Insight Desk
প্রকাশ : Jun 27, 2025 ইং
অনলাইন সংস্করণ

বাংলাদেশ কি ইউনুসের নেতৃত্বে এক ‘মব রাষ্ট্রে’ পরিণত হচ্ছে? আসুন এই বিষয়ে পর্যালোচনা করি।

প্রতিবাদী কলম

পার্ট-১:

বাংলাদেশে এখন যেন একটি ছায়া-রাষ্ট্র গড়ে উঠছে—যেখানে আইনের বদলে রাজত্ব করছে জনতার মব। গত দশ মাসে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যে পরিমাণ গণপিটুনি ও মব হিংসা সংঘটিত হয়েছে, তা শুধু একটি সামাজিক ব্যাধি নয়, বরং একটি সাংগঠনিক ও রাজনৈতিক প্রকল্পের প্রকাশ। এই সময়ের মধ্যে কমপক্ষে ১৭৯ জন মানুষ গণপিটুনিতে নিহত হয়েছেন। শুধু এই বছরেই মারা গেছেন ৮৩ জন। প্রতি মাসে গড়ে ১৭টিরও বেশি মব হামলা সংঘটিত হয়েছে।

এই সহিংসতা এতটাই নিয়মিত হয়ে উঠেছে যে কখনো কখনো তা ঘটছে পুলিশের সামনে, এমনকি পুলিশের ওপরই হামলা হচ্ছে। গত দশ মাসে দেশের বিভিন্ন স্থানে ৪৭৭ জন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মব হিংসার শিকার হয়েছেন। বিচারপ্রার্থী বন্দী থেকে শুরু করে রাজনৈতিক কর্মী, সংখ্যালঘু, নারী, সাংবাদিক, লেখক, শিল্পী—কেউই রেহাই পাননি।

এই সহিংসতার মূল ব্যর্থতা বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নীতিহীন নীরবতা ও উদাসীনতায় নিহিত। ড. ইউনুসের নেতৃত্বাধীন সরকার বহু প্রতিশ্রুতি দিলেও বাস্তবে তারা দায়ীদের জবাবদিহির আওতায় আনতে ব্যর্থ। এমনকি কিছু ঘটনায় দেখা গেছে, পুলিশ উপস্থিত থেকেও মবকে প্রতিরোধ করেনি।

তবে এই নৈরাজ্য হঠাৎ করে তৈরি হয়নি। জনতাকে ব্যবহার করে প্রতিশোধমূলক সহিংসতা চালানোর সংস্কৃতি পরিকল্পিতভাবে গড়ে তোলা হয়েছে। SAD, NCP এবং বিএনপি সংশ্লিষ্ট কিছু গোষ্ঠী এই জনতাকে সংগঠিত করে চলেছে। আদালতের ভেতরে বা বাইরে বন্দীদের লক্ষ্য করে মবের সহিংসতা প্রমাণ করে, এটা আর বিচ্ছিন্ন কোনো রাগান্বিত প্রতিক্রিয়া নয়—এটি এখন রাজনৈতিক কৌশলের অংশ।

এই পরিস্থিতিতে সবচেয়ে ভয়াবহ প্রশ্নটি হলো—যখন পুলিশ নিজেই নিরাপদ নয়, তখন সাধারণ মানুষ কোথায় যাবে? এই মুহূর্তে বাংলাদেশ যেন একটি অদৃশ্য সীমানায় দাঁড়িয়ে আছে, যেখানে রাষ্ট্রের নিয়মকানুন অকার্যকর এবং শক্তিশালী মবই এখন নতুন 'আইন'।


পার্ট ২: কারা সংগঠিত করছে এই সহিংস জনতা?

