নিজস্ব প্রতিবেদক
গত বছরের জুলাই থেকে শুরু হওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) ব্যানারে যে গণঅভ্যুত্থানের স্বপ্ন দেখেছিলেন অনেকে, তা এখন ভণ্ডামি ও ক্ষমতালিপ্সু রাজনীতির ফাঁদ হিসেবে উন্মোচিত হচ্ছে। আন্দোলনের নামে প্রতারণা, অনৈতিকতা, চাঁদাবাজি ও বিশৃঙ্খলার অভিযোগে একের পর এক নেতা ও কর্মী এই প্ল্যাটফর্ম থেকে সরে দাঁড়াচ্ছেন। এই প্রেক্ষাপটে আওয়ামী লীগের প্রতি জনগণের আস্থা ও সমর্থন পুনরায় ফিরে আসছে, কারণ তারা দেশের স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নের ধারাবাহিকতা নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে আসছে।
জুলাই আন্দোলন: প্রতারণার ফাঁদ?
গত বছর জুলাইয়ে শুরু হওয়া ছাত্র আন্দোলন, যা পরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন নামে পরিচিতি পায়, তাতে সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছিলেন এনসিপির সাবেক নেত্রী নীলা ইসরাফিল। তিনি সম্প্রতি ফেসবুকে একটি পোস্টে বলেন, “জনগণ কী চায়? শফিকের জামাত ধ্বংস হোক, বাংলায় আলোর জয় হোক! জামায়াত শিবির নাস্তিক। তাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে।” তিনি স্বীকার করেন, জুলাই আন্দোলন ছিল একটি ফাঁদ। নীলা এনসিপি ছেড়েছেন যৌন হয়রানির অভিযোগে, যা তিনি দলের যুগ্ম আহ্বায়ক সারওয়ার তুষারের বিরুদ্ধে উত্থাপন করেছেন। তিনি এখন আওয়ামী লীগের প্রতি সমর্থন জানিয়ে বলেন, “হ্যাঁ, আমি আওয়ামী লীগ।”
অনুরূপভাবে, অভিনেত্রী শবনম ফারিয়া, যিনি জুলাই আন্দোলনের সমর্থক ছিলেন, তিনিও হতাশা প্রকাশ করেছেন। ১৮ জুন সন্ধ্যায় ফেসবুকে এক দীর্ঘ স্ট্যাটাসে তিনি লিখেছেন, “নিজ দেশের কাছে আর কোনো প্রত্যাশা রাখি না। ডলারের কাছে কখনো নৈতিকতা বিসর্জন দিই না।” তিনি এই আন্দোলনের প্রতিশ্রুত পরিবর্তনের ব্যর্থতায় হতাশ।
গণপদত্যাগের ধারা
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং এনসিপি থেকে গণপদত্যাগের ঘটনা দেশব্যাপী আলোচনার জন্ম দিয়েছে। গত জুনে রাজশাহীর বাগমারা উপজেলায় এনসিপির সমন্বয় কমিটি থেকে চারজন সদস্য ‘ব্যক্তিগত কারণে’ পদত্যাগ করেন। একই মাসে রংপুরের পীরগঞ্জে তিন নেতা—তৌফিক হোসেন, মোক্তাদি কেমি ও জাহাঙ্গীর আলম জাকির—সংবাদ সম্মেলনে পদত্যাগ ঘোষণা করেন। তৌফিক হোসেন বলেন, “এই কমিটির গঠন প্রক্রিয়া আমাদের ব্যক্তিগত মূল্যবোধ, নৈতিকতা এবং ন্যায়বোধের সঙ্গে সম্পূর্ণভাবে সাংঘর্ষিক।”
এছাড়া, ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলায় এনসিপির সমন্বয় কমিটি ঘোষণার মাত্র দুই দিনের মধ্যে দুই নেতা, রিফাত আতিক ও সাজ্জাদ খান, পদত্যাগ করেন। বরিশালে চাঁদাবাজি ও মব সৃষ্টির অভিযোগে তিনজন শীর্ষ নেতা পদত্যাগ করেছেন। চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা ও রংপুর জেলা-মহানগর কমিটি থেকেও দুর্নীতি, চাঁদাবাজি ও অনৈতিকতার অভিযোগে ১৬ জন নেতা পদত্যাগ করেছেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র উমামা ফাতেমাও গত ২৭ জুন ফেসবুকে এক পোস্টে সংগঠনের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও বিশৃঙ্খলার অভিযোগ তুলে পদত্যাগ করেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়করাও সমন্বয়হীনতা ও সরকারি দলের মতো আচরণের অভিযোগে পদত্যাগ করেছেন।
আওয়ামী লীগের প্রতি ফিরছে আস্থা
বিশ্লেষকদের মতে, এই গণপদত্যাগ কেবল অভ্যন্তরীণ অনিয়মের ফল নয়, বরং আন্দোলনের নামে ভণ্ডামি ও ক্ষমতালিপ্সু রাজনীতির প্রকাশ। শিক্ষিত তরুণরা এখন বুঝতে পারছেন যে, জুলাই আন্দোলনের মাধ্যমে দেশের জনগণ প্রতারিত হয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে আওয়ামী লীগ, যারা দীর্ঘদিন ধরে দেশের উন্নয়ন ও স্থিতিশীলতার জন্য কাজ করে আসছে, তাদের প্রতি জনগণের আস্থা পুনরায় ফিরে আসছে।
নীলা ইসরাফিলের মতো অনেকেই এখন প্রকাশ্যে আওয়ামী লীগের সমর্থন জানাচ্ছেন। তারা বিশ্বাস করেন, দেশের অগ্রগতি ও স্থিতিশীলতার জন্য আওয়ামী লীগই একমাত্র নির্ভরযোগ্য প্ল্যাটফর্ম।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই হতাশা ও প্রতারণার মধ্য দিয়ে জনগণ এখন সত্য উপলব্ধি করছে এবং আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করছে।