
নিজস্ব প্রতিবেদক
মধ্যপ্রাচ্যে আরব বসন্তের পর সিরিয়া, লিবিয়ায় ও ইয়েমেনে শুরু হয় গৃহযুদ্ধ। এসব দেশের জনগণ পশ্চিমা তথা আমেরিকান ফাঁদে পা দিয়ে নিজেদের মধ্যে গৃহযুদ্ধ শুরু করে। এরপর সেখানে মার্কিন সেনাদের উপস্থিতি হয়। তারা ওই দেশগুলোকে ধ্বংস করে এরপর তা নিজেদের সমর্থিত শাসকদের হাতে তুলে দেয়। এভাবেই দেশগুলোকে ধ্বংস করেছে আমেরিকা।
আরব বসন্তের পর বিভিন্ন দেশে গৃহযুদ্ধ
সিরিয়া : ২০১১ সালে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ দিয়ে শুরু হলেও প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের সরকারের কঠোর দমনপীড়ন দ্রুত দেশটিকে গৃহযুদ্ধে ঠেলে দেয়। বিভিন্ন বিদ্রোহী গোষ্ঠী, কুর্দি বাহিনী ও জঙ্গি সংগঠন আইএস জড়িয়ে পড়ে সংঘাতে। বিদেশি শক্তির হস্তক্ষেপে যুদ্ধ আরও জটিল ও দীর্ঘস্থায়ী হয়।
লিবিয়া : গাদ্দাফি-বিরোধী আন্দোলন ২০১১ সালে পূর্ণাঙ্গ সংঘাতে রূপ নেয়। ন্যাটোর সামরিক হস্তক্ষেপের পর গাদ্দাফি নিহত হলেও স্থিতিশীলতা ফেরেনি। দেশটি বিভক্ত হয়ে পড়ে নানা মিলিশিয়া গোষ্ঠী ও প্রতিদ্বন্দ্বী সরকারের মধ্যে, যা আজও পুরোপুরি মীমাংসিত হয়নি।
ইয়েমেন : ২০১১ সালের বিক্ষোভে প্রেসিডেন্ট আলি আবদুল্লাহ সালেহ ক্ষমতা ছাড়লেও নতুন সরকার স্থায়ী সমাধান দিতে ব্যর্থ হয়। পরবর্তীতে হুথি বিদ্রোহীরা রাজধানী দখল করলে ২০১৫ সালে সৌদি নেতৃত্বাধীন জোট যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। এরপর থেকে দেশটি মানবিক বিপর্যয়ে নিমজ্জিত।
সুদান : আরব বসন্তের ধারাবাহিকতায় ২০১৮-১৯ সালে স্বৈরশাসক ওমর আল-বশিরবিরোধী আন্দোলন শুরু হয়। তিনি ক্ষমতা হারালেও সেনাবাহিনী ও আধাসামরিক র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্স (আরএসএফ)-এর মধ্যে ক্ষমতার দ্বন্দ্ব নতুন গৃহযুদ্ধ উসকে দেয়। ২০২৩ সালে সংঘর্ষ ভয়াবহ রূপ নিয়েছে।
বাংলাদেশও হাঁটছে একই পথে
সূত্র বলছে, বাংলাদেশেও একই মডেলে আগানোর পরিকল্পনা করছে আমেরিকা। বাংলাদেশের কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ চট্টগ্রাম অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক তৎপরতা বেড়ে যাওয়ায় উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। এটি শুধু বাংলাদেশের ভেতরেই নয় এটি মিয়ানমার ও ভারতের জন্যও মাথাব্যথার কারণ হতে পারে।
সূত্র জানায়, মার্কিন ও মিশরের সামরিক পরিবহণ বিমান বাংলাদেশে নামছে—কোনো অনুমতি ছাড়াই! মার্কিন সেনাদের ইমিগ্রেশন ছাড়াই বাংলাদেশে ঢোকার অনুমতি দেওয়া হচ্ছে। এটি কেবল বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের প্রতি প্রকাশ্য অবমাননা নয়, বরং এক গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ।গত রোববার যুক্তরাষ্ট্র বিমানবাহিনীর আধুনিক কৌশলগত পরিবহন বিমান সি-১৩০জে সুপার হারকিউলিস চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। এই বিন্মান সাধারণত জাপানের ইয়োকোটা এয়ারবেস থেকে পরিচালিত হয়। বিষয়টিকে নিছক কাকতালীয় বলা যাচ্ছে না, কারণ ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও মিয়ানমার নিয়ে আমেরিকার তৎপরতার খবর এখন ওপেন সিক্রেট।
