রের জন্য গুলি সংরক্ষণ এবং সরবরাহের কাজ করে। এটি বন্দুকের অবিচ্ছেদ্য অংশ, যা থেকে গুলি চেম্বারে পৌঁছে যায়। ম্যাগজিন একাধিক ধরনের হতে পারে—বন্দুকের ভিতরে স্থায়ীভাবে যুক্ত অথবা আলাদাভাবে সংযুক্তযোগ্য। এই ধরনের সামগ্রী আন্তর্জাতিক ভ্রমণে উচ্চ পর্যায়ের নিরাপত্তা ঝুঁকি হিসেবে বিবেচিত হয়।
আন্তর্জাতিক বেসামরিক বিমান চলাচল বিধিমালা অনুযায়ী— আইকাও, বেবিচক, আইএটিএ ও এআইপি অনুসারে— কেবিন ব্যাগেজে ম্যাগজিন বহন সিদ্ধান্তমূলকভাবে নিষিদ্ধ। শুধুমাত্র নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে চেক-ইন লাগেজে ম্যাগজিন বহনের অনুমতি রয়েছে।
ঘটনার সময় ফ্লাইটটি সকাল ৭টায় ঢাকা ছাড়ে। আইনগত দিক থেকে ঘটনাটি তদন্তাধীন কি না, সে বিষয়ে এখনো আনুষ্ঠানিক কোনো বিবৃতি আসেনি। এই ঘটনার প্রেক্ষিতে ৫ আগস্টের রাজনৈতিক পালাবদল ও জুলাই আন্দোলনের সময় ব্যবহৃত ৭.৬২ রাইফেল ও স্নাইপার নাইট্রো রাইফেল-এর ব্যবহার নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে।
অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন একসময় উল্লেখ করেছিলেন, জুলাই আন্দোলনে সাধারণ নাগরিকের হাতেও এই ধরনের আগ্নেয়াস্ত্র ছিল। এরপরই তাকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়।
অন্যদিকে, চলতি মাসের শুরুতে নড়াইলের কালিয়ায় সেনাবাহিনী সোহান মোল্যা (২৬) নামের এক শিক্ষার্থীর ঘর থেকে একটি উন্নত মানের স্নাইপার নাইট্রো রাইফেল উদ্ধার করে। সেই রাইফেলের ব্যবহার জুলাই আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ছিল, এমনটিও জানায় সংশ্লিষ্ট সূত্র।
এই প্রেক্ষাপটে আসিফ মাহমুদের ব্যাগ থেকে অ্যামোনেশন ম্যাগজিন উদ্ধারের বিষয়টি নিছক 'ভুল' নাকি এর পেছনে গভীর কোনো সংযোগ আছে—তা নিয়ে তদন্তকারীদের নজর বাড়ছে।
ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন, “ম্যাগজিনটির উপস্থিতি শুধু একক ঘটনা নয়, বরং এটি বৃহত্তর একটি রাজনৈতিক ও নিরাপত্তাজনিত প্রশ্নের ইঙ্গিত দিতে পারে।”
নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মতে, “যুব উপদেষ্টার ব্যাগে ম্যাগজিন থাকার বিষয়টি নিছক ভুল হিসেবে দেখলেই ভুল হবে। দেশে যখন একের পর এক আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধারের খবর আসছে, তখন এই ঘটনাও তদন্তের আওতায় আনা উচিত।” কেউ কেউ বলছেন, “এই ঘটনা ক্ষমতার অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব, নিরাপত্তা ফাঁকফোকর এবং আগ্নেয়াস্ত্রের প্রভাব বিস্তারের বড় একটি ইঙ্গিত হতে পারে।”