Insight Desk
প্রকাশ : Jul 9, 2025 ইং
অনলাইন সংস্করণ

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বিদেশি অস্ত্রের জোগান আসছে কোথা থেকে ও কিভাবে?

নিজস্ব প্রতিবেদক :

মায়ানমার সীমান্ত দিয়ে ঢুকছে অস্ত্রের ঢল, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মজুদ হচ্ছে যুদ্ধাস্ত্র। আসন্ন নির্বাচনের মুখে এই অস্ত্রের ছোবল কী হবে, তা নিয়ে শঙ্কিত দেশের জনসাধারণ। রাষ্ট্রযন্ত্রের নাকের ডগায় চলছে এই অস্ত্র পাচারের মহাযজ্ঞ। কক্সবাজারের গহিন পাহাড়ে, রোহিঙ্গা শিবিরের আড়ালে, গড়ে উঠেছে বিশাল অস্ত্রের ভাণ্ডার। বিদেশি রাইফেল, পিস্তল, এসএমজি, রকেট লঞ্চার, গ্রেনেড, গোলাবারুদ – সবই মজুদ হচ্ছে পাহাড়ের গর্ভে। এই অস্ত্র শুধু সীমান্তে স্থবির নেই; স্রোতের মতো ছড়িয়ে পড়ছে দেশের গভীরে, শহরে-বন্দরে, অলিতে-গলিতে।

পুলিশ, র‍্যাব, কোস্ট গার্ড – সবাই জানেন এই বিপদের কথা। নথিপত্রে জমছে এর প্রমাণ। গত সাড়ে বছরে শুধু কক্সবাজারেই অস্ত্র আইনে রেকর্ড তিনশোরও বেশি মামলা। চলতি বছরের মাত্র পাঁচ মাসে সত্তরটি মামলা। সংখ্যাগুলো শুধু কাগজে-কলমে নয়; রাস্তায়, বাজারে, মানুষের দৈনন্দিন ভয়ে রূপ নিচ্ছে। র‍্যাব-১৫ এর অভিযানে উদ্ধার হয়েছে হাজারখানেকেরও বেশি অস্ত্র। কোস্ট গার্ড আর পুলিশের যৌথ অভিযানে ধরা পড়েছে হাজারো রাউন্ড গুলি, বিদেশি অস্ত্র, এমনকি বিপুল পরিমাণ মাদক ও টাকা। এই উদ্ধার অভিযানগুলো কোনো কাকতালীয় ঘটনা নয়। এগুলো প্রমাণ করে অস্ত্র পাচারের এই নোংরা ব্যবস্থা কতটা গভীরে প্রোথিত, কতটা সংগঠিত।

সীমান্তে গুলিবর্ষণের ঘটনা, পাহাড়ে পাচারকারীদের সাথে সংঘর্ষ – এগুলো শুধু খবরের কাগজের শিরোনাম নয়। এগুলো রাষ্ট্রের নিরাপত্তার প্রতি সরাসরি চ্যালেঞ্জ। অস্ত্র পাচারকারীরা এখন শুধু চোরাই পথে ঢুকছে না; তারা সশস্ত্রভাবে মোকাবেলা করছে রাষ্ট্রের নিরাপত্তা বাহিনীকে। 

গোলাবর্ষণ করে পালিয়ে যাচ্ছে পাহাড়ের অন্ধকারে। এই স্পর্ধা কিসের ইঙ্গিত দেয়? কাদের ছত্রছায়ায় চলছে এই মহাযজ্ঞ? প্রশ্নগুলো ঘুরপাক খাচ্ছে, কিন্তু জবাব মিলছে না সহজে।

রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলো শুধু মানবিক সংকটের কেন্দ্র নয়

সন্ত্রাসী রোহিঙ্গাদের একটি অংশের জন্য সেগুলো পরিণত হয়েছে অস্ত্র ব্যবসার নিরাপদ ঘাঁটিতে। স্থানীয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সূত্রগুলো একের পর এক উল্লেখ করছে রোহিঙ্গাদের জড়িত থাকার কথা। অস্ত্র পাচার, কেনাবেচা, ডাকাতি, অপহরণ – বহু অপরাধের হাতেখড়ি হচ্ছে এই ক্যাম্পগুলোর পাশের পাহাড়ি গুহায়, ভ্রাম্যমাণ আস্তানায়। উদ্ধার হওয়া বিপুল পরিমাণ অস্ত্রের সূত্রও চলে গেছে সেদিকেই। আসামিরা জামিনে বেরিয়ে আবারও ডুবে যাচ্ছে অন্ধকার জগতে।

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এই সময়টাতেই অস্ত্র পাচারের মাত্রা বেড়েছে হু হু করে। সংশ্লিষ্ট মহলের শঙ্কা, এই অস্ত্র ব্যবহার করা হতে পারে নির্বাচনী সহিংসতায়। রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার সুযোগে কারা লাভবান হবে? কারা চালাবে এই অস্ত্র? প্রশ্নগুলো রাতের অন্ধকারের মতো ঘনীভূত হচ্ছে। গত ৩১ মে দমদমিয়ায় উদ্ধার হওয়া দশটি হ্যান্ড গ্রেনেড ও ডেটোনেটর কি কোনো বড় ঘটনার ইঙ্গিতবাহী? গ্রেপ্তার হয়নি কেউ। তারা এখনও ঘুরে বেড়াচ্ছে মুক্ত, পরিকল্পনা করছে পরবর্তী অপকর্ম।

