নিজস্ব প্রতিবেদক
নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন না করার চেষ্টায় লিপ্ত হয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতা অবৈধভাবে ধরে রাখা এই সরকার এখন নতুন কৌশল হিসেবে আনছে ‘আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব’ (পিআর) পদ্ধতিতে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তাব। বিশ্লেষকদের মতে, এটি একটি রাজনৈতিক চাল, যার মাধ্যমে নির্বাচনকে আরও পেছানো এবং ক্ষমতায় থাকার সময় দীর্ঘায়িত করাই তাদের মূল লক্ষ্য।
বিশ্লেষকদের ধারণা, অন্তর্বর্তী সরকারের এই পরিকল্পনায় জামায়াতে ইসলাম ও কয়েকটি ইসলামি দলকে সক্রিয়ভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। এসব দলকে দিয়ে পিআর পদ্ধতির পক্ষে জনমত তৈরির চেষ্টা চলছে। ইতোমধ্যে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ (আইএবি) ও জামায়াতে ইসলাম যৌথভাবে পিআর পদ্ধতির পক্ষে মহাসমাবেশ করেছে। সেখানে জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচার, নির্বাচনী সংস্কার এবং পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন আয়োজনের দাবি তোলা হয়।
এদিকে অন্তর্বর্তী সরকার ও বিএনপি—বর্তমানে দেশের রাজনীতির গুরুত্বপূর্ণ দুই পক্ষ—আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের বিষয়ে প্রাথমিকভাবে সম্মত হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
সূত্র জানায়, লন্ডনে অনুষ্ঠিত একান্ত বৈঠকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এই বিষয়ে আলোচনা করেন। কিন্তু বিশ্লেষকদের মতে, এটি ছিল ইউনূসের কৌশলী ফাঁদ, যার মাধ্যমে তারেক রহমানকে একটি বিভ্রান্তিমূলক প্রক্রিয়ার মধ্যে টেনে আনা হয়েছে।
অন্যদিকে, নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়ার আরও একটি ইঙ্গিত মিলেছে। সরকারের ঘনিষ্ঠ মহল থেকে জানা যাচ্ছে, তারা আগামী নির্বাচনের নির্ধারিত তারিখে একটি স্থানীয় নির্বাচন দিয়ে জাতীয় নির্বাচনকে ধাপে ধাপে পেছানোর পরিকল্পনা করছে। এতে তারা সময় কিনে নিজেদের প্রভাব ও ক্ষমতা আরও জোরদার করতে পারবে।
১৯ জুলাই রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জাতীয় সমাবেশের ঘোষণা দিয়েছে জামায়াতে ইসলাম। সেখানে দলটির পক্ষ থেকেও পিআর পদ্ধতিতে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের দাবি জানানো হবে বলে জানা গেছে। তাদের দাবি, এ পদ্ধতি হলে জনগণের প্রকৃত মতামত নির্বাচনী ফলাফলে প্রতিফলিত হবে।
প্রসঙ্গত, আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) নির্বাচন পদ্ধতিতে একটি দল যত শতাংশ ভোট পায়, তত শতাংশ আসন তারা পায়। এতে বড় দলের পাশাপাশি ছোট দলগুলোরও সংসদে প্রবেশাধিকার তৈরি হয়। কিন্তু বিশ্লেষকরা বলছেন, বাংলাদেশের মতো রাজনৈতিক বাস্তবতায় এই পদ্ধতি হঠাৎ করেই চালু করলে তা হবে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও অসাংবিধানিক।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব বা পিআর পদ্ধতির মতো একটি মৌলিক নির্বাচন ব্যবস্থা হঠাৎ করে প্রস্তাব করা রাজনৈতিক উদ্দেশ্য ছাড়া আর কিছুই নয়। এ ধরনের পদ্ধতি বাস্তবায়ন করতে হলে সাংবিধানিক সংশোধন, জনমত গ্রহণ এবং সময়োপযোগী রাজনৈতিক সংলাপ প্রয়োজন। কিন্তু এখানে তা হচ্ছে না। বরং একটি মহল এটিকে একটি বিকল্প নির্বাচন কাঠামো হিসেবে তুলে ধরে নির্ধারিত জাতীয় নির্বাচনকে বিলম্বিত করার কৌশল হিসেবে ব্যবহার করছে। এটা রাজনৈতিকভাবে খুবই বিপজ্জনক এবং গণতন্ত্রের জন্য হুমকিস্বরূপ।"