নিজস্ব প্রতিবেদক
বাংলাদেশে একদিকে দুর্গাপূজার দিনক্ষণ নির্ধারণ করা হলেও অন্যদিকে বিভিন্ন জেলায় প্রতিমা ভাঙচুর ও হামলার ঘটনা ঘটছে। পূজা উদযাপনের প্রস্তুতির মধ্যেই অন্তত ১৩ জেলায় দুর্গাপ্রতিমা ও মন্দিরে হামলার খবর পাওয়া গেছে। এসব জেলা হলো—কুষ্টিয়া, চট্টগ্রাম, কুড়িগ্রাম, সাতক্ষীরা, ঝিনাইদহ, নেত্রকোনা, গাইবান্ধা, পঞ্চগড়, জামালপুর, নাটোর, গাজীপুর, মানিকগঞ্জ ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ।
শুক্রবার ( ২৬ সেপ্টেম্বর) ঢাকেশ্বরী মন্দিরে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটি ও জাতীয় পূজা উদযাপন পরিষদ এ তথ্য জানায়। সংশ্লিষ্টরা বলছে, দুই বছর আগেও বাংলাদেশে সব ধর্মের মানুষ নির্বিঘ্নে তাদের ধর্মীয় উৎসব উদযাপন করতে পারত। মানুষ চলাফেরাতেও নিরাপদ বোধ করত। কিন্তু নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ক্ষমতায় আসার পর দেশজুড়ে বেড়ে যাওয়ায় সহিংসতা ও হামলার ঘটনায় সাধারণ জনগণ ভীত-সন্ত্রস্ত।
রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর সংকট
নাগরিক সমাজ ও বিশ্লেষকেরা বলছেন, সাম্প্রতিক সময়ে হামলা, ধর্মীয় উগ্রতা ও সাংস্কৃতিক নিধনের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত অনির্বাচিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে দেশ আদর্শিক ও সাংস্কৃতিক সংকটে পড়েছে বলে তারা আশঙ্কা করছেন।
বেড়েছে খুন, মরদেহ পাওয়া যাচ্ছে নদীতে
বাংলাদেশের নদীগুলো যেন মরদেহের ভাসমান কবরস্থানে পরিণত হচ্ছে। চলতি বছরের প্রথম সাত মাসেই উদ্ধার হয়েছে ৩০১ মরদেহ, যার মধ্যে ৯২টির পরিচয় অজ্ঞাত। পরিসংখ্যান বলছে, গত বছরের তুলনায় এ সংখ্যা বেড়েছে অনেক।
নারীর প্রতি সহিংসতা
চট্টগ্রামে জামায়াত নেতার মুক্তির দাবিতে বাম ছাত্রজোটের এক কর্মসূচিতে এক নারীকে প্রকাশ্যে লাথি মারার ঘটনা সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। অভিযুক্ত ব্যক্তি জামিনে মুক্তি পাওয়ার পর ফুলেল শুভেচ্ছা পান। একইভাবে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এক নারী শিক্ষার্থীকে হেনস্তার অভিযোগে আটক কর্মচারীকেও জামিনের পর ধর্মীয় স্লোগানধারীরা ফুল দিয়ে বরণ করে নেয়। বিশ্লেষকেরা এই প্রবণতাকে “উগ্রতার উৎসব” বলে অভিহিত করেছেন।
সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তাহীনতা
লালমনিরহাটে দুই হিন্দু নরসুন্দরকে ইসলাম ধর্ম অবমাননার মিথ্যা অভিযোগে হেনস্তা করা হয়। ভুক্তভোগীদের পরিবার জানায়, আর্থিক বিরোধ থেকেই এই অভিযোগ আনা হয়েছে। এ ধরনের ঘটনায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে।
নিরাপত্তা ব্যবস্থার ব্যর্থতা
কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগার থেকে ২০৯ জন বন্দির পালিয়ে যাওয়া এবং নরসিংদীতে সাজাপ্রাপ্ত জঙ্গিদের ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বড় ধরনের ব্যর্থতা বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। একই সময়ে নিষিদ্ধ সংগঠন হিযবুত তাহরীর ঢাকায় প্রকাশ্যে ‘খেলাফত মার্চ’ আয়োজন করে, যা থামাতে ব্যর্থ হয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
সুফি মাজার ও সাংস্কৃতিক স্থাপনায় হামলা
৫ আগস্ট থেকে তিন মাসে অন্তত ১০৫টির বেশি সুফি মাজারে হামলা হয়েছে। গত ৬ সেপ্টেম্বর রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে নুরাল পাগলার মাজারে হামলায় কবর ভাঙচুর ও মৃতদেহ পোড়ানোর অভিযোগ ওঠে। এ ছাড়া বঙ্গবন্ধুর ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাসভবন, জয়নুল আবেদিন গ্যালারির ভাস্কর্য, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কাচারি বাড়ি ও সিরাজগঞ্জের শশী লজের ভেনাস মূর্তিতেও হামলার ঘটনা ঘটে।
সরকার বারবার বলছে, দেশে কোনো ধরনের জঙ্গিবাদের উত্থান ঘটেনি এবং চরমপন্থাকে কোনো সুযোগ দেওয়া হবে না। তবে বাস্তব পরিস্থিতি সরকারের বক্তব্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।