Insight Desk
প্রকাশ : Jun 29, 2025 ইং
অনলাইন সংস্করণ

কুমিল্লায় হিন্দু নারী ধর্ষণের ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ, চলমান সহিংসতায় বিপর্যস্ত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী

৫ আগস্টের রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর থেকে বাংলাদেশে হিন্দুসহ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর ধারাবাহিকভাবে নির্যাতন চলেছে। এই সহিংসতা সংঘটিত হলেও অপরাধীরা থাকছে বিচারহীনতার আওতায়।

হত্যা, লুটপাট, ধর্ষণ, ভয়ভীতি, মন্দির ধ্বংস এবং ইসলাম ধর্ম অবমাননার মিথ্যা অভিযোগ এই নির্যাতনের পরিচিত রূপ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

গত সপ্তাহে ঢাকার খিলক্ষেতে একটি হিন্দু মন্দির ইসলামপন্থীদের দাবির মুখে বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। রেল কর্তৃপক্ষ এটিকে “অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ” বলে ব্যাখ্যা করলেও প্রতিমা ভাঙাকে তারা তুচ্ছ করে দেখিয়েছে।

একই সময়ে, এক হিন্দু নাপিত ও তার ছেলেকে “ধর্ম অবমাননার” অভিযোগে জনসমক্ষে গণপিটুনি দিয়ে পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়। পরে জানা যায়, ১০ টাকা কম দেওয়াকে কেন্দ্র করে গ্রাহকের সঙ্গে বিবাদ থেকেই এই ঘটনা ঘটে।

সর্বশেষ, ২৬ জুন কুমিল্লার মুরাদনগরে এক প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা ২৫ বছর বয়সী হিন্দু নারীকে ধর্ষণ করে। স্থানীয়রা তাকে রক্ষা করতে গেলে ধর্ষক পালিয়ে যায়। ধর্ষণের ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।

মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) জানিয়েছে, জানুয়ারি থেকে মে ২০২৫ পর্যন্ত ২৮৬ জন নারী ও শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে এবং ৯৭টি দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। এসব ধর্ষণের পর ১৬ জন নিহত হয়েছে।

সবচেয়ে ভয়াবহ তথ্য হলো, ধর্ষণের শিকারদের মধ্যে ২৪১ জনের বয়স ১৮ বছরের নিচে, আর ৪৩ জনের বয়স ৬ বছরের নিচে।

মব সংস্কৃতি ও 'তৌহিদি জনতা'

বর্তমান সরকার প্রো-ইসলামিস্ট অবস্থানে থাকায় মব হামলার সংখ্যা রেকর্ড মাত্রায় পৌঁছেছে, অথচ তা প্রতিরোধে কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

সরকারে উচ্চশিক্ষিত অধিকারকর্মীরা থাকলেও মূল ক্ষমতা রয়েছে মৌলবাদী উগ্র গোষ্ঠী 'তৌহিদি জনতা'র হাতে। এই ব্যানারের আড়ালে হামলাকারীদের মধ্যে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামি, হেফাজতে ইসলাম, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, খেলাফত মজলিশ এবং সরকারের 'কিংস পার্টি' এনসিপির স্থানীয় নেতারা সক্রিয়।

ফলে, নারীর অধিকারে প্রগতিশীলতার বদলে মৌলবাদীদের রাজত্ব কায়েম হয়েছে। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলোতেও এ নিয়ে নেতিবাচক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।

সরকারের ছত্রচ্ছায়ায় অপরাধীরা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠছে।

সাম্প্রতিক মাসগুলোতে অন্তত তিনটি নারীর প্রতি প্রকাশ্যে নির্যাতনের ঘটনা আলোচনায় এসেছে। একদিকে দোষীদের দ্রুত বিচারের দাবি উঠলেও, অপরদিকে 'তৌহিদি জনতা'র প্রভাবে পুলিশ ও আদালত অভিযুক্তদের মুক্তি দিয়েছে।

ফলে দেখা গেছে, গ্রেপ্তারের পর তারা জামিনে মুক্তি পেয়ে ফুলের মালা ও কোরআন নিয়ে বরণ করা হয়েছে।

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ বলছে, নারীদের ওপর ধর্ষণ, গণধর্ষণ ও হত্যা অব্যাহত রয়েছে। এই সহিংসতা নারীর স্বাভাবিক জীবন, শিক্ষা ও স্বাধীন চলাফেরাকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। এর ফলে স্কুল-কলেজছাত্রীদের অগ্রগতি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে এবং বাল্যবিবাহের হার বিপজ্জনকভাবে বেড়ে যাচ্ছে।

কুমিল্লার ধর্ষণ

পুলিশ কুমিল্লার মুরাদনগরের ধর্ষণের ভিডিও ছড়ানোর অভিযোগে তিনজনকে আটক করেছে, কিন্তু ধর্ষক পলাতক।

মামলা অনুসারে, ৩৮ বছর বয়সী ফজর আলী ২৬ জুন রাতে ওই নারীর বাড়িতে ঢুকে, ছুরি দেখিয়ে ভয় দেখিয়ে তাকে ধর্ষণ করে। আশপাশের মানুষ তার চিৎকার শুনে ছুটে আসে।

