নিজস্ব প্রতিবেদক
জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে অংশ নিতে এবারও বিপুলসংখ্যক সফরসঙ্গী নিয়ে বিদেশ সফরে গেছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস। অথচ জনগণের সামনে “খরচ কমানো”র গল্প শোনালেও বাস্তবে ঘটেছে সম্পূর্ণ ভিন্ন চিত্র।
আগেরবার মাত্র ৭ জন সফরসঙ্গীর কথা বলা হলেও বাস্তবে ছিলেন ৮০ জনেরও বেশি। এবার তো তালিকাই গোপন রাখা হয়েছিল। তবে ফাঁস হওয়া তালিকায় দেখা যাচ্ছে, এবার সফরসঙ্গীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১০৫ জনে—যা শেখ হাসিনার সময়ের যেকোনো সফরের চেয়ে অনেক বেশি। কেন এতজনকে নেওয়া হলো, তার কোনো ব্যাখ্যা এখনও দেয়নি সরকার।
সবচেয়ে প্রশ্নবিদ্ধ বিষয় হলো—এই সফরে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের দুই কন্যার নাম তালিকার শীর্ষে রয়েছে। রাষ্ট্রীয় খরচে তাদের নিয়মিত বিদেশ সফরে নেওয়া কতটা যৌক্তিক—তা নিয়ে তীব্র প্রশ্ন উঠেছে।
এর আগে শেখ হাসিনার সময় সফরে ৭০–৭৫ জনের বেশি রাষ্ট্রীয় খরচে যেতেন না। প্রতিনিধি তালিকায় যে দেড় শতাধিক নাম থাকত, তাদের বেশিরভাগই ছিলেন ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি।
৫. ব্যক্তিগত ব্র্যান্ডিংয়ের জন্য ‘গ্রামীণ ইউনিভার্সিটি’ অনুমোদন। ৬. জনশক্তি রপ্তানিতে একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা। ৭. গ্রামীণ টেলিকমকে ডিজিটাল ওয়ালেট চালুর অনুমতি। ৮. ৭০০ কোটি টাকার সামাজিক নিরাপত্তা তহবিল গ্রামীণ ট্রাস্টে স্থানান্তর। ৯. প্রশাসনে আত্মীয় ও ঘনিষ্ঠদের বসানো।
তারা সম্পূর্ণ নিজেদের খরচে সফরে যোগ দিতেন এবং বিদেশি বিনিয়োগ ও রপ্তানি বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখতেন। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার এ ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ ভিন্ন দৃষ্টান্ত তৈরি করেছে। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) এক বিবৃতিতে বিষয়টিকে “বিব্রতকর ও হতাশাজনক” বলে মন্তব্য করেছে। সংস্থার নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেছেন, “শতাধিক প্রতিনিধিসহ চলতি অধিবেশনে অংশগ্রহণের মাধ্যমে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কী বার্তা দিল? এর বিনিময়ে দেশ ও জনগণের কী লাভ হলো? করদাতারা এই প্রশ্নের উত্তর জানার অধিকার রাখেন।”
অন্যদিকে, প্রবাসী সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়ের বুধবার ফেসবুকে সফরসঙ্গীদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশ করেছেন। সেখানে দেখা গেছে, প্রধান উপদেষ্টা ও তার দুই কন্যা ছাড়াও আছেন ৭ জন উপদেষ্টা, ৬ জন রাজনৈতিক নেতা, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের একাধিক কর্মকর্তা, ৫ জন প্রেস সেক্রেটারি, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও নিরাপত্তা দলের সদস্য, বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তা, স্থানীয় দূতাবাস ও জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশনের সদস্যসহ কয়েকজন বিশিষ্ট নাগরিক। জাতীয় স্বার্থের প্রশ্নে গোপনীয়তা এবং অতিরিক্ত ব্যয়ের এই দৃষ্টান্ত নিয়ে দেশজুড়ে সমালোচনার ঝড় উঠেছে।
ক্ষমতায় আসার পর থেকেই নানা সুবিধা নিজের পক্ষে নিয়ে একের পর এক দুর্নীতির নজির গড়ছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। মামলাগুলো খারিজ করানো থেকে শুরু করে শত শত কোটি টাকার কর মওকুফ, সরকারি মালিকানা কমিয়ে আনা থেকে রাষ্ট্রীয় অর্থ আত্মসাৎ—সব জায়গাতেই তার ব্যক্তিস্বার্থকেই প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে।
সমালোচকদের মতে, এ এক সুপরিকল্পিত দুর্নীতির ব্লুপ্রিন্ট, যেখানে দেশের মানুষ ও রাজনীতিবিদদের কোনো স্থান নেই; বরং সবকিছু ঘুরপাক খাচ্ছে শুধু ইউনূসের নিজের আখের গোছানোর চারপাশে।
ইউনূস ক্ষমতায় আসার পর ব্যক্তিস্বার্থে যেসব পদক্ষেপ নিয়েছেন, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য নয়টি হলো— ১. নিজের সব মামলা খারিজ করানো। ২. ৬৬৬ কোটি টাকার কর মওকুফ। ৩. আগামী পাঁচ বছরের করও মওকুফ নিশ্চিত করা। ৪. গ্রামীণ ব্যাংকে সরকারের মালিকানা ২৫% থেকে কমিয়ে ১০%-এ নামানো।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই ঘটনায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি জনআস্থার ঘাটতি আরও বাড়বে। একদিকে সরকার জনগণের কাছে ‘সংকট মোকাবিলা ও ব্যয় কমানোর’ প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, অন্যদিকে রাষ্ট্রীয় অর্থে পরিবারকেন্দ্রিক বিদেশ ভ্রমণ—এ দ্বিমুখী অবস্থান জনমনে নেতিবাচক প্রতিচ্ছবি তৈরি করছে।