নিজস্ব প্রতিবেদক
বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সাম্প্রতিক শুল্ক চুক্তিকে নিয়ে জাতিকে বিভ্রান্ত করার অভিযোগ উঠেছে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রেস সচিব শফিকুল আলমের বিরুদ্ধে। গত ১ আগস্ট এক প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ৩৫% থেকে ২০% এ শুল্ক হ্রাস একটি "বড় কূটনৈতিক সাফল্য", যেখানে "জাতীয় স্বার্থের বিনিময়ে কোনো কিছু হয়নি"।
তিনি আরও জোর দিয়ে বলেন, "কোনো নিরাপত্তা চুক্তি হয়নি, এবং যুক্তরাষ্ট্র কোনো অতিরিক্ত শর্ত দেয়নি।"
কিন্তু সত্যিই কি তা-ই?
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই বক্তব্য ছিল জনমত নিয়ন্ত্রণের একটি সচেতন চেষ্টা। কূটনৈতিক বিজয়ের নামে আড়াল করা হয়েছে সেই সব স্পর্শকাতর শর্ত, যেগুলো যুক্তরাষ্ট্র এই চুক্তির বিপরীতে চাপিয়েছে বলে আন্তর্জাতিক পর্যায়ের রিপোর্টে প্রকাশ পেয়েছে।
পালো রিপোর্ট ফাঁস করে দিল গোপন তথ্য
আন্তর্জাতিক গবেষণা সংস্থা "পালো" সম্প্রতি একটি বিস্ফোরক প্রতিবেদন প্রকাশ করে জানায়, এই চুক্তির আওতায় যুক্তরাষ্ট্র কৌশলগত নজরদারি, নিরাপত্তা সহযোগিতা, সামরিক পণ্য ক্রয়, জ্বালানি আমদানি ও সরঞ্জাম বাণিজ্যে দীর্ঘমেয়াদি সুবিধা নিশ্চিত করেছে।
জাতীয় দৈনিকে এসেছে একই ধরনের তথ্য
দেশের শীর্ষ দৈনিক প্রথম আলো তাদের এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্র থেকে সামরিক সরঞ্জাম, বেসামরিক বিমান ও যন্ত্রাংশ আমদানি বাড়াবে। সেই সঙ্গে গম, তুলা, ভোজ্যতেল ও এলএনজি আমদানিতে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি হবে।
সরকার বলছে, সব কিছু স্বচ্ছ
প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলছেন, “কোনো সামরিক চুক্তি হয়নি, যুক্তরাষ্ট্র কোনো বাড়তি শর্ত চাপায়নি।” তবে তাঁর এই বক্তব্যের বাস্তবতা এখন প্রশ্নবিদ্ধ, কারণ জনগণের সামনে প্রকৃত চিত্র তুলে ধরা হয়নি বলে অভিযোগ উঠছে।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, প্রেস সচিবের বক্তব্য শুনে মনে হয়েছে জনগণকে শান্ত রাখার একটি 'ড্যামেজ কন্ট্রোল' প্রয়াস। কিন্তু গণতান্ত্রিক সরকারের উচিত ছিল বিস্তারিত জানিয়ে জনগণের আস্থা অর্জন করা, কারণ চুক্তির প্রকৃত তথ্য একদিন না একদিন প্রকাশ পাবেই।
নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মতে, যদি সত্যিই কোনো সামরিক বা নজরদারি সংক্রান্ত চুক্তি হয়ে থাকে এবং তা সরকার গোপন রেখেছে, তাহলে এটি জাতীয় নিরাপত্তার প্রশ্নে গুরুতর উদ্বেগের বিষয়। এমন সিদ্ধান্তে সর্বদলীয় পরামর্শ এবং জনমতের প্রতিফলন থাকা উচিত ছিল।