ফজর আলী মুরাদনগরের বাহেরচর পাঁচকিট্টা গ্রামের শহীদ মিয়ার ছেলে।

নারী জানান, তিনি ১৫ দিন আগে শ্বশুরবাড়ি থেকে বাবার বাড়িতে আসেন। তখন থেকেই অভিযুক্ত তাকে উত্যক্ত করে আসছিল। তিনি ২৭ জুন মুরাদনগর থানায় মামলা করেন।

ভুক্তভোগীর ফুফু সরস্বতী বর্মন বলেন, পাশের বাড়িতে পূজা হচ্ছিল। আমি সেখান থেকে আওয়াজ শুনে আতঙ্কিত হয়ে ছুটে গিয়ে পূজার অনুষ্ঠানে উপস্থিত লোকদের ডেকে আনি। তারা এসে দেখেন দরজাটি ভাঙা ছিল।

স্থানীয় বাসিন্দা সজীব বলেন, পূজার অনুষ্ঠানে আমরা উপস্থিত ছিলাম। রাত প্রায় ১০:৩০টার দিকে ভুক্তভোগীর ফুফু এসে জানান কী ঘটছে। তখন সবাই গিয়ে দেখে দরজা ভাঙা, এবং ভিতরে গিয়ে দেখে ফজর আলী জোরপূর্বক ধর্ষণ করছে।

স্থানীয়রা জানিয়েছে, ৫ আগস্টের পর থেকে ফজর আলী এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে এবং বিএনপি নেতাদের সহায়তায় প্রভাব বিস্তার করেছে।

ভয়াবহ ধর্ষণের ঘটনা

২৩ জুন নওগাঁর পত্নীতলায় এক কলেজছাত্রীকে নিজ বাড়িতে একা পেয়ে ধর্ষণ করে প্রতিবেশী রাজু। তার পরিবার জানিয়েছে, ভিকটিমের মা-বাবা মাঠে কাজ করতে গেলে রাজু তার ঘরে ঢুকে ভয়ভীতি দেখিয়ে ধর্ষণ করে। ধর্ষণের শিকার ছাত্রী থানায় মামলা করলে রাজু পালিয়ে যায়। এখনও সে পলাতক।

রাজবাড়ীর পাংশা উপজেলায়, দুই অষ্টম শ্রেণির ছাত্রীকে ছুরি দেখিয়ে অপহরণ করে ধর্ষণ করা হয়েছে। স্থানীয় হাসমত আলী ও সিহাব মণ্ডল পথ আটকে এ অপরাধ সংঘটিত করে।

১৫ জুন হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলায় এক কলেজ ছাত্রীকে চলন্ত বাসে গণধর্ষণ করা হয়। সায়েদাবাদ থেকে বানিয়াচং যাওয়ার পথে মা এন্টারপ্রাইজ নামের বাসে করে যাওয়ার সময় অঘুম অবস্থায় বাসে থাকা হেলপার লিটন মিয়া ও চালক সাব্বির মিয়া তাকে ধর্ষণ করে।

১২ জুন মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় এক স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণের চেষ্টা ব্যর্থ হলে প্রতিবেশী জুনেল মিয়া তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে।

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

জুলাই আন্দোলন: গুজব, ষড়যন্ত্র আর দেশ বিক্রির কালো গল্প ফাঁস

1

তবে কি আরেক পিলখানা হত্যাযজ্ঞ দেখতে যাচ্ছে বাংলাদেশ?

2

মন্দির অপসারণ না হলে ভেঙে ফেলার হুমকি মুসল্লীদের

3

ইউনূসের ফাঁদে পা দিল বিএনপি

4

এক সময় মানবাধিকারের মুখপাত্র আসদুজ্জামান এখন মবের হোতা?

5

ইউনূসের প্রতিশ্রুতি ভাঙলেন খলিল; স্ত্রীকে ট্রাস্টি বানিয়ে ই

6

ইউনূসের আসকারায় থানায় মিথ্যা মামলার হিড়িক, উদ্বিগ্ন বিশ্লেষক

7

‘ছয় মাসের বেশি টিকবে না—এসব শুনতে শুনতে ১০ বছর কাটিয়ে দিলাম’

8

ইউনূসের আশকারায় মবের রাজ হাসনাত, রুখবে কে?

9

ক্যাম্পাসের আশপাশে টহল বাড়াতে সেনাবাহিনীকে চিঠি দেবে ঢাকা বি

10

মব উস্কে দেশ ধ্বংসের নীলনকশা করেছে ইউনূস গং

11

অভ্যন্তরীণ ফ্যাসিবাদ, দুর্নীতির অভিযোগে এনসিপি ও বৈছাআ থেকে

12

ষড়যন্ত্রের নীল নকশা ফাঁস: গুজব-মব দিয়ে রাষ্ট্রপতিকে সরাতে চা

13

কাফনের কাপড় পরে এনবিআরে ফের কলম বিরতি

14

স্থানীয় ষড়যন্ত্র ও গোপন মার্কিন অভিযানের ফল ৫ আগস্ট

15

মব ভায়োলেন্সে প্যারালাইজড দেশের গণমাধ্যম

16

কোটার জায়গায় কোটা রইল, মেধার হলো না জেতা

17

দুদক ধ্বংসে মরিয়া ইউনূস গং

18

অপকর্ম আড়ালেই ভরসা “গুজব যন্ত্রে”: সক্রিয় ইউনূস গোষ্ঠী

19

ইউনূসের মদদে ছাত্রনেতাদের চাঁদাবাজি ও দুর্নীতির রাজত্ব; রুখব

20