বাংলাদেশে গণপিটুনি এখন আর শুধুই স্বতঃস্ফূর্ত জনরোষ নয়। এটি ক্রমে এক প্রাতিষ্ঠানিক রূপ নিচ্ছে, যেখানে রাজনৈতিক দল, ছাত্র সংগঠন এবং তথাকথিত অধিকারকর্মীদের একটি অংশ যৌথভাবে ‘জনতার ন্যায়বিচার’-এর নামে ভয়ঙ্কর নৃশংসতা সংগঠিত করছে।

এই সহিংসতা আজ আর কেবল গ্রামীণ উত্তেজনার ফল নয়; বরং একটি সাংগঠনিক নেটওয়ার্কের ফল। সবচেয়ে লক্ষণীয় বিষয় হলো, এসব ঘটনার অনেকক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে SAD (বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন), NCP (জাতীয় নাগরিক দল) এবং বিএনপি সংশ্লিষ্ট কিছু চিহ্নিত ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর সক্রিয় ভূমিকা।

আদালতের ভেতরে ও বাইরে যেভাবে পুলিশি পাহারায় থাকা বন্দীদের ওপর মব হামলা চালানো হয়েছে, তা এই গোষ্ঠীগুলোর সাংগঠনিক সক্ষমতা এবং পরিকল্পনার ইঙ্গিত দেয়। অনেক সময় এই হামলায় আইনজীবী, আদালত কর্মচারী, এমনকি ভেতরে প্রবেশ করা সাংবাদিকও সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিলেন।

বিশ্লেষকদের মতে, মবকে ‘নৈতিক জাগরণ’ হিসেবে তুলে ধরা এই গোষ্ঠীগুলোর জন্য একটি রাজনীতিক কৌশল। এটি দুই উদ্দেশ্য পূরণ করে।প্রথমত, ভয়ের পরিবেশ সৃষ্টি করে ভিন্নমত দমন করা যায়। দ্বিতীয়ত, সরকার-প্রশাসনের ব্যর্থতা বা দুর্বলতা কাজে লাগিয়ে নিজেদের রাজনৈতিক অবস্থান জোরালো করা যায়।

এই পরিস্থিতি আরও উদ্বেগজনক যখন দেখা যায়, ইউনুস সরকারের কোনো শীর্ষ পর্যায়ের নেতা এই মব নৃশংসতা নিয়ে প্রকাশ্যে নিন্দা জানান না। বরং কেউ কেউ, ‘গণরোষকে অবিচারের প্রতিবাদ’ হিসেবে তুলে ধরে, এদের কার্যত উৎসাহ দেন। এটি রাষ্ট্রীয় মদদপ্রাপ্ত সহিংসতারই নামান্তর।

একটি সভ্য রাষ্ট্রের জন্য এটা চরম বিপদ সংকেত, যেখানে আইনের বদলে মবের বিচার চলে, এবং রাষ্ট্রনিরাপত্তার বাহিনী নিস্তব্ধ দর্শক হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। এই মুহূর্তে প্রয়োজন সাহসী সত্য উদ্ঘাটন, নৈতিক অবস্থান এবং আন্তর্জাতিক মনোযোগ।


পার্ট ৩: কারা হচ্ছেন মবের প্রধান টার্গেট?

যে রাষ্ট্রে আইনের শাসন দুর্বল, সেখানে জনতার হাতে আইন তুলে নেওয়ার প্রবণতা তৈরি হয়। কিন্তু বাংলাদেশে এই প্রবণতা এখন লক্ষ্যভিত্তিক সহিংসতায় রূপ নিয়েছে—যার পেছনে রয়েছে সুস্পষ্ট রাজনৈতিক কৌশল এবং গোষ্ঠীগত বিদ্বেষ।

গত ১০ মাসে মব সহিংসতায় আক্রান্তদের তালিকা বিশ্লেষণ করলে কয়েকটি শ্রেণি স্পষ্টভাবে উঠে আসে: 

সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়

বহু জায়গায় ধর্মীয় উসকানিকে কেন্দ্র করে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা হয়েছে। মন্দির, দোকান, বাড়িঘর ভাঙচুর ও আগুন দেওয়া হয়েছে। এসব হামলায় উগ্রবাদীদের প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ দেখা গেছে, এবং প্রশাসনের নীরবতা তাদের উৎসাহ জুগিয়েছে।

নারী ও মুক্তচিন্তার মানুষ 

নারীদের পোশাক, মত বা সামাজিক অবস্থানকে কেন্দ্র করে গণপিটুনির শিকার করা হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নারীদের ‘টার্গেট’ করে প্রচার চালিয়ে মব জড়ো করা হয়েছে। একইভাবে প্রগতিশীল ও ধর্মনিরপেক্ষ মতাদর্শের লেখক, শিক্ষক ও শিল্পীরা আক্রমণের শিকার হচ্ছেন।

আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা

পটপরিবর্তনের পরপরই দেখা যায়, যেসব রাজনৈতিক কর্মী সাবেক সরকারের সাথে যুক্ত ছিলেন, তাদের বাড়ি-ঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং এমনকি আদালতে হাজির হওয়ার সময়ও হামলার শিকার করা হয়েছে। এই হামলার নেতৃত্বে SAD ও বিএনপি-ঘনিষ্ঠ আইনজীবী এবং ছাত্র সংগঠনের সদস্যরা ছিল।

পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা

এটি সবচেয়ে উদ্বেগজনক দিক। মব আজ আর শুধু অসহায় জনগণকে টার্গেট করছে না—তারাও পুলিশ সদস্যদের পিটিয়ে আহত করছে। কালের কণ্ঠের রিপোর্ট অনুসারে, গত ১০ মাসে ৪৭৭ জনেরও বেশি পুলিশ সদস্য মবের হাতে আক্রান্ত হয়েছেন। এটি রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার দুর্বলতা প্রকাশ করে।

আদালতে আটক বন্দী ও সংশ্লিষ্ট আইনজীবী

যারা রাজনৈতিক কারণে গ্রেপ্তার হয়েছেন, তাদের অনেককেই আদালতের চত্বরে জনতার হাতে মার খেতে হয়েছে। এ ঘটনার ভয়াবহ দিক হলো, বিচারব্যবস্থার পবিত্র স্থানকেও এই মব মাফিয়ারা রেহাই দিচ্ছে না।

এই নিরবিচারে সহিংসতা কেবল ব্যক্তি নয়, পুরো সমাজব্যবস্থাকে আতঙ্কগ্রস্ত করে তুলছে। জনমনে প্রশ্ন উঠছে—এই দেশ কি এখন ‘আইনের রাজ্য’ না কি ‘জনতার প্রতিশোধের মঞ্চ’?


পার্ট ৪: প্রশাসন কেন নীরব?

বাংলাদেশে গত ১০ মাসে ধারাবাহিক মব সহিংসতার পেছনে সবচেয়ে বড় প্রশ্নটি হলো—প্রশাসন কেন কার্যকর ব্যবস্থা নিচ্ছে না? পুলিশের উপস্থিতিতে হামলা, বিচারালয়ে গণপিটুনি, সংখ্যালঘুদের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেওয়া—এসব ঘটনায় পুলিশ, র‍্যাব কিংবা প্রশাসনের তৎপরতা কোথায়?

এই নীরবতার পেছনে রয়েছে কয়েকটি গভীর রাজনৈতিক ও প্রাতিষ্ঠানিক বাস্তবতা—

ইউনুস সরকারের মৌখিক সহানুভূতি এবং কার্যকর দমনহীনতা 

মুহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিজেকে ‘নিরপেক্ষ’ বলে দাবি করলেও বাস্তবে দেখা যাচ্ছে—উগ্রপন্থীদের হুমকি বা জনতার সহিংসতা বন্ধে তারা কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে না।
সাধারণত সরকারের উচিত জনতার আইন হাতে তুলে নেওয়া প্রতিরোধ করা। কিন্তু ইউনুস সরকার সেই দায় এড়িয়ে যাচ্ছে, যেন এটি তাদের নীতিগত অবস্থান।

রাজনৈতিক শক্তির ছায়া ও প্রভাব

বর্তমান প্রশাসনের মধ্যে SAD আন্দোলনের প্রভাবশালী নেতাদের অবস্থান স্পষ্ট। এই আন্দোলনের ছত্রছায়ায় বিএনপি ও জামায়াতপন্থী নেতাকর্মীরা রাজপথে ও আদালত প্রাঙ্গণে সহিংসতা চালিয়ে যাচ্ছে। ফলে, প্রশাসন তাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে দ্বিধায় পড়ছে—অথবা ইচ্ছা করেই নিষ্ক্রিয় থাকছে।

পুলিশের মনোবল ভেঙে পড়া

৪৭৭ জন পুলিশ সদস্য যদি গত দশ মাসে মব হামলার শিকার হন, তাহলে তার প্রভাব শুধু আহতদের ওপর নয়, পুরো বাহিনীর মনোবলে পড়ে। তারা জানে, রাজনৈতিক ছায়ায় থাকা এই মবদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিলে চাকরি হারানোর ভয় আছে। ফলে অনেকেই ‘প্যাসিভ পলিসিং’-এ আশ্রয় নিচ্ছে।

