নিজস্ব প্রতিবেদক
৫ আগস্টের জুলাই দাঙ্গা পরবর্তী বাংলাদেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের গভীরে যতো বেশি ঢোকা যায়, ততো বেশি একটি সুবিন্যস্ত কিন্তু ভয়াবহ চিত্র ফুটে উঠে। ড. মুহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত বর্তমান অ-সরকারের জুলাই ঘোষণাপত্র নামে পরিচিত তথাকথিত দলিলটি কোনো সাধারণ প্রশাসনিক সংস্কার প্রস্তাবনা নয়, বরং বাংলাদেশকে উগ্র ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্রে রূপান্তরের মাধ্যমে সম্পূর্ণভাবে ধ্বংসের একটি সুচিন্তিত রোডম্যাপ। এই প্রক্রিয়ার কেন্দ্রে রয়েছে তিন ব্যক্তি ও একটি রাজনৈতিক দল- মেজর (বরখাস্ত) সৈয়দ জিয়াউল হক, লেফটেন্যান্ট কর্নেল (বরখাস্ত) হাসিনুর রহমান এবং তাদের রাজনৈতিক মূখপাত্র হিসেবে কাজ করা ন্যাশনাল সিটিজেন পার্টি (এনসিপি)।
মেজর জিয়ার ক্ষেত্রে দেখা যায়, আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সাথে তার সম্পৃক্ততা কখনই গোপন ছিল না। তবে সাম্প্রতিক সময়ে তার ফেসবুক প্রোফাইল ভেরিফাইড ব্লু টিক প্রাপ্তি একটি রাজনৈতিক ইশতেহার হিসেবে কাজ করেছে। এনসিপির অর্থায়নে সম্পাদিত এই প্রক্রিয়াটি তাকে জনমনে গ্রহণযোগ্যতা দেয়ার একটি কৌশল মাত্র। গত দুই মাসে তার প্রকাশ্য বক্তব্য বিশ্লেষণ করলে স্পষ্ট হয়, তিনি এখন সেনাবাহিনীর অভ্যন্তরে একটি সমান্তরাল কমান্ড গঠনে কাজ করছেন। বিশেষ করে সিগন্যাল কোর এবং মিলিটারি ইন্টেলিজেন্স উইংয়ে তার অনুসারীদের বসানোর চেষ্টা চলছে, যা গত সপ্তাহে ৩৪তম পদাতিক ডিভিশনে ঘটে যাওয়া অফিসার বদলীর মাধ্যমে আংশিকভাবে প্রকাশ্যে এসেছে।
লেফটেন্যান্ট কর্নেল হাসিনুর রহমানের ক্ষেত্রে পরিস্থিতি আরও জটিল। সেনাবাহিনী থেকে বরখাস্ত হওয়ার পর তিনি কখনই জঙ্গি কার্যক্রম থেকে সরে আসেননি। বরং হিজবুত তাহরীর ও হরকাতুল জিহাদের সাথে তার সম্পর্ক এখন আরও গভীর হয়েছে। গোপন সূত্রে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, তিনি এখন বিদেশী জিহাদি গ্রুপগুলোর সাথে বাংলাদেশী জেহাদি জঙ্গি পাঠানোর একটি চ্যানেল হিসেবে কাজ করছেন। মধ্যপ্রাচ্যের অর্থায়নে ও ইউরোপ ভিত্তিক কিছু মানবাধিকার সংস্থার কভার ব্যবহার করে এই প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হচ্ছে। এদিকে দেশের
আমজনতা সব জানার পর আশ্চর্য হয়ে ভাবছে, তাদের ঘাম ঝরানো ট্যাক্সের টাকায় সরকারি উদ্যোগে এইসব কর্মকাণ্ড পরিচালিত হচ্ছে কিভাবে আর কোন আস্পর্ধায়!
