বাংলাদেশে আফগানিস্তানের মতো শরিয়া আইন প্রতিষ্ঠার পক্ষে মত দিয়েছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের (ইআবা) সিনিয়র নায়েবে আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করিম। ১ জুলাই প্রচারিত টেলিভিশন অনুষ্ঠান "ঠিকানায় খালেদ মাহিউদ্দিন"-এ অংশ নিয়ে তিনি বলেন, দেশের জনগণ এখন ইসলামী শক্তির শাসন দেখতে চায় এবং আফগানিস্তানের মতো শরিয়া শাসনব্যবস্থা বাংলাদেশেও কল্যাণ বয়ে আনতে পারে।
ফয়জুল করিম বলেন, “আফগানিস্তানে যেভাবে শরিয়া আইন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, তেমনি বাংলাদেশেও যদি ইসলামী নীতির ভিত্তিতে রাষ্ট্র পরিচালিত হয়, তাহলে নৈতিক অবক্ষয় রোধ হবে এবং সমাজে শৃঙ্খলা ফিরে আসবে।” তিনি দাবি করেন, দেশের রাজনৈতিক কাঠামো পুনর্গঠন করতে হলে ইসলামী আইনই একমাত্র কার্যকর পন্থা।
এই বক্তব্যকে স্বাগত জানিয়েছেন ইআবা-র সমর্থকরা। তাদের মতে, দেশের মূল্যবোধ ও আদর্শ রক্ষায় ইসলামী শাসনব্যবস্থাই প্রয়োজন। তারা এটিকে দেশের ‘নৈতিক পুনর্জাগরণ’ হিসেবে বিবেচনা করছেন। তবে ধর্মনিরপেক্ষ রাজনীতির অনুসারী, অধিকারকর্মী এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিরা এই বক্তব্যকে উদ্বেগজনক এবং বিপজ্জনক বলে মন্তব্য করেছেন।
বিশ্লেষকরা বলছেন, শরিয়া প্রতিষ্ঠার এমন আহ্বান দেশের সংবিধানে ঘোষিত ধর্মনিরপেক্ষতা ও গণতন্ত্রের মূলনীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এটি নারী, সংখ্যালঘু ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ওপর সরাসরি হুমকি সৃষ্টি করতে পারে।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ সম্প্রতি রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড জোরদার করেছে। ২৮ জুন ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত মহাসমাবেশে দলের আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, “দেশের মানুষ এখন ইসলামী শক্তির শাসন চায়।” ওই সমাবেশে দলটি ১৬ দফা দাবি উত্থাপন করে, যার মধ্যে ছিল প্রতিনিধিত্বমূলক (পিআর) ভোট পদ্ধতি চালু করা এবং অতীতের “গণহত্যার” বিচার নিশ্চিত করা।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ৫ আগস্ট ২০২৪ সালের বিতর্কিত জাতীয় নির্বাচনের পর গঠিত অনির্বাচিত সরকারের নীরবতা মৌলবাদী গোষ্ঠীকে আরও সাহসী করে তুলেছে। তারা বলছেন, ক্ষমতার বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন থাকায় সরকার উগ্র ধর্মীয় বক্তব্যের বিরুদ্ধে কোনো অবস্থান নিতে পারছে না বা নিচ্ছে না। এর ফলে মৌলবাদ ও ধর্মীয় চরমপন্থার বিস্তার ব্যাপক হারে বাড়ছে।
মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, বাংলাদেশে একটি সুস্পষ্ট পরিকল্পনার মাধ্যমে অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রব্যবস্থাকে ভেঙে ফেলার প্রচেষ্টা চলছে। তাদের মতে, মৌলবাদকে প্রশ্রয় দিয়ে একটি গোষ্ঠী দেশকে ‘দ্বিতীয় আফগানিস্তান’ বানানোর দিকে এগিয়ে নিচ্ছে, যা শুধু গণতন্ত্র নয়, বরং আঞ্চলিক নিরাপত্তার জন্যও হুমকিস্বরূপ।
এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত সরকার বা কোনো বড় রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে মুফতি ফয়জুল করিমের বক্তব্য সম্পর্কে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তবে বিশ্লেষকরা মনে করছেন, রাষ্ট্র যদি এই ধরনের চরমপন্থী বক্তব্যকে কঠোরভাবে মোকাবিলা না করে, তাহলে দেশ গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ চরিত্র হারিয়ে একটি সংকীর্ণ ও সহিংস রাষ্ট্রে রূপ নিতে পারে।