‘ভয়াবহ নিরপেক্ষতা’র অজুহাতে পক্ষপাত

অন্তবর্তীকালীন সরকার একটি দুর্ভ্রান্ত ধারণা চালু করেছে—সব পক্ষকে ‘সমান দূরত্বে’ রাখা হবে। কিন্তু এই নীতির আড়ালে একটি পক্ষকে (মৌলবাদী ও বিএনপি ঘনিষ্ঠদের) কার্যত দায়মুক্তি দেওয়া হচ্ছে। ফলে তারা অবাধে সহিংসতা চালাচ্ছে এবং প্রশাসন শুধু ‘দেখছে’।

জবাবদিহিতার অভাব

মোবাইল কোর্ট, স্বাধীন তদন্ত বা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির কোনও নজির নেই। ফলে কেউই মনে করছে না যে গণপিটুনি, মন্দির ভাঙচুর, নারীদের হেনস্থা বা পুলিশকে পেটানো কোনো শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

এই পরিস্থিতি নিছক প্রশাসনিক ব্যর্থতা নয়—এটি একটি কাঠামোগত রাজনৈতিক নিষ্ক্রিয়তা ও পক্ষপাতিত্ব, যা বাংলাদেশকে মব শাসিত একটি ঝুঁকিপূর্ণ রাষ্ট্রে রূপান্তর করছে।


পার্ট ৫: কারা সংগঠিত করছে এই মব?

গত ১০ মাসে বাংলাদেশে মব সহিংসতা কেবল স্বতঃস্ফূর্ত জনরোষের বহিঃপ্রকাশ নয়। এটি একটি সুপরিকল্পিত রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক নকশার অংশ, যা ধারাবাহিকভাবে এক নির্দিষ্ট শ্রেণিকে আক্রমণ করছে—সংখ্যালঘু, নারী, সাংবাদিক, পুলিশ, এমনকি বিচারাধীন আসামি।

এই পার্টে আমরা দেখব—কারা এই মব তৈরি করছে, কাদের মদদে এরা এতটা বেপরোয়া হয়েছে, এবং রাষ্ট্রযন্ত্র কীভাবে নীরব দর্শক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় গঠিত “তৌহিদি জনতা” 

বরিশাল, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লা, খুলনা কিংবা খিলক্ষেত—সব জায়গাতেই মবের মধ্যে একটি সাধারণ ধরণ দেখা যায়: তারা “তৌহিদি জনতা” নামে পরিচিত, কিন্তু মূলত এরা জামায়াত ও বিএনপি ঘনিষ্ঠ ধর্মভিত্তিক গোষ্ঠীর মাঠ পর্যায়ের কর্মী। SAD আন্দোলন ও NCP-এর ছত্রছায়ায় এদের মব গঠন, সংগঠিত হামলা ও মিছিল চালাতে দেখা গেছে।

সংঘবদ্ধ অনলাইন ক্যাম্পেইন

“আলো আসবে” নামের SAD-সমর্থিত ফেসবুক ও হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ থেকে আন্দোলন, সহিংসতা ও নিপীড়ন উৎসাহিত করার সরাসরি প্রমাণ রয়েছে। মন্দির ভাঙা, পুলিশের উপর হামলা, কিংবা নারীদের শালীনতা নিয়েও ‘জিহাদি কৌশলে’ মানুষকে উস্কে দেওয়া হচ্ছে।

বিএনপি-সমর্থিত আইনজীবী ও সাংস্কৃতিক কর্মীদের সহায়তা

বিচারাধীন আসামিদের উপর আদালত প্রাঙ্গণে গণপিটুনি কিংবা ‘বিশেষ বিচার’ SAD-ঘনিষ্ঠ আইনজীবী, বিএনপি-ঘনিষ্ঠ সাংবাদিক এবং কথিত সাংস্কৃতিক কর্মীদের সহযোগিতায় ঘটছে। কেউ কেউ এই ঘটনাগুলিকে “গণপ্রতিরোধ” বলেও ব্যাখ্যা করছেন—যা আসলে বিচারবহির্ভূত হত্যা।

