বিশেষ প্রতিবেদক
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে অবস্থিত শিশু হাসপাতালে গিয়ে গত রোববার দেখা গেল, ভবনের নিচতলায় একটি অংশে একটি আলাদা কক্ষ তৈরি করা হয়েছে। সাজানো-গোছানো কক্ষটির ভেতরটা খালি। খালি কেন, জানতে চাইলে হাসপাতালটির কর্মকর্তারা বলেন, সেখানে শিশুদের জরুরি চিকিৎসা দেওয়ার জন্য ‘হাই ডিপেনডেন্সি ইউনিট (এইচডিইউ)’ স্থাপন করার কথা। সরকারি একটি প্রকল্পের আওতায় কক্ষটি করা হলেও যন্ত্রপাতি আসেনি। ফলে এইচডিইউ চালু করা যায়নি।
শিশু হাসপাতালের পরিচালক মো. মাহবুবুল হক গণমাধ্যমকে বলেন, এইচডিইউর জন্য যন্ত্রপাতি কিনে চালু করতে অন্তত চার কোটি টাকা প্রয়োজন। এত টাকা শিশু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের নেই। এটি চালু থাকলে রোগীদের অনেক উপকারে আসত। এখন অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে আছে।
যে প্রকল্পের আওতায় শিশু হাসপাতালে এইচডিইউ করার কথা ছিল, সেটি নেওয়া হয়েছিল করোনাকালে, মহামারি প্রতিরোধে। নাম ‘কোভিড-১৯ ইমার্জেন্সি রেসপন্স অ্যান্ড প্যানডেমিক প্রিপেয়ার্ডনেস’। ব্যয় ৬ হাজার ৩৮৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে বিশ্বব্যাংক ও চীনের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত এশীয় অবকাঠামো বিনিয়োগ ব্যাংক (এআইআইবি) ঋণ দিয়েছে ৫ হাজার ৯১৪ কোটি টাকা। বাকি ৪৭২ কোটি টাকা দিয়েছে সরকার।
অবশ্য জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় বিশ্বব্যাংক গত ডিসেম্বরে প্রকল্পটি থেকে সরে যায়। বিশ্বব্যাংক সরে যাওয়ার পরপরই সরকার প্রকল্পটি মাঝপথে সমাপ্ত ঘোষণা করে। এতে শিশু হাসপাতালের মতো বিভিন্ন হাসপাতালে স্বাস্থ্য অবকাঠামো অসমাপ্ত অবস্থায় রয়ে গেছে। অনেক ক্ষেত্রেই শুধু স্থাপনা হয়েছে, সরঞ্জাম আসেনি। ফলে বিপুল অর্থ ব্যয়ের পরও মানুষ স্বাস্থ্যসেবা পাচ্ছে না।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) শেখ সায়েদুল হক গণমাধ্যমকে বলেন, যে পর্যন্ত কাজ হয়েছে, বাকিটা অসমাপ্ত রেখে প্রকল্প শেষ করতে হচ্ছে। বাকি টাকা ফেরত যাচ্ছে। এমন সিদ্ধান্তের কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা সরকারের সিদ্ধান্ত।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রকল্পের ৪ হাজার ৭১৯ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। রয়ে গেছে ১ হাজার ৬৬৭ কোটি টাকা। চলতি মাসে (জুন মাস) প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। এর আগেই সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়।
বিশ্বব্যাংক এ প্রকল্প থেকে কেন সরে গেল, তা জানতে চাওয়া হয়েছিল সংস্থাটির ঢাকা কার্যালয়ে। ঢাকায় নিযুক্ত বিশ্বব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত আবাসিক পরিচালক গেইল মার্টিন ৮ মে এক বিবৃতিতে গণমাধ্যমকে বলেন, বিশ্বব্যাংক তাদের অর্থায়নে পরিচালিত যেকোনো প্রকল্পে জালিয়াতি ও দুর্নীতির অভিযোগকে অত্যন্ত গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করে থাকে। বিশ্বব্যাংক যখনই দুর্নীতি ও জালিয়াতির বিষয়ে বিশ্বাসযোগ্য কোনো প্রমাণ পায়, সঙ্গে সঙ্গে সেসব তথ্য সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানো হয়।
এ প্রকল্পের ক্ষেত্রে বিশ্বব্যাংকের নিজস্ব অনুসন্ধানের ফলাফল সরকারকে দেওয়া হয়েছে, যা পরে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) পাঠানো হয়েছে বলে জানান গেইল মার্টিন। তিনি বলেন, প্রকল্পের বাকি কার্যক্রম সম্পন্ন করতে এখন সরকার নিজস্ব অর্থায়ন ব্যবহার করবে। যদিও সরকার নিজস্ব অর্থায়নে প্রকল্পের কাজ শেষ না করেই সমাপ্ত ঘোষণা করেছে।
২০২০ সালের ৮ মার্চ দেশে করোনায় আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। রোগটি যখন ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিল, তখন ঋণসহায়তা নিয়ে এগিয়ে আসে বিশ্বব্যাংক। জরুরিভাবে করোনা মোকাবিলার প্রস্তুতিমূলক প্রকল্পের আওতায় সুরক্ষাসামগ্রী কেনার ব্যবস্থা করা হয়। পাশাপাশি চিকিৎসা সক্ষমতা বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়, যার সুবিধা শুধু করোনাকাল নয়, পরেও পাওয়ার কথা।
মন্তব্য করুন