নিজস্ব প্রতিবেদক
বাংলাদেশ থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সোমবার (৭ জুলাই) নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে এ ঘোষণা দেন তিনি। তবে বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
বিশেষ করে ড. মুহাম্মদ ইউনূস-এর প্রধান উপদেষ্টা ও প্রেস সচিব শফিকুল আলম শুল্ক আরোপের এই সিদ্ধান্তকে উপেক্ষা করে শুল্ক চুক্তির সম্ভাবনার কথা বলে বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন। তিনি দাবি করেছেন, ওয়াশিংটনের সঙ্গে একটি শুল্ক চুক্তি করতে আগ্রহী ঢাকা, যা উভয় দেশের জন্যই লাভজনক হতে পারে।
মঙ্গলবার (০৮ জুলাই) নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে এক পোস্টে প্রেস সচিব শফিকুল আলম লিখেন, বাংলাদেশের বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বর্তমানে ওয়াশিংটন ডিসিতে অবস্থান করছেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য আলোচনায় নেতৃত্ব দিচ্ছেন। এই প্রতিনিধিদলে আছেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমানও।
তিনি আরও লিখেন, গতকাল যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের একটি চিঠি পেয়েছে বাংলাদেশ। যেখানে জানানো হয়েছে—আগামী ১ আগস্ট থেকে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি পণ্যের ওপর ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে।
প্রেস সচিব লিখেন, ওয়াশিংটনের সঙ্গে একটি শুল্ক চুক্তি করতে আগ্রহী ঢাকা, যা দুই দেশের জন্যই লাভজনক সমাধান হবে আমরা আশা করি।
এটি প্রথমবার নয়। এর আগেও গত এপ্রিলে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের ওপর পাল্টা শুল্ক আরোপ করলে, সেটি নিয়েও ‘জাতির সঙ্গে প্রতারণা’ করেছিলেন শফিকুল আলম—এমন অভিযোগ উঠেছিল। তখন তিনি বলেছিলেন, ড. ইউনূস ট্রাম্পকে একটি ‘ব্যবসাবান্ধব চিঠি’ পাঠাবেন, যা সমস্যা সমাধানে সহায়ক হবে। পরে ট্রাম্প প্রশাসন বিশ্বজুড়ে ৭৫টির বেশি দেশের ওপর শুল্ক সাময়িক স্থগিত করলে সেটিকে ড. ইউনূসের সাফল্য হিসেবে উপস্থাপন করা হয়।
অর্থনীতিবিদদের আশঙ্কা
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাত যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে অনেকটাই নির্ভরশীল। নতুন এই ৩৫% শুল্ক পোশাক রপ্তানির ক্ষেত্রে বড় ধাক্কা হতে পারে। এতে যুক্তরাষ্ট্রে পোশাকের দাম বাড়বে, ফলে ক্রেতার চাহিদা কমে যাবে।
বিজিএমইএ-র সাবেক পরিচালক মো. মহিউদ্দিন বলেন, “বিদেশি ক্রেতারা বাংলাদেশে আসেন সস্তা শ্রম ও মূল্যের জন্য। শুল্কের কারণে পণ্যের দাম বাড়লে তারা বিকল্প খুঁজবে। কেনিয়া, মিশর বা হন্ডুরাস হতে পারে নতুন গন্তব্য। এসব দেশে শুল্ক কম এবং অবস্থানগত সুবিধা রয়েছে।”
সাংবাদিক ও বিশ্লেষক আনিস আলমগীর এক ফেসবুক পোস্টে লিখেন, “ঘুম থেকে উঠে দেখলাম ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছেন—আগামী ১ আগস্ট থেকে বাংলাদেশের সব পণ্যের ওপর ৩৫% শুল্ক। আগে ছিল ৩৭%, কমেছে ২%। এটাই ড. ইউনূসের চিঠির মূল্য।”
পোস্টে তিনি বলেন, “ট্রাম্প হয়তো চিঠি পড়ে বলছেন, এতটুকুই পারি ভাই! বাকিটা তোমাদের দেশের নীতির ওপর নির্ভর করছে। বরং বলেছেন, যদি বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রে ফ্যাক্টরি স্থাপন করে, তাহলে শুল্ক শূন্য—মানে, সস্তা শ্রম ছেড়ে তাদের দেশে আসতে হবে।”
আনিস আলমগীর আরও বলেন, “শুধু বাংলাদেশ নয়, দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান, মালয়েশিয়া, লাওস, তিউনিসিয়া, কাজাখস্তানও এই শুল্ক তালিকায় আছে। ট্রাম্প মনে হয় নিজেই বসে মানচিত্রে রং তুলছেন।”
তিনি প্রশ্ন তোলেন, “এখন আমরা কী করব? পাল্টা শুল্ক বসাব? না চিঠির উত্তর লিখব? ড. ইউনূস শুধু চিঠি লিখেই দায়িত্ব শেষ করেছেন। মাঠে খেলেছেন ট্রাম্প, গোলও তিনিই দিয়েছেন। আমরা দর্শক।”
বাংলাদেশের অর্থনীতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি বলেন, “দেশের ভেতরে বিনিয়োগ নেই, অথচ বাইরের চিঠি চালাচালিতে খুব আগ্রহ। সবচেয়ে বেশি আগ্রহ ড. ইউনূসের বিদেশ ভ্রমণে। অথচ শুল্ক বেড়ে গেলে সবার আগে ক্ষতিগ্রস্ত হবে শ্রমজীবী মানুষ ও রপ্তানি খাত।”
মন্তব্য করুন