প্রশাসনের নির্লিপ্ততা ও আইন প্রয়োগে দ্বৈতনীতি

যেখানে আওয়ামী লীগপন্থী কর্মীরা গ্রেপ্তার হন ফেসবুকে পোস্ট দিলেও, সেখানে মন্দিরে হামলা বা পুলিশকে মারার ভিডিও ভাইরাল হলেও কাউকে ধরছে না পুলিশ। কারণ, এই মবদের নেতৃত্ব দিচ্ছে এমন লোকেরা এখন ‘আত্মপ্রকাশ করেছে’ রাষ্ট্রের শুভাকাঙ্ক্ষী হিসেবে।

‘মব’ কে পুনর্ব্যবহারযোগ্য রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে দেখা হচ্ছে

যখনই রাজনৈতিক সুবিধা প্রয়োজন, তখন এই মব মাঠে নামানো হচ্ছে—একবার সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে, আবার পুলিশ কিংবা সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে। এটি এখন রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণহীন, কিন্তু রাজনৈতিকভাবে ব্যবহারযোগ্য একধরনের ভয়ঙ্কর হাতিয়ার।

এই ধারাবাহিক সহিংসতা কোনও বিচ্ছিন্ন সামাজিক প্রতিক্রিয়া নয়—এটি ইউনুস নেতৃত্বাধীন শাসনব্যবস্থার নীরব সহায়তায় গড়ে ওঠা এক প্রাতিষ্ঠানিক মব শাসনের সূচনা।


পার্ট ৬: একটি শাসনব্যবস্থা যখন বিচারকে প্রতিস্থাপন করে ভয় দিয়ে

বাংলাদেশে গত ১০ মাসের মব সহিংসতা আর বিচ্ছিন্ন জনরোষ নয়। এটি একটি সুপরিকল্পিত, মদদপুষ্ট, রাজনীতিকরণকৃত সামাজিক রূপান্তর—যেখানে ন্যায়বিচার, আইন, এমনকি মানবাধিকারের স্থান দখল করছে ভীতি, দায়মুক্তি ও ‘জনতার বিচার’। এখানে আমরা বুঝে নেওয়ার চেষ্টা করব—এই ভয়াল বাস্তবতা রাষ্ট্র ও গণতন্ত্রের জন্য কী বার্তা বয়ে আনছে।

বিচার ব্যবস্থার স্থান দখল করছে মব

পুলিশের সামনে হামলা, আদালতের গেটে বিচারাধীন আসামির উপর মারধর, নারীদের প্রকাশ্যে লাঞ্ছনা, সংখ্যালঘুদের মন্দিরে আগুন—এসব ঘটনার বিচার হচ্ছে না, বরং “গণরায়” নামক ভ্রান্ত ধারণা দিয়ে ঢেকে ফেলা হচ্ছে। এ যেন রাষ্ট্রের হাতেই বিচারবহির্ভূত বিচারের লাইসেন্স।

রাষ্ট্রের নিরবতা মানে সমর্থন

ইউনুস নেতৃত্বাধীন সরকার ও তার অন্তর্বর্তীকালীন মিত্ররা এসব মবকে দমন তো করেই না, বরং নিরাপদ দূরত্বে দাঁড়িয়ে পর্যবেক্ষণ করে। কখনও কখনও প্রশাসনের নিরবতাই মবকে বৈধতা দিচ্ছে, যা আরও বেশি সহিংসতার দিকে নিয়ে যাচ্ছে।

সুশীল সমাজকে নিশ্চুপ করা হচ্ছে

এই মব শুধুই নিরীহ নাগরিকদের আক্রমণ করছে না—এরা সাংবাদিক, শিক্ষক, নারী অধিকারকর্মী, এমনকি আইনজীবীদেরও লক্ষ্যবস্তু করছে। এর ফলে যারা কথা বলতেন, প্রতিবাদ করতেন, তারাও এখন চুপ। ভয়, হয়রানি ও হুমকি দিয়ে মতপ্রকাশের অধিকার স্তব্ধ করে দেওয়া হচ্ছে।

