বিএনপির দায়ের করা মামলার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই উত্তপ্ত পরিস্থিতির মুখোমুখি হন সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা। গতকাল রোববার সন্ধ্যায় উত্তরা ৫ নম্বর সেক্টরের তার বাসভবনে বিএনপির নেতাকর্মীরা মব তৈরি মাধ্যমে বাসা ঘেরাও করে। এসময় তাকে শারীরিক লাঞ্ছিত করে উত্তরা পশ্চিম থানা পুলিশ হেফাজতে দেওয়া হয়। পরে মিন্টো রোডের গোয়েন্দা কার্যালয়ে নেওয়া হয় এবং মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
এর আগে, দুপুরে সাবেক তিন সিইসি-সহ ২৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা করে বিএনপি। মামলার অভিযোগের সূত্র ধরে এধরনের প্রতিশোধমূলক ও অপমানজনক আচরণকে গভীর উদ্বেগের চোখে দেখছে বিভিন্ন মহল। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, নূরুল হুদাকে ঘিরে বিএনপি নেতাকর্মীরা জুতা হাতে হেনস্তা করছে, কেউ তার গলায় জুতার মালা পরিয়ে দিয়েছে। এমনকি পুলিশের উপস্থিতিতেই এই অপমানজনক ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
সরকার দাবি করেছে, দায়ীদের শনাক্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে ভিডিও ও স্পষ্ট ছবিসহ ঘটনার প্রমাণ থাকলেও এখনো কাউকে গ্রেপ্তার না করায় সরকারের সদিচ্ছা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। নূরুল হুদা ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের সময় সিইসি ছিলেন। তিনি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধাও বটে। এমন একজন ব্যক্তি ও গুরুত্বপূর্ণ সাংবিধানিক পদধারীকে এভাবে প্রকাশ্যে হেনস্থা করা পুরো নির্বাচন কমিশনের মর্যাদার ওপর আঘাত বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের পক্ষ থেকে এর আগে বিতর্কিত তিন নির্বাচনের তদন্তের ঘোষণা দিয়েছিলেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। এরপর থেকেই নির্বাচন কমিশনের সাবেক কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ধারাবাহিকভাবে রাজনৈতিক চাপ ও জনরোষ বাড়ছে বলে মত বিশ্লেষকদের।
অতীতে বিতর্কিত নির্বাচন হলেও, যেমন ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচন কিংবা ২০০৭ সালের পূর্বের আজিজ কমিশন– এসব কমিশনের সদস্যদের বিরুদ্ধে পরবর্তীতে কোনো আইনি ব্যবস্থা বা অপমানজনক আচরণের নজির নাই। এটাই দীর্ঘ সময় ধরে একটি প্রাতিষ্ঠানিক ঐতিহ্য হিসেবে ধরে রাখা হয়েছিল।
নুরুল হুদা একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। তার প্রতি প্রকাশ্যে যে দুর্ব্যবহার ও অপমানজনক আচরণ করা হয়েছে, সেটি শুধু একজন ব্যক্তির নয়, বরং একটি সাংবিধানিক পদের মর্যাদার বিরুদ্ধেই আঘাত।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাষ্ট্র যদি এ ঘটনার যথাযথ বিচার না করে এবং সাংবিধানিক পদের সম্মান রক্ষা না করে, তাহলে ভবিষ্যতে দক্ষ ও সৎ ব্যক্তিদের এমন দায়িত্বে আগ্রহ কমে যেতে পারে। এটি রাষ্ট্রীয় প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থার জন্য দীর্ঘমেয়াদে বিপজ্জনক হতে পারে।
মন্তব্য করুন