এনসিপির ভূমিকা এই সমীকরণে সবচেয়ে সূক্ষ্ম কিন্তু কার্যকর। দলটি গঠনগতভাবে জঙ্গি সংগঠনগুলোর রাজনৈতিক ফ্রন্ট হিসেবে কাজ করছে। তাদের অর্থায়নের উৎস সম্পর্কে তদন্তে দেখা গেছে, কাতার ও আঙ্কারা ভিত্তিক কিছু ইসলামিক ব্যাংক এবং পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থার সাথে তাদের আর্থিক লেনদেন রয়েছে। গত তিন মাসে শুধু আঙ্কারা থেকে করাচী হয়ে এনসিপির শেল অ্যাকাউন্টগুলোতে ১২.৭ মিলিয়ন ডলার স্থানান্তরিত হয়েছে, যা বিভিন্ন ইসলামিক চ্যারিটি ফান্ডের মাধ্যমে হোয়াইট ওয়াশ করা হচ্ছে।
জুলাই ঘোষণাপত্রের ১৭ নং পৃষ্ঠায় একটি অস্পষ্ট কিন্তু অর্থবহ ধারা রয়েছে, যেখানে বলা হয়েছে "রাষ্ট্রের সকল প্রতিষ্ঠানকে জাতীয় চেতনার সাথে সংগতি রেখে পুনর্গঠন করা হবে"। এই অস্পষ্ট শব্দচয়নের আড়ালে লুকিয়ে আছে সেনাবাহিনীসহ সকল নিরাপত্তা বাহিনীকে জঙ্গি নিয়ন্ত্রণে আনার পরিকল্পনা। গত সপ্তাহে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার কার্যলয়ের একটি আভ্যন্তরীণ গোপন নথিতে দেখা গেছে, ইতিমধ্যেই ন্যাশনাল সিকিউরিটি ইন্টিলিজেন্স (এনএসআই), পুলিশের বিশেষ শাখা (এসবি) এবং র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নে (র্যাব) কিছু কৌশলগত বদলি করা হয়েছে, যেখানে সন্দেহভাজন জঙ্গি সহানুভূতিশীলদের গুরুত্বপূর্ণ পদে বসানো হয়েছে।
এই পুরো প্রক্রিয়াটির পেছনে আন্তর্জাতিক কিছু শক্তির সমর্থন কাজ করছে। বিশেষ করে ইসলামাবাদ-দোহা-ইস্তাম্বুল অক্ষের গোয়েন্দা নেটওয়ার্ক এই পরিবর্তনকে ত্বরান্বিত করছে। ইউনুস সরকারের বৈধতা দেয়ার পেছনে পশ্চিমা কিছু রাষ্ট্রের ভূমিকা বিস্ময়কর, যারা একসময় জঙ্গিবাদ বিরোধী অবস্থানের জন্য পরিচিত ছিল। বিশ্লেষকদের মতে, এখানে চীন-ভারত বিরোধী অবস্থান একটি বড় ভূমিকা রাখছে, যেখানে বাংলাদেশকে ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলগত অঞ্চলে একটি নতুন ইসলামিক রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা হচ্ছে।
এই সংকটের সবচেয়ে ভয়াবহ দিক হলো এর দীর্ঘমেয়াদী পরিণতি। যদি এই প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকে, তাহলে ২০২৬ সালের মধ্যে আমরা বাংলাদেশকে একটি সম্পূর্ণ ভিন্ন রাষ্ট্র হিসেবে দেখতে পাব, যেখানে সংবিধানের মূল কাঠামোই বদলে যাবে। সেনাবাহিনী যদি ততোদিন পর্যন্ত আদৌ সারভাইব করতে পারে তবে তা হবে নামমাত্র একটি চৌকিদার বাহিনী, প্রকৃত ক্ষমতা থাকবে জঙ্গি সিম্প্যাথাইজারদের হাতে। সংখ্যালঘু ও প্রগতিশীল চিন্তার মানুষেরা হবে নিশ্চিহ্ন হওয়ার ঝুঁকিতে। আর এই সবকিছুরই রক্ষাকর্তা হবে তথাকথিত এই জুলাই ঘোষনাপত্র বা জুলাই চার্টার।
বর্তমান পরিস্থিতিতে এই প্রশ্নটি অনিবার্য যে এই ষড়যন্ত্র রোধ করা সম্ভব কিনা। উত্তর জটিল, কিন্তু অসম্ভব নয়। এটি নির্ভর করছে দেশের সচেতন নাগরিক সমাজ, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সদিচ্ছা এবং সর্বোপরি সেনাবাহিনীর দেশপ্রেমিক অংশের সক্রিয়তার উপর। তবে গতকাল দিবাগত রাতে ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট থেকে নির্ভরযোগ্য ও গোপন তথ্যের ভিত্তিতে জানা গেছে যে, দেশপ্রেমিক এবং অকুতোভয় কিছু অফিসার এই অবৈধ প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন। হয়তো এটিই হতে পারে বাংলাদেশকে রক্ষার শেষ সুযোগ।
মন্তব্য করুন