Insight Desk
প্রকাশ : Jun 29, 2025 ইং
অনলাইন সংস্করণ

ইউনূসের হাজার কোটি টাকা কর ফাঁকির খবর গায়েব

নিজস্ব প্রতিবেদক 

২০২৩ সালের ২২শে মে দৈনিক কালের কন্ঠ মুহাম্মদ ইউনূস গ্রামীণ টেলিকম দুর্নীতির ফিরিস্তি নিয়ে একটি খবর প্রকাশ করে। খবরটির শিরোনাম ছিল “ড. ইউনূসের এক প্রতিষ্ঠানেই হাজার কোটি টাকা কর ফাঁকি”। একই বছরের ২৬শে মে দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিন একই শিরোনামে সেই খবরটি প্রকাশ করেছিল। তবে হঠাৎ করে এ বছরের জুনের মাঝামাঝি সেই খবরটি ফেসবুকে ভাইরাল হলে প্রথমে কালের কন্ঠ ও পরে বাংলাদেশ প্রতিদিন সেগুলো মুছে ফেলে।

দুটি পত্রিকাই বসুন্ধরা গ্রুপের প্রতিষ্ঠান। ৫ই আগস্ট ক্ষমতার পালাবদল হলে অন্যান্য মিডিয়া হাউজের মতো এসব অফিসেও মবের সাহায্যে সম্পাদক থেকে শুরু করে সিনিয়র অনেক সাংবাদিককে সরিয়ে দেয়া হয়। কি ছিল সেই খবরে যা মুছে ফেলতে হলো বা পত্রিকা দুটিকে বাধ্য করলো সরকার? পাঠকদের জন্য সেই খবরটি হুবুহু ছাপানো হলোঃ

ড. ইউনূসের এক প্রতিষ্ঠানেই হাজার কোটি টাকা কর ফাঁকি শিরোনামে কালের কণ্ঠের প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৯৯৭ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে গ্রামীণ টেলিকম তথা গ্রামীণফোনের লাইসেন্স গ্রহণ করেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। লাইসেন্স গ্রহণের আগে তিনি সরকারের কাছে অঙ্গীকার করেন, গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর দরিদ্র মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য গ্রামীণফোনের লাইসেন্স নিতে চান তিনি। 

মুনাফা নয় বরং দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে সেবা দানই হবে এই প্রতিষ্ঠানের মূল লক্ষ্য। এমন অঙ্গীকারের পর অলাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গ্রামীণ টেলিকমকে লাইসেন্স দেয় সরকার। কিন্তু ড. মুহাম্মদ ইউনূস প্রতিষ্ঠানটির মাধ্যমে শুধু নিজের ভাগ্যের পরিবর্তন করেছেন। দেশের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে গ্রামীণফোনের অধিকাংশ শেয়ার বিদেশি কোম্পানির হাতে তুলে দেন। এতে করে শান্তিতে নোবেলজয়ী প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের এক প্রতিষ্ঠানই গ্রামীণ টেলিকম প্রায় ১ হাজার কোটি টাকার কর ফাঁকি দেয়। 

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, ড. ইউনূস দেশের অলাভজনক প্রতিষ্ঠান গ্রামীণ টেলিকম থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা কয়েক হাত ঘুরে সামাজিক ব্যবসার নামে বিদেশে পাচার করেন। শ্রমিক কর্মচারীদের ন্যায্য অধিকার কেড়ে নেওয়ার জন্য আদালতে বিচারাধীন মামলার রায় নিজের পক্ষে নিতে বিচারকসহ দেশের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের ঘুষ দেওয়ার জন্য একটি দালালচক্রের সঙ্গেও চুক্তি করেন। আর ড. ইউনূসের এসব অর্থ পাচার, দুর্নীতি ও অন্যান্য অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড দালিলিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে। বাংলাদেশের অর্থ পাচার প্রতিরোধ আইন এবং দ-বিধি অনুযায়ী এসব কাজ গুরুতর দ-নীয় অপরাধ। সংশ্লিষ্টরা বলছে, এবার তার বিস্ময়কর কর ফাঁকির অপরাধের ঘটনা সবাইকে হতবাক করেছে। কর ফাঁকির ব্যাপকতা, গভীরতা ও অপরাধের অভিনবতা বিবেচনায় এটি বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় কর ফাঁকির ঘটনা হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে।