গণতন্ত্রের ওপর সরাসরি আঘাত

যেখানে আইন, আদালত ও নির্বাচন কমিশন ন্যায়বিচার নিশ্চিত না করে রাজনৈতিক হিসেব-নিকেশে চলবে, সেখানে গণতন্ত্র থাকবে না। থাকবে শাসক ও মবের মধ্যে এক অলিখিত চুক্তি—তুমি ক্ষমতা দাও, আমি দায়মুক্তি দেবো।

জাতীয় নিরাপত্তার প্রশ্নে এক গভীর সংকেত

যে দেশে পুলিশ, সেনা, বিচারপতি, সাংবাদিক—সবাই মবের শিকার হতে পারে, সেই রাষ্ট্র কিভাবে নিজেকে নিরাপদ ভাববে? এটি কেবল সামাজিক বিশৃঙ্খলা নয়—এটি একটি জাতীয় নিরাপত্তা বিপর্যয়ের সূচনা।

“মব” একটি উপসর্গ নয়, এটি আজ বাংলাদেশের নতুন শাসনযন্ত্র 

ইউনুস নেতৃত্বাধীন সরকার যে ভয়াবহ বাস্তবতাকে প্রশ্রয় দিচ্ছে, তা আগামীতে বাংলাদেশের গণতন্ত্র, সামাজিক সংহতি এবং আন্তর্জাতিক মর্যাদার জন্য এক কালো অধ্যায় হয়ে থাকবে।

একটি জাতির ভয়ঙ্কর পরিণতির শুরু হয় তখনই, যখন বিচার আর আদালতের চেয়ে বেশি শক্তিশালী হয়ে ওঠে উন্মত্ত জনতা। আজ বাংলাদেশ সে মোড়েই দাঁড়িয়ে আছে।

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

১৫ আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিলুপ্তির চিন্তা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের

1

এক সময় মানবাধিকারের মুখপাত্র আসদুজ্জামান এখন মবের হোতা?

2

যুক্তরাষ্ট্রের নতুন খেলার মাঠ পার্বত্যাঞ্চল; আলোচনায় চট্টগ্র

3

কারা ও পুলিশ হেফাজতে ২৬ আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীকে হত্যা

4

অভ্যন্তরীণ ফ্যাসিবাদ, দুর্নীতির অভিযোগে এনসিপি ও বৈছাআ থেকে

5

ইউনূসের বক্তব্য যেন ভূতের মুখে রাম নাম

6

তবে কি আরেক পিলখানা হত্যাযজ্ঞ দেখতে যাচ্ছে বাংলাদেশ?

7

স্থানীয় ষড়যন্ত্র ও গোপন মার্কিন অভিযানের ফল ৫ আগস্ট

8

থানায় প্রশ্নপত্রের ট্রাংক খোলা: রাজশাহীতে এইচএসসির একটি প্রশ

9

খলিল-ইউনূসের প্রেস উইংয়ের মিথ্যাচার উন্মোচন করল সেনা সদর

10

ক্যাম্পাসের আশপাশে টহল বাড়াতে সেনাবাহিনীকে চিঠি দেবে ঢাকা বি

11

ইউনূসের আমলে সুইস ব্যাংকে রেকর্ড অর্থ জমা, বেড়েছে ৩৩ গুণ

12

কোটায় অস্ত্রের লাইসেন্স আসিফ মাহমুদের?

13

মুদি দোকানে এক মাসের বিদ্যুৎ বিল সাড়ে ১৩ লাখ টাকা!

14

উপদেষ্টা আসিফের মদদে কুমিল্লায় হিন্দু নারী গণধর্ষণের শিকার!

15

তিন বাহিনীকে নিয়ে জাতির সঙ্গে ইউনুসের প্রেস উইংয়ের মিথ্যাচ

16

মব সন্ত্রাসে কমেছে বিদেশি বিনিয়োগ, অর্থনীতিকে পঙ্গু করার ষড়য

17

হোলি আর্টিজান হামলা ও ৯ বছর পর জঙ্গি নিয়ে বিতর্ক: সরকার কি চ

18

সেনাবাহিনীকে ধ্বংস করতে ইউনূস গংদের নিলনকশা: মুক্তি দেওয়া হচ

19

ষড়যন্ত্রের নীল নকশা ফাঁস: গুজব-মব দিয়ে রাষ্ট্রপতিকে সরাতে চা

20