নিজস্ব প্রতিবেদক
কুমিল্লার মুরাদনগরে মাদক ব্যবসার অভিযোগে একই পরিবারের তিনজনকে প্রকাশ্যে পিটিয়ে হত্যা করেছে স্থানীয় গ্রামবাসী। নিহতরা হলেন রুবি আক্তার, তার মেয়ে জোনাকি এবং ছেলে রাসেল। গুরুতর আহত অবস্থায় রুবির অপর মেয়ে বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। ভয়াবহ এই ঘটনা ঘটে বৃহস্পতিবার, ৩ জুলাই সকাল ৯টা ৩০ মিনিটে, মুরাদনগর উপজেলার বাঙ্গরা থানার আওতাধীন আখপুর ইউনিয়নের কারবাইবাড়ি গ্রামে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ওই পরিবারকে মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত বলে সন্দেহ করে কিছু উত্তেজিত গ্রামবাসী তাদের বাড়ি ঘিরে ফেলে। এরপর কোনো প্রকার যাচাই-বাছাই বা প্রমাণ ছাড়াই চারজনকে গাছে বেঁধে বেধড়ক মারধর করা হয়। ঘটনাস্থলেই রুবি, জোনাকি ও রাসেল প্রাণ হারান। অপর কন্যা অচেতন অবস্থায় পড়ে ছিলেন। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠায়।
ঘটনার সময় স্থানীয় প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরাও ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, কুমিল্লার পুলিশ সুপার নাজির আহমেদ, গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তাবৃন্দ এবং থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে থাকলেও কেউ হামলা ঠেকানোর কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি। বরং, ঘটনার পর প্রশাসন নাটকীয়ভাবে তদন্ত শুরু করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
বাঙ্গরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাহফুজুর রহমান গণমাধ্যমকে ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, “এই ঘটনাটি দুঃখজনক, আমরা বিষয়টি তদন্ত করছি।” তবে তদন্ত শুরু হলেও হত্যাকাণ্ডের সময় পুলিশের নীরবতা ও নিষ্ক্রিয়তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে সর্বমহলে।
স্থানীয় বাসিন্দারা ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা বলছেন, দেশে বিচারপ্রক্রিয়া ব্যর্থ হওয়ায় মানুষ আইন তুলে নিচ্ছে নিজের হাতে। প্রমাণ ছাড়া মানুষকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনা বাড়ছে, এবং প্রশাসনের উদাসীনতা এই সহিংসতাকে আরও উৎসাহ দিচ্ছে। তারা প্রশ্ন তুলেছেন, যেখানে প্রশাসনের চোখের সামনে গণহত্যা ঘটে, সেখানে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা কোথায়?
এই ঘটনাটি শুধুই একটি বিচ্ছিন্ন সহিংসতা নয়, বরং এটি দেশের বিচারহীন সংস্কৃতি এবং মব শাসনের দিকে ধাবিত হওয়ার আরেকটি ভয়ানক উদাহরণ।
মন্তব্য করুন