Insight Desk
প্রকাশ : Jul 8, 2025 ইং
অনলাইন সংস্করণ

দুদক ধ্বংসে মরিয়া ইউনূস গং

নিজস্ব প্রতিবেদক:


দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) কার্যক্রমে অনিয়ম ও রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের কারণে দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দুর্নীতি বিরোধী সংস্থাটি আজ সংকটে পড়েছে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেয়ার দাবি করলেও সাম্প্রতিক সময়ে প্রতিষ্ঠানটির স্বচ্ছতা, নিরপেক্ষতা এবং কার্যক্রম নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা উঠেছে।  

সম্প্রতি ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের ১২৬ টেরাবাইট ক্ষমতার অত্যাধিক যন্ত্রপাতি কেনার প্রকল্পটি নিয়ে শুরু হয়েছে বিতর্ক। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ফিজিবিলিটি রিপোর্ট অনুযায়ী প্রকৃত প্রয়োজন মাত্র ২৬ টেরাবাইট হলেও, প্রায় ৩২৬ কোটি টাকার অতিরিক্ত যন্ত্রপাতি কেনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সুপারিশ, এমনকি দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) স্পষ্ট আপত্তিও উপেক্ষা করে অপ্রয়োজনীয় এই যন্ত্রপাতি কেনার উদ্যোগ নিচ্ছে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেট।

অভিযোগ রয়েছে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী, ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব নিজ প্যাডে চিঠি দিয়ে প্রকল্প দ্রুত এগিয়ে নেওয়ার জন্য দুদককে চাপ প্রয়োগ করছেন। বুয়েটের প্রতিবেদন ও দুদকের আপত্তি উপেক্ষিত হলেও প্রকল্প চলছে, আর এতে আর্থিক ও প্রশাসনিক দুর্নীতির গন্ধ স্পষ্ট।

এ ঘটনার পেছনে দুর্নীতি দমন কমিশনের অনিয়ম ও পক্ষপাতমূলক কার্যক্রমের আভাস পাওয়া যাচ্ছে।  দুদকের সাবেক মহাপরিচালক (লিগ্যাল) মইদুল ইসলাম বলেন, ‘কোনো সরকারি বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান কেউই দুদকে এ ধরনের চিঠি দিতে পারেন না। এ ধরনের চিঠি দেওয়া উচিত নয়। এতে দুদক বিব্রত হয়। দুদকের নিজস্ব আইন ও বিধিবিধান রয়েছে। দুদক সেগুলো অনুযায়ী কাজ করে। কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান দুর্নীতি করলে দুদক তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে। এটাই হওয়া উচিত। এ ধরনের চিঠিতে অনেক সময় অ্যামব্যারাসিং পরিস্থিতি তৈরি হয়।’ 

তিনি বলেন, ‘দুদক তো প্রকল্প চালিয়ে নিতে বলতে পারে না। আর প্রকল্প চালিয়েই বা নেবে কীভাবে, সেই প্রকল্পের অনুমোদনই যদি আইনসংগত না হয়?’

তথ্য অনুযায়ী, সাম্প্রতিক সময়ে ৩৯৯টি মামলা করেছে দুদক। যা নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর বিরুদ্ধেই সীমাবদ্ধ বলে অভিযোগ উঠেছে। ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার পরিবারের সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী-এমপিসহ আওয়ামী লীগের এক হাজারের বেশি নেতা-কর্মীকে আসামি করা হয়। নতুন রাজনৈতিক দল এনসিপি ও শিক্ষার্থীদের দুর্নীতি নিয়ে দুদকের নিরবতা চোখে পড়ছে।

যুক্তরাজ্যের সাবেক মন্ত্রী ও ব্রিটিশ এমপি টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে দুদকের অভিযোগ সংক্রান্ত প্রমাণ চেয়ে আইনজীবীরা একাধিকবার চিঠি পাঠালেও কোনো তথ্য দেওয়া হয়নি বলে দাবি করা হয়েছে। ল ফার্ম স্টেফেনসন হারউড এলএলপি অভিযোগ করেছে, গত মার্চে অনুরোধ পাঠানোর পরও টিউলিপের বিরুদ্ধে দুদক একটি প্রামাণ্য তথ্যও দিতে পারেনি। এ অবস্থাকে তাঁরা ‘ন্যায়বিচারের লঙ্ঘন’ বলেও অভিহিত করছেন।

এছাড়া বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের ঘনিষ্ঠদের মাধ্যমে দুর্নীতির অভিযোগ উঠলেও দুদক দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। আসিফের একান্ত সচিব মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে দুর্নীতির তদন্ত শুরু হলেও এ বিষয়ে অগ্রগতি নেই। পাশাপাশি আসিফের পিতা বিল্লাল হোসেনের ঠিকাদারি লাইসেন্স গ্রহণ এবং হিযবুত তাহরীর সংশ্লিষ্ট এক ব্যক্তিকে গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ নিয়ে নৈতিক প্রশ্ন উঠেছে।