বলা হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্র ও চীন – উভয়েই মিয়ানমারের বিদ্রোহীদের কাছে টানার চেষ্টা করছে। এর আগে ঢাকা ওয়েস্টিনে মার্কিন সেনা কর্মকর্তার রহস্যজনক মৃত্যু হয় টেরেন্স আরভেল জ্যাকসনের। তবে আমেরিকা তাকে মার্কিন সেনা কর্মকর্তা মানতে অস্বীকার করে তদন্ত-সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, টেরেন্স আরভেল জ্যাকসন ছিলেন ইউএস আর্মি গ্রিন বেরেটস অফিসার (MOS 18A)। তাঁর বিশেষ দক্ষতার মধ্যে ছিল— অনকনভেনশনাল ওয়ারফেয়ার (গেরিলা যুদ্ধ, সাইকোলজিক্যাল অপারেশন) । বিদেশি সেনাদের প্রশিক্ষণ ও গোপন মিশন পরিচালনা ও সিআইএ’র সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সমন্বয়ে কাজ করা।
সূত্র বলছে, ২০২৪ সালের জুলাই থেকে ঢাকায় মার্কিন স্পেশাল ফোর্সেস কর্মকর্তাদের ঘন ঘন উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জ্যাকসনের অবস্থানও হয়তো একটি কভার অপারেশনের অংশ ছিল। সম্ভাব্য মিশন হিসেবে উল্লেখ করা হচ্ছে।
বাংলাদেশে জঙ্গি সংগঠন ও রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মার্কিন কার্যক্রম নিয়ে পূর্ব থেকেই নানা গোপন আলোচনা ছিল। অনেকেই ধারণা করছেন, জ্যাকসন সরাসরি বাংলাদেশি জঙ্গি ও রোহিঙ্গাদের প্রশিক্ষণ কার্যক্রমে যুক্ত ছিলেন। কয়েক মাস আগে চট্টগ্রামে যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের মধ্যে “অপারেশন প্যাসিফিক এঞ্জেল-২৫” এবং “টাইগার লাইটনিং-২০২৫” নামে দ্বিপক্ষীয় সামরিক মহড়া অনুষ্ঠিত হয়।
এরইমধ্যে বাংলাদেশে জাতিসংঘের মানবাধিকার হাই কমিশনারের একটি স্থায়ী মিশন বাংলাদেশে কার্যক্রম শুরু হয়েছে। সমালোচকদের ভাষায়, এটি বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বে হস্তক্ষেপ এবং “আমেরিকার স্বার্থ বাস্তবায়নের কৌশলগত ধাপ”। অনেকে বলছেন, এটি “দেশকে আমেরিকার হাতে তুলে দেওয়ার ষড়যন্ত্র” এবং ড. ইউনূস সেই চক্রান্তের নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
চট্টগ্রামকে কেন টার্গেট করা হচ্ছে
চট্টগ্রামে লালখন, হাটহাজারীসহ বিভিন্ন স্থানে কতগুলো বড় মাদরাসা রয়েছে। সেইসঙ্গে রয়েছে বায়েজিদ বোস্তামী, শাহ আমানত (রঃ) এর মাজার। এসব মাদরাসা ও মাজারকে টার্গেট করে হামলা চালানোর পরিকল্পনা করছে আমেরিকা। এখানে হামলা হলেই মাজারপন্থী ও কওমীপন্থীদের মধ্যে বিরোধ তৈরি করা যাবে। একইসঙ্গে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশকে জঙ্গি রাষ্ট্র হিসেবে উপস্থাপন করবে। আর এভাবেই মার্কিন সেনারা একসময় বাংলাদেশে তাদের ঘাঁটি করবে জঙ্গি দূর করার নামে।
আর চট্টগ্রামে ঘাঁটি করার কারণ হলো ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও মিয়ানমার। এ দুই অঞ্চল নিয়ে আমেরিকার তৎপরতার খবর এখন ওপেন সিক্রেট। বলা হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্র ও চীন – উভয়েই মিয়ানমারের বিদ্রোহীদের কাছে টানার চেষ্টা করছে।মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই ওই এলাকায় যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক উপস্থিতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে, কখনো জরিপের জন্য, কখনো যৌথ মহড়ার জন্য।