জানা গেছে, গ্রামীণ টেলিকম বর্তমানে গ্রামীণফোনের ৩৪.২০ শতাংশ শেয়ারের অংশীদার, যার মাধ্যমে গ্রামীণ টেলিকম প্রতি বছর গ্রামীণফোন থেকে হাজার কোটি টাকার ওপর ডিভিডেন্ড পায়। কোম্পানি আইনের ২৮ ধারায় গঠিত এই অলাভজনক কোম্পানির কোনো শেয়ার মূলধন নেই, কোনো ব্যক্তিমালিকানা নেই। আইন অনুযায়ী এর কোনো ডিভিডেন্ট অন্য কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে হস্তান্তরের সুযোগও নেই। অথচ ড. ইউনূস প্রতি বছর গ্রামীণ টেলিকমের হাজার কোটি টাকার ওপর ডিভিডেন্ট সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে কয়েক হাত ঘুরিয়ে সামাজিক ব্যবসার নামে বিদেশে পাচার করে আত্মসাৎ করছেন। যা অর্থ পাচার প্রতিরোধ আইন অনুযায়ী গুরুতর দ-নীয় অপরাধ। 

গ্রামীণ টেলিকম কোম্পানি আইন ১৯৯৪-এর ধারা ২৮ এবং ২৯ এর বিধান লঙ্ঘন করে গ্রামীণ ফোন লিমিটেড থেকে গ্রামীণ কল্যাণকে তার লভ্যাংশ আয়ের ৪২.৬% বিতরণ করে আসছে, যদিও গ্রামীণ কল্যাণ গ্রামীণ ফোন লিমিটেডের শেয়ারহোল্ডার নয়। আইন অনুযায়ী, গ্রামীণ টেলিকমের সমগ্র লভ্যাংশ আয়কে এর আয় হিসেবে বুক করতে হবে এবং সেই অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট আর্থিক বছরের জন্য প্রযোজ্য করপোরেট হারে কর দিতে হবে। কিন্তু তাদের নিরীক্ষিত হিসাব পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, তারা গ্রামীণ টেলিকম থেকে গ্রামীণ কল্যাণকে তাদের লভ্যাংশ আয়ের প্রায় অর্ধেক প্রদান করেছে শুধুমাত্র অগ্রিম আয়কর (এআইটি) ১০-২০% হারে। অথচ আইন অনুযায়ী তাদের জন্য প্রযোজ্য করপোরেট করের হার ছিল ৩৫% থেকে ৩৭.৫% পর্যন্ত।

এই করপোরেট রেট এবং ডিভিডেন্ড ট্যাক্সের পার্থক্য কর ফাঁকি। কারণ গ্রামীণ কল্যাণ প্রচলিত আইন অনুযায়ী কোনোভাবেই গ্রামীণ টেলিকম এর লভ্যাংশ আয়ের অধিকারী নয়। গ্রামীণ টেলিকম শুরু থেকে যে সব কর ফাঁকি দিয়েছে, সেগুলো যোগ করলে এর পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা। এই কর ফাঁকির হিসাব শুধু গ্রামীণ টেলিকমের। ড. ইউনূসের নিয়ন্ত্রিত অন্যান্য কোম্পানি ও প্রতিষ্ঠান এবং তার ব্যক্তিগত আয়করের ক্ষেত্রেও ব্যাপকভাবে কর ফাঁকির ঘটনা অনেকটা স্বাভাবিক নিয়মের মতোই বহু বছর ধরে ঘটেছে। 

ড. ইউনূস নিয়ন্ত্রিত অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলোর কর ফাঁকির ঘটনাগুলো হিসাব করলে এর পরিমাণ দাঁড়াবে বিশাল অঙ্কের। গ্রামীণ টেলিকমের ২৬ বছরের কার্যক্রম চলাকালীন প্রায় ১ হাজার কোটি টাকার কর ফাঁকি দেওয়া হয়। এই দীর্ঘ সময়ে ড. ইউনূস প্রতি বছর শতকরা ১৫ থেকে ২৫ ভাগ পর্যন্ত কর ফাঁকি দিয়ে আসছেন। 