দেশি-বিদেশি অস্ত্রের মিশেলে তৈরি হচ্ছে এক ভয়াবহ অস্ত্র ভান্ডার। মায়ানমার থেকে আসছে ভারী অস্ত্র, মহেশখালী থেকে আসছে দেশীয় তৈরি। এই দুই ধারার মিলনস্থল কক্সবাজারের পাহাড়ি এলাকা। টেকনাফ, উখিয়া – এগুলো শুধু ভৌগোলিক নাম নয়; এরা এখন অস্ত্র পাচারের সমার্থক। কোস্ট গার্ডের মিডিয়া কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কমান্ডার হারুন-অর-রশীদের বর্ণনা অনুযায়ী, পাচারকারীরা কতটা সক্রিয়, কতটা সশস্ত্র, তা সহজেই অনুমেয়। তাদের সামাল দিতে যৌথ বাহিনীকে নামতে হচ্ছে মাঠে, ঝুঁকি নিতে হচ্ছে জীবন বাজি রেখে।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জসিম উদ্দীন চৌধুরী সরাসরি বলেছেন, রোহিঙ্গাদের কারণেই অস্ত্রসংক্রান্ত অপরাধ বেড়েছে। ১৬ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি মো. কাউছার সিকদারও একই সুরে বলেছেন সন্ত্রাসী রোহিঙ্গাদের অস্ত্র ব্যবসা ও অপকর্মের কথা। আদালতে মামলা চলছে, জামিনে বেরিয়েছে অভিযুক্তরা। কিন্তু আদালতের চার দেয়ালের বাইরে কি বদলাচ্ছে কিছু? অস্ত্রের পাহাড় কি কমছে, নাকি আরও বাড়ছে?

এই অস্ত্রের ছায়া শুধু কক্সবাজার বা সীমান্তের মানুষকেই আতঙ্কিত করছে না; তা ছড়িয়ে পড়ছে গোটা দেশজুড়ে। পাচার হওয়া প্রতিটি রাইফেল, প্রতিটি গ্রেনেড, প্রতিটি রাউন্ড গুলি – এগুলো শান্তির শয্যায় পুঁতে রাখা ল্যান্ডমাইনের মতো। কখন, কোথায়, কীভাবে বিস্ফোরিত হবে, কেউ জানে না। রাষ্ট্রের কর্ণধারদের কানে এই বিপদসংকেত কি পৌঁছাচ্ছে? নাকি গুঞ্জরিত হচ্ছে শুধু সংবাদপত্রের পাতায়, টেলিভিশনের পর্দায়? অস্ত্রের এই বন্যা রোধে কার্যকর, দৃশ্যমান, নির্মম পদক্ষেপের সময় এখনই। আগামীকাল খুব দেরি হয়ে যেতে পারে।

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

জঙ্গি নিয়ে ইউনূসের পুলিশবাহিনীর মিথ্যাচার ফাঁস করল মালয়েশিয়া

1

মদ-যৌনতায় আচ্ছন্ন আসিফসহ এনসিপির নেতারা, ইন্টারকন্টিনেন্টালে

2

ইউনূসের মদদে ছাত্রনেতাদের চাঁদাবাজি ও দুর্নীতির রাজত্ব; রুখব

3

উপদেষ্টা আসিফের মদদে কুমিল্লায় হিন্দু নারী গণধর্ষণের শিকার!

4

নসিপি ও বৈষম্যবিরোধী প্ল্যাটফর্মে নিরাপদ নয় নারী নেত্রীরা

5

আন্তর্জাতিক সহায়তা বিতর্কে ইউনুসের অন্তর্বর্তী সরকার

6

ডিএমপি কমিশনার ফের প্রমাণ করলেন, জঙ্গিদের মদদেই ক্ষমতায় ইউনূ

7

ইউনূসের ছত্রছায়ায় কানাডীয় প্রতিষ্ঠানের গোপন রাজনৈতিক প্রকল্প

8

মুদি দোকানে এক মাসের বিদ্যুৎ বিল সাড়ে ১৩ লাখ টাকা!

9

ষড়যন্ত্রের নীল নকশা ফাঁস: গুজব-মব দিয়ে রাষ্ট্রপতিকে সরাতে চা

10

ইউনূসের নেতৃত্বে হাঁটুভাঙা প্রতিষ্ঠানে পরিণত দুদক

11

ভোট না দেওয়ার পাঁয়তারা করছেন ইউনূস, নতুন অস্ত্র পিআর পদ্ধতিত

12

মৌসুমী, ফারিয়া ও সাবিলা নূরসহ ২৫ জনের ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ

13

মব ভায়োলেন্সে প্যারালাইজড দেশের গণমাধ্যম

14

টাকা পাচারের প্রমাণ চেয়ে ইউনূসকে চ্যালেঞ্জ শেখ হাসিনার

15

বিমানবন্দরে আসিফ মাহমুদের ব্যাগে অ্যামোনেশন ম্যাগজিন শনাক্ত

16

ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসকদের ওপর সন্ত্রাসী হামলা

17

ইউনূসের ফাঁদে পা দিল বিএনপি

18

এইচএসসি পরীক্ষা পেছানোর দাবিতে চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের সামনে

19

দ্য ইকোনমিস্টের প্রতিবেদনে ফ্যাসিস্ট ইউনূসের গোমর ফাঁস

20