নিজস্ব প্রতিবেদক
ঢাকার গুলশানে হোলি আর্টিজান বেকারিতে ২০১৬ সালের ১ জুলাই সংঘটিত বর্বর জঙ্গি হামলার স্মরণে শহীদ পুলিশ কর্মকর্তাদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের উদ্যোগ নিয়েছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। রাষ্ট্রীয় অবহেলা ও প্রতিক্রিয়াশীল শক্তির দখলে থাকা এই ঐতিহাসিক স্থানে এবার কোনো সরকারি আয়োজন না থাকলেও শিক্ষার্থীদের এই স্বতঃস্ফূর্ত কর্মসূচি নজর কেড়েছে।
উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ওই জঙ্গি হামলায় ২০ জন নিরীহ মানুষ নিহত হন, যাদের মধ্যে দুইজন ছিলেন জিম্মিদের উদ্ধারে এগিয়ে যাওয়া পুলিশ কর্মকর্তা—তৎকালীন ডিবির এএসপি রবিউল করিম এবং বনানী থানার ওসি সালাহউদ্দিন। এ ঘটনা স্মরণে গুলশানে নির্মিত হয়েছিল ভাস্কর্য ‘দিপ্ত শপথ’। কিন্তু ২০২৪ সালের ৬ আগস্ট সেই ভাস্কর্য ভেঙে ফেলা হয় এবং সেখানে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন হিযবুত তাহরীর-এর পোস্টার ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। ঘটনার প্রায় এক বছর পরও ভাস্কর্যটি পুনঃস্থাপন করা হয়নি।
গুলশানে সেই ভাঙা ভাস্কর্যের স্থানে ব্যানার টানিয়ে এবং পুষ্পস্তবক অর্পণের মধ্য দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। ব্যানারে শহীদ দুই পুলিশ সদস্যের ছবি ছিল, এবং শিক্ষার্থীরা বলেন, এই কর্মসূচি তারা নিজেরাই করেছেন, কারণ রাষ্ট্র ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে কোনো উদ্যোগ ছিল না।
শিক্ষার্থী শাহরিয়ার ইব্রাহীম বলেন, “২০১৬ সালে হোলি আর্টিজানে কাপুরুষোচিত হামলা চালিয়েছিল জঙ্গিরা। সেই হামলা প্রতিহত করতে গিয়ে দুইজন অকুতোভয় পুলিশ কর্মকর্তা শহীদ হয়েছেন। অথচ আজ তাদের স্মরণে ভাস্কর্যটি ভেঙে রাখা হয়েছে, আর পুলিশ চুপচাপ রয়েছে। আমরা অনুমতি পেলে নিজেরাই সেটি আবার নির্মাণ করবো।”
তিনি আরও বলেন, “যদি পুলিশ চায়, আমরা সেই স্থান পুনর্নির্মাণে এক মাস সময় চাই। কারণ তারা আমাদের অনুপ্রেরণা। তাদের আত্মবলিদান যেন বিস্মৃত না হয়, সেটিই আমাদের লক্ষ্য।”
তবে এই হামলাকে বর্তমান ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “বাংলাদেশে এখন কোনো জঙ্গি নেই, শুধু ছিনতাইকারী আছে। আগের সরকার জঙ্গি নাটক সাজিয়ে ছেলেপেলেদের মেরেছে।” এই বক্তব্যে বিস্মিত হয়েছেন বিশ্লেষকরা। কারণ তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে, হোলি আর্টিজানের হামলা স্থানীয় নব্য জেএমবি সংগঠনের কাজ ছিল।
রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালনে এ ধরনের গাফিলতি এবং উগ্র সংগঠন হিযবুত তাহরীরের পোস্টার ঝোলার পরও কোনো আইনি ব্যবস্থা না নেওয়ায় শিক্ষার্থীরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। নাগরিক সমাজ বলছে, শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস-এর নেতৃত্বাধীন অনির্বাচিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময় থেকেই এই সাংস্কৃতিক ও আদর্শিক দুর্বলতা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
বিগত বছরগুলোতে জঙ্গি বিরোধী অভিযান ছিল দৃঢ় ও কার্যকর। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে পুলিশের দৃষ্টিভঙ্গির এই পরিবর্তন দেশকে আবারো চরমপন্থার দিকে ঠেলে দিতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা।
মন্তব্য করুন