১৯৯৭ সাল থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত প্রতি বছর গ্রামীণ টেলিকমে ড. ইউনূস ২৫% কর ফাঁকি দিয়েছেন। ওই সময়ে কর ছিল ৩৫%, প্রদান করেছিলেন মাত্র ১০%। ২০০৬ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত এই প্রতিষ্ঠানে ড. ইউনূস কর ফাঁকি দিয়েছেন বছরে ২০%। ওই সময়ে কর ছিল ৩৫%, প্রদান করেছিলেন মাত্র ১৫%। ২০০৯ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ড. ইউনূস নিয়ন্ত্রিত গ্রামীণ টেলিকমে প্রতি বছর ১৫% কর ফাঁকি দেওয়া হয়েছে। ওই সময়ের মধ্যে কর ছিল ৩৫%, আর প্রদান করেছিলেন মাত্র ২০%।

এটি লক্ষণীয়, ড. ইউনূস তার কর ফাঁকির বিষয়গুলো ধামাচাপা দিতে দেশের আদালতে বেশ কিছু মামলা ও রিট পিটিশন দায়ের করে রেখেছেন। এসব মামলা ও রিটের উদ্দেশ্য হচ্ছে কর ফাঁকি সংক্রান্ত বিষয়ে ড. ইউনূসের সুবিধা পাওয়া।

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

দ্য ইকোনমিস্টের প্রতিবেদনে ফ্যাসিস্ট ইউনূসের গোমর ফাঁস

1

আমেরিকার খায়েশ মেটাতে বলির পাঁঠা বানানো হচ্ছে বাংলাদেশি সেনা

2

নারীদের নিয়ে কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য দিয়ে ফের আলোচনায় স্বাধীনতাব

3

সংঘর্ষ-গুলি, গ্রেপ্তার ও মৃত্যু: গোপালগঞ্জ কি যুদ্ধ ক্ষেত্র

4

কঠিন মুহুর্তে আবারও বাংলাদেশের পাশে ভারত

5

আমেরিকার হাতে দেশ দেয়ার ষড়যন্ত্রের আরেক ধাপ এগিয়ে গেল ইউন

6

মুদি দোকানে এক মাসের বিদ্যুৎ বিল সাড়ে ১৩ লাখ টাকা!

7

ভিত্তিহীন অভিযোগে হয়রানি: ইউনূস ও দুদকের বিরুদ্ধে টিউলিপের

8

ইউনূস কারো নয়: ক্ষমতার খেলায় এক স্বার্থপর মুখ

9

জঙ্গির আস্ফালন: প্রতিদিন ১১ খুনের ভয়াবহ তাণ্ডব

10

১৭ আগস্ট সিরিজ বোমা হামলা: আওয়ামী লীগ নিধন ও নির্বাচন লুটের

11

ভাঙনের দ্বারপ্রান্তে বাংলাদেশ

12

দেশ কব্জায় আরও এগিয়ে গেল আমেরিকা, ইউনূসের প্রতারণা ফাঁস

13

ইউনূসের জঙ্গি সরকারকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাল শিক্ষার্থীরা

14

উচ্চ সুদহারে ঝুঁকিতে ক্ষুদ্র ও মাঝারি প্রতিষ্ঠান

15

স্বাধীন বাংলাদেশে আবারো 'রাজাকার' স্লোগান, জামায়াত-এনসিপির

16

নারী কেলেঙ্কারি নিয়ে নিশ্চুপ বিতর্কিত মার্কিন নাগরিক আলী রিয়

17

বৈষম্যবিরোধী ও এনসিপির চাঁদার টাকা যাচ্ছে কোথায়, ভাগ পায় কার

18

স্ট্যাটমেন্টে গোঁজামিল দিয়ে জাতিকে বোকা বানানোর চেষ্টায় মাহফ

19

জাতিসংঘের মিশন চালুর সিদ্ধান্ত থেকে দৃষ্টি সরাতেই উত্তরায় বি

20