নিজস্ব প্রতিবেদক
২০২৪ সালের জুলাইতে সরকারি চাকরিতে মেধা-ভিত্তিক নিয়োগ নিশ্চিত করার দাবিতে লাখো শিক্ষার্থী রাস্তায় নেমেছিল। আন্দোলন এতটাই বিস্তৃত হয় যে, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগে বাধ্য হন। এরপর অবৈধভাবে ক্ষমতা নেন নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস, যার নেতৃত্বে গঠিত হয় একটি অন্তর্বর্তী সরকার।
কিন্তু সেই সরকারই এখন মেধার পরিবর্তে আবারও কোটাকেন্দ্রিক নিয়োগব্যবস্থা চালু করছে। সরকারের সাম্প্রতিক সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ‘জুলাই বিপ্লবের’ শহীদ পরিবার ও আহতদের জন্য সরকারি চাকরিতে অগ্রাধিকার কোটার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
সম্প্রতি মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম জানিয়েছেন, ৮৩৪ জন ‘জুলাই শহীদ’ পরিবারের সদস্য এবং প্রায় ১২ হাজারের বেশি আহত আন্দোলনকারী ‘জুলাই যোদ্ধা’ হিসেবে বিশেষ স্বীকৃতি পাচ্ছেন। তাদের মধ্যে গুরুতর আহতদের দেওয়া হচ্ছে এককালীন অর্থসাহায্য, মাসিক ভাতা, চিকিৎসা, পুনর্বাসন এবং চাকরিতে অগ্রাধিকার সুবিধা।
তিন শ্রেণিতে ভাগ করা হয়েছে আহতদের: A ক্যাটাগরির আহতরা প্রতি মাসে ২০ হাজার টাকাসহ এককালীন ৫ লাখ টাকা; B ক্যাটাগরির আহতরা প্রতি মাসে ১৫ হাজার টাকাসহ এককালীন ৩ লাখ টাকা ও C ক্যাটাগরির আহতরা প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকাসহ এককালীন ১ লাখ টাকা পাবে। এই সুবিধাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বিতর্কিত হচ্ছে সরকারি ও আধা-সরকারি চাকরিতে অগ্রাধিকার কোটার ঘোষণা।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, "আন্দোলন হয়েছিল কোটাবিরোধী নীতির বিরুদ্ধে। এখন সেই আন্দোলনেরই ফসল যদি হয় আরেকটি ‘কোটা’, তাহলে প্রশ্ন জাগে—এই বিপ্লবের উদ্দেশ্য কী ছিল?
বিশ্লেষকেরা আরও বলছেন , ড. ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকারও সেই পুরনো ‘পক্ষপাতদুষ্ট আর প্রতিক্রিয়াশীল’ রাষ্ট্রনৈতিক ধারা থেকে বের হতে পারেনি। “গণঅভ্যুত্থানকে পূঁজি করে নতুন রকমের প্রিভিলেজ তৈরি করা হচ্ছে। মেধা-ভিত্তিক ন্যায়ের বদলে আবারো পরিচয়-ভিত্তিক পছন্দ-অপছন্দকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।”
চাকরিপ্রত্যাশী মেধাবীদের অনেকে বলছেন, তারা আশাবাদী ছিলেন এই সরকার কোটানির্ভরতার সংস্কৃতি থেকে বের হবে। কিন্তু এখন তারা মনে করছেন, কোটা সংস্কার আন্দোলন শুধু ক্ষমতা পালাবদলের হাতিয়ার হিসেবেই ব্যবহৃত হয়েছে।
এক শিক্ষার্থী বলেন, "আন্দোলনটা করেছিলাম মেধার স্বীকৃতির জন্য। এখন দেখি সেই আন্দোলনের নামেই আবার নতুন করে কোটা চালু হচ্ছে। তাহলে লাভটা কার হলো?"
অন্তর্বর্তী সরকারের সিদ্ধান্ত কতটা ন্যায়ভিত্তিক এবং কতটা রাজনৈতিক—সেই প্রশ্ন আজ ছাত্রসমাজ থেকে শুরু করে সচেতন নাগরিক মহলে ঘুরপাক খাচ্ছে। মেধার দাবি আবারো চাপা পড়ছে রাজনৈতিক ‘চাপ’ আর ‘চাকরি ভাগাভাগির’ কোটার নিচে। তাই অনেকেই বলছেন—“কোটার জায়গায় কোটা রইল, মেধার হলো না জেতা।”
মন্তব্য করুন