নোবেল বিজয়ী ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের গ্রামীণ গ্রুপের প্রতিষ্ঠানগুলো দ্রুত অনুমোদন, কর মওকুফ ও শেয়ার হ্রাস পাওয়ার বিষয়েও স্বার্থসংঘাতের অভিযোগ রয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে থাকা মামলা দ্রুত খারিজ হওয়ায় জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামের সাবেক সচিব আতিক মোর্শেদের বিরুদ্ধে মোবাইল ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান নগদের ১৫০ কোটি টাকা বেহাত করার অভিযোগ উঠেছে। সেখানে নিজের স্ত্রী ও আত্মীয়দের চাকরি দেওয়ার অভিযোগও রয়েছে। তবে এসব মামলার তদন্তে দুদকের কার্যকর কোনো অগ্রগতি নেই।

বিশ্লেষকরা বলছেন, দুদক যদি ধ্বংসপ্রাপ্ত বা অকেজো হয়ে পড়ে, তাহলে দেশের দুর্নীতি বিরোধী লড়াইয়ের মেরুদণ্ডই নড়বড়ে হয়ে যাবে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে কার্যকর তদন্ত ও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা না থাকায় সরকারি ও ব্যক্তিগত খাতের অনিয়ম বাড়বে। এতে জনমনে সরকারি ব্যবস্থাপনায় অবিশ্বাস সৃষ্টি হবে, যা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও সামাজিক স্থিতিশীলতাকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করবে। সবচেয়ে বড় কথা, দুর্নীতির বলি হবে সাধারণ মানুষ, কারণ তারা সেবা থেকে বঞ্চিত হবে, আর দেশের সার্বিক উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হবে। তাই দুর্নীতি দমন কমিশনকে সুসংগঠিত, স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ রেখে জনগণের আস্থা পুনরুদ্ধার করা না গেলে দেশের গণতন্ত্র ও উন্নয়ন ঝুঁকির মুখে পড়বে।


মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

হোলি আর্টিজান হামলা ও ৯ বছর পর জঙ্গি নিয়ে বিতর্ক: সরকার কি চ

1

ইউনূসের পরিকল্পনায় বাংলাদেশ কী নতুন ৭১-এর মুখোমুখি

2

মব উস্কে শিক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংসের চেষ্টায় ইউনূস গং

3

অন্তর্বর্তী সরকারের ১০ মাসে আইপিওশূন্য পুঁজিবাজার

4

৬০০ কোটি টাকার হাসপাতাল এখন জুলাই আহতদের ‘আবাসিক হোটেল’

5

চোট থেকে ফেরার পথে বাংলাদেশের পেস ত্রয়ী

6

ইউনূসের মালয়েশিয়া সফরকে ঘিরে প্রবাসীদের কপালে চিন্তার ভাঁজ

7

আসিফের ব্যাগ থেকে পাওয়া গেছে একে-৪৭ এর অ্যামোনেশন ম্যাগজিন

8

কাফনের কাপড় পরে এনবিআরে ফের কলম বিরতি

9

সাজানো–গোছানো কক্ষ, চিকিৎসা সরঞ্জাম নেই, মাঝপথে সমাপ্ত স্বাস

10

মব উস্কে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান ধ্বংসের চেষ্টায় ইউনূস গং

11

উপদেষ্টা আসিফের মদদে কুমিল্লায় হিন্দু নারী গণধর্ষণের শিকার!

12

ইউনূসের নেতৃত্বে বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের আস্ফালন

13

মব সন্ত্রাসে কমেছে বিদেশি বিনিয়োগ, অর্থনীতিকে পঙ্গু করার ষড়য

14

মব ভায়োলেন্সে প্যারালাইজড দেশের গণমাধ্যম

15

ডিএমপি কমিশনার ফের প্রমাণ করলেন, জঙ্গিদের মদদেই ক্ষমতায় ইউনূ

16

পরিবর্তন হলো মাধ্যমিক-উচ্চ মাধ্যমিকের শপথ

17

বিমানবন্দরে আসিফ মাহমুদের ব্যাগে অ্যামোনেশন ম্যাগজিন শনাক্ত

18

বদলির আদেশ বাতিল ও এনবিআর চেয়ারম্যানকে অপসারণে লাগাতার কর্মস

19

জঙ্গিবাদীদের আবাধ দৌরাত্ম; রহস্যজনক প্রশাসনের নীরবতা

20