নিজস্ব প্রতিবেদক
ক্ষমতায় আসার পর থেকেই নানা সুবিধা নিজের পক্ষে নিয়ে একের পর এক দুর্নীতির নজির গড়ছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। মামলাগুলো খারিজ করানো থেকে শুরু করে শত শত কোটি টাকার কর মওকুফ, সরকারি মালিকানা কমিয়ে আনা থেকে রাষ্ট্রীয় অর্থ আত্মসাৎ—সব জায়গাতেই তার ব্যক্তিস্বার্থকেই প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। সমালোচকদের মতে, এ এক সুপরিকল্পিত দুর্নীতির ব্লুপ্রিন্ট, যেখানে দেশের মানুষ ও রাজনীতিবিদদের কোনো স্থান নেই; বরং সবকিছু ঘুরপাক খাচ্ছে শুধু ইউনূসের নিজের আখের গোছানোর চারপাশে।
প্রবাসীদের বাধা, সরে গেলেন ইউনূস
এই স্বার্থপরতার প্রতিফলন দেখা গেছে যুক্তরাষ্ট্র সফরেও। জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিতে গিয়ে প্রবাসীদের বাধার মুখে পড়েন তিনি। স্থানীয় প্রবাসীরা তার সফরের বিরোধিতা করেন। তবে তিনি জামায়াতের নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহেরকে নিয়ে নিরাপদে বের হয়ে গেলেও বিপাকে পড়েন এনসিপি ও বিএনপির নেতারা।
এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন প্রবাসীদের ডিম নিক্ষেপের শিকার হন। একইভাবে প্রতিরোধের মুখে পড়েন এনসিপি নেত্রী তাসনিম জারা ও বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
স্বার্থপরের মতো আচরণ
প্রধান উপদেষ্টার সফরসঙ্গী হয়েও রাজনীতিবিদরা কেন নিরাপত্তা পেলেন না—এমন প্রশ্ন তুলেছেন গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান। ফেসবুকে তিনি লিখেছেন, “রাজনীতিকরা কেন নিরাপত্তা পেল না? কেন স্বার্থপরের মতো তিনি (ইউনূস) ও তার কর্মকর্তারা নিরাপত্তা নিয়ে বের হয়ে গেলেন?”
ডাকসু নির্বাচনে ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেলের ভিপি প্রার্থী আবিদুল ইসলাম খান বলেন, রাজনৈতিক নেতাদের অনিরাপদ অবস্থায় রেখে সরকারপ্রধানের বিমানবন্দর ত্যাগ লজ্জাজনক।
ইউনূসের নজিরবিহীন দুর্নীতি
ইউনূস ক্ষমতায় আসার পর ব্যক্তিস্বার্থে যেসব পদক্ষেপ নিয়েছেন, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য নয়টি হলো— ১. নিজের সব মামলা খারিজ করানো। ২. ৬৬৬ কোটি টাকার কর মওকুফ। ৩. আগামী পাঁচ বছরের করও মওকুফ নিশ্চিত করা। ৪. গ্রামীণ ব্যাংকে সরকারের মালিকানা ২৫% থেকে কমিয়ে ১০%-এ নামানো।
৫. ব্যক্তিগত ব্র্যান্ডিংয়ের জন্য ‘গ্রামীণ ইউনিভার্সিটি’ অনুমোদন। ৬. জনশক্তি রপ্তানিতে একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা। ৭. গ্রামীণ টেলিকমকে ডিজিটাল ওয়ালেট চালুর অনুমতি। ৮. ৭০০ কোটি টাকার সামাজিক নিরাপত্তা তহবিল গ্রামীণ ট্রাস্টে স্থানান্তর। ৯. প্রশাসনে আত্মীয় ও ঘনিষ্ঠদের বসানো।
ইউনূসের এমন স্বার্থপর আচরণে ক্ষুব্ধ হয়েছেন তার সহযোগীরাও। তার তথাকথিত ‘গুজব সেল’-এর অন্যতম সদস্য পিনাকী ভট্টাচার্য লিখেছেন, “প্রফেসর ইউনূস এভাবেই সবাইকে একা ফেলে চলে যাবেন—এটা লিখে রাখুন।” তার পোস্টে স্পষ্ট হয়, ঘনিষ্ঠ মহলেও এখন ইউনূসের প্রতি আস্থাহীনতা তৈরি হয়েছে।
এ ঘটনায় সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। আখতার হোসেনের ওপর হামলার পর দলটি রাজনীতিতে আরও ব্যাকফুটে চলে গেছে। এনসিপির উত্তরাঞ্চলীয় মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “শাপলা প্রতীক ছাড়া ভোট কীভাবে হয় দেখে নেব।”
বিশ্লেষকদের মতে, নিউইয়র্কে প্রবাসীদের প্রতিবাদ প্রমাণ করেছে—বাংলাদেশের রাজনীতি শুধু দেশের ভেতরেই সীমাবদ্ধ নয়; প্রবাসীরাও এ নিয়ে সক্রিয় ও সংবেদনশীল। এতে সরকারের ও রাজনৈতিক নেতাদের আন্তর্জাতিক জনসংযোগ বড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ছে।
এনসিপির মুখপাত্র সামান্তা শারমিন তার ফেসবুক পোস্টে বলেন, ড. ইউনুস নিজের স্বার্থে পার্টিগুলোকে ব্যবহার মারফত ম্যান্ডেট কামাই করে যাচ্ছে। কিন্তু বৈছাআ, জানাক পরর্বতীতে এনসিপির রাজনৈতিক শক্তিকে নিজের পক্ষে শো অফ করে শক্তিশালী হয়েছেন ষোল আনা। কিন্তু নিজের সফরসঙ্গীদের, তার চেয়ে বড় কথা জুলাই অভ্যুত্থানের নেতা আখতার হোসেনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা নূন্যতম আদব না দেখিয়ে তিনি তার দুরভিসন্ধি প্রকাশ করে দিয়েছেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা মনে করেন, ইউনূসের ওপর আস্থা হারিয়ে এনসিপি আবারও ছাত্র আন্দোলন উসকে দেওয়ার পরিকল্পনা করছে। তবে এবার দেশের জনগণ তাদের ফাঁদে পা দেবে না।
তারা আরও বলছেন, আন্তর্জাতিকভাবে সম্মানিত হলেও অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে ড. মুহাম্মদ ইউনূস এখন বিতর্কিত। সফরসঙ্গীদের ভুলে শুধু নিজের আখের গোছানো তার নিরপেক্ষ ভাবমূর্তিকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।