নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
রাখাইন রাজ্যে চলমান সংঘাতের প্রেক্ষাপটে রোহিঙ্গাদের জন্য প্রস্তাবিত ‘মানবিক করিডোর’ পরিকল্পনাকে কেন্দ্র করে দেশের রাজনীতিতে নতুন করে বিতর্কের ঝড় উঠেছে। একদিকে বিএনপি সরকারের বিরুদ্ধে এই পরিকল্পনার বিরোধিতায় আন্দোলনে নেমেছে, অন্যদিকে দলের শীর্ষ নেতাদের গোপন বৈঠক ও পরস্পরবিরোধী অবস্থান জনমনে বিভ্রান্তি ও উদ্বেগ তৈরি করেছে।
বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে লন্ডনে অনুষ্ঠিত একটি আলোচিত বৈঠক—যেখানে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, বিতর্কিত জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান এবং দলের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস অংশ নেন। বিশ্বস্ত সূত্র জানায়, ১১ জুন তারেক রহমানের বাসভবনে প্রথমে একান্ত বৈঠকে বসেন তিনি ও খলিল। পরবর্তীতে ইউনূস যোগ দিলে বৈঠকটি প্রায় দেড় ঘণ্টা স্থায়ী হয়।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, করিডোর ইস্যুতে বিএনপির অবস্থান পুনর্বিন্যাস এবং কৌশল নির্ধারণই ছিল এই বৈঠকের মূল উদ্দেশ্য। তাদের দাবি, মূল আলোচনা হয় তারেক ও খলিলের মধ্যেই; ইউনূসের উপস্থিতি ছিল মূলত নাটকীয়তা ও রাজনৈতিক বার্তা পৌঁছানোর জন্য।
সবচেয়ে বিস্ময়কর দিক ছিল, বৈঠক শেষে বিএনপির পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন ড. খলিলুর রহমান—যাকে এতদিন করিডোর ষড়যন্ত্রের মূল হোতা হিসেবে দোষারোপ করে আসছিল বিএনপি নিজেই। বিষয়টি দলটির রাজনৈতিক অবস্থানকে আরও প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলেছে।
অভিযোগ রয়েছে, প্রশাসনের একটি অংশের সহযোগিতায় টেকনাফ থেকে রাখাইনের মংডু অঞ্চলে অস্ত্র পাচার করা হচ্ছে, যার সঙ্গে বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন আরাকান আর্মির সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। এমনকি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকেও এই ষড়যন্ত্রে জড়ানোর চেষ্টা চলছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। চীনা দূতাবাস বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ জানালে, খলিল পুনরায় তারেক রহমানের সহায়তা চান বলে জানা গেছে।
বিশ্লেষকদের মতে, মানবিক করিডোর ইস্যুতে বিএনপি একদিকে আইনি নোটিশ দিলেও, দলটি এখন এ বিষয়ে মুখ খুলতে চাচ্ছে না। যে পরিকল্পনার বিরুদ্ধে তারা এতদিন সোচ্চার ছিল, সেই করিডোর বাস্তবায়নের পক্ষে এখন নীরব সমর্থন দিচ্ছে বলেও মনে হচ্ছে।
তারা মনে করেন, মানবিক করিডোর শুধু একটি কূটনৈতিক প্রস্তাব নয়, বরং এটি একটি বৃহৎ রাজনৈতিক প্রকল্প, যার মাধ্যমে দেশের জাতীয় নিরাপত্তা, পররাষ্ট্রনীতি ও অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা হুমকির মুখে পড়তে পারে।
মন্তব্য করুন