নিজস্ব প্রতিবেদক
শেখ হাসিনা সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার লক্ষ্যে সংঘটিত বিরোধী রাজনৈতিক আন্দোলনে নারীদের ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-তে অনেক নারী প্রথম সারিতে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় সেই নারীদের বড় অংশকেই এখন আর সংগঠনের কার্যক্রমে দেখা যায় না। অনেকে হয়েছেন অবহেলিত, আবার অনেকে মুখোমুখি হয়েছেন অপমানজনক পরিস্থিতির।
সম্প্রতি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্ল্যাটফর্ম থেকে পদত্যাগ করেছেন সংগঠনটির মুখপাত্র উমামা ফাতেমা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া এক পোস্টে তিনি বলেন, “প্ল্যাটফর্মের মুখপাত্র হিসেবে যাওয়ার পরেই বুঝতে পারি—সংস্কার, শহীদ, আহত এসব কেবল মুখের বুলি। অনেক ছাত্রছাত্রী পরিবর্তনের স্বপ্ন নিয়ে এই প্ল্যাটফর্মে যুক্ত হয়েছিল, কিন্তু তাদের সঙ্গে শুধু প্রতারণা হয়েছে।”
তিনি আরও অভিযোগ করেন, “যে মানুষগুলোর সঙ্গে আমি একসাথে মিছিল করেছি, তারা-ই পরিকল্পিতভাবে জুনিয়রদের দিয়ে আমার বিরুদ্ধে smear campaign চালায়। তাদের আচরণে বুঝেছি, মানুষ ভিতর থেকে কতটা ছোট হতে পারে। এরা প্রয়োজন ফুরালে মানুষকে টিস্যু পেপারের মতো ফেলে দেয়। মার্চ-এপ্রিল মাসে কাজ করতে গিয়ে দেখেছি, সুবিধাবাদীরা পোকার মতো এই প্ল্যাটফর্মকে খেয়ে ফেলেছে।”
এই প্রেক্ষাপটে গত ফেব্রুয়ারিতে রাজধানীর শাহবাগে ‘জুলাইয়ের নারীরা’ ব্যানারে আয়োজিত এক নারী সমাবেশে প্রশ্ন উঠেছে—জুলাই আন্দোলনের নারীরা কোথায় হারিয়ে গেলেন? এই সমাবেশে আলোচকরা বলেন, আগে যারা রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন, তাঁদের অনেকেই এখন নিষ্ক্রিয়। জুলাই–আগস্টের আন্দোলনে অংশ নেওয়া অনেক নারী বর্তমানে সাইবার বুলিংয়ের শিকার হচ্ছেন বলেও অভিযোগ উঠে।
এদিকে, এনসিপির অভ্যন্তরীণ পরিবেশ নিয়েও উঠেছে গুরুতর অভিযোগ। দলটির সদস্য নীলা ইসরাফিল এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক (স্থগিত) সরোয়ার তুষারের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানি ও শিষ্টাচারবহির্ভূত আচরণের অভিযোগ আনেন। এ বিষয়ে তিনি এনসিপির গঠিত তদন্ত কমিটির কাছে লিখিত অভিযোগপত্র জমা দিয়েছেন এবং তা নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে প্রকাশও করেছেন।
অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, “সরোয়ার তুষার শুরুতে মানবিক সহায়তা দিলেও পরে রাজনৈতিক সম্পর্ককে ব্যক্তিগত ও অনৈতিকভাবে ব্যবহার করেন। তিনি প্রায়ই রাতের বেলা কল করে অশালীন মন্তব্য করতেন, যেমন: ‘তোমার কণ্ঠে প্রতিবাদের স্লোগান ভালো লাগে’, ‘তোমার ঠোঁট সুন্দর’, ‘একটা সুন্দর ছবি পাঠাও’— এসব আমাকে চরম অস্বস্তিতে ফেলেছে।”
এই সব ঘটনা বর্তমান বিরোধী রাজনীতির অভ্যন্তরে নারীদের নিরাপত্তা, সম্মান ও অংশগ্রহণ নিয়ে বড় প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। একসময় যাঁরা এই আন্দোলনের মুখ ছিলেন, তাঁরাই আজ মুখ বন্ধ করে দূরে সরে দাঁড়াচ্ছেন।