Insight Desk
প্রকাশ : Jul 6, 2025 ইং
অনলাইন সংস্করণ

ইউনূস-লামিয়া মোর্শেদ সিন্ডিকেটে ধ্বংসের মুখে দেশের শ্রম বাজার

নিজস্ব প্রতিবেদক 

দেশে জনশক্তি রপ্তানিতে একটি সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে, যার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ঘনিষ্ঠ সহচর লামিয়া মোর্শেদ। এই সিন্ডিকেট রাজনৈতিক প্রভাব ও লবিংয়ের মাধ্যমে শ্রমবাজারে একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছে, যা দেশের শ্রম রপ্তানির ভবিষ্যতকে সংকটে ফেলছে।

সম্প্রতি চাঁদপুর ও কুমিল্লার দুই প্রবাসী জানান, কুয়েতে কাজের জন্য দালালদের মাধ্যমে প্রচণ্ড বেশি খরচ করে ভিসা পেতে হয়েছে; সাধারণ খরচের তুলনায় কয়েকগুণ বেশি অর্থ গুনতে হচ্ছে। ২০০৭ থেকে কুয়েতের শ্রমিক ভিসার সংখ্যা অনেক কম ছিল, পরে কিছুটা শিথিল হলেও দালালরা ভিসার দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে। সরকারি হিসেবে কুয়েত শ্রমিক ভিসার খরচ মাত্র আড়াই হাজার টাকার মতো হলেও দালালদের কারণে খরচ ছয় থেকে সাত লাখ টাকা পর্যন্ত উঠছে। বাংলাদেশ দূতাবাস ও প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে।

সাম্প্রতিক সময়ে ড. ইউনূসের মালিকানাধীন ‘গ্রামীণ এমপ্লয়মেন্ট সার্ভিসেস’ জনশক্তি রপ্তানির অনুমোদন পেয়ে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। এই অনুমোদনের পেছনে রাজনৈতিক প্রভাব ও লবিংয়ের অভিযোগ রয়েছে। এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, রাজনৈতিক অস্থিরতা ও সিন্ডিকেটের কারণে দেশের জনশক্তি রপ্তানি প্রায় ৩০ শতাংশ কমে গেছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ শ্রমবাজারে ভারসাম্যহীনতা সৃষ্টি করছে এবং দীর্ঘমেয়াদে দেশের ভাবমূর্তির জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।

সূত্র জানায়, ড. ইউনূস ১০ মাসে ১০ বার বিদেশ সফর করেছেন, কিন্তু এসব সফর দেশের জন্য কতটা লাভজনক হয়েছে তা নিয়ে প্রশ্ন থেকে যায়। সৌদি আরব, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ডসহ কয়েকটি দেশে বাংলাদেশিদের ভিসা বন্ধ হওয়ায় প্রবাসীরা দুর্ভোগে পড়ছেন।

গ্রামীণ এমপ্লয়মেন্ট সার্ভিসেস একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণের হাতিয়ার

ড. ইউনূসের মালিকানাধীন গ্রামীণ এমপ্লয়মেন্ট সার্ভিসেস লিমিটেড (GESL) সম্প্রতি জনশক্তি রপ্তানির অনুমোদন পেয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি ২০০৯ সালে লাইসেন্সের জন্য আবেদন করেছিল, যা বাতিল হয়েছিল। তবে চলতি বছরের জানুয়ারিতে হঠাৎ করেই বিএমইটি থেকে অনুমোদন পান।

এই অনুমোদনের পেছনে রাজনৈতিক প্রভাব ও লবিংয়ের অভিযোগ তোলা হয়েছে, বিশেষ করে ড. ইউনূস ও লামিয়া মোর্শেদের প্রভাব ব্যবহারের প্রসঙ্গে। অভিযোগ রয়েছে, প্রতিষ্ঠানটি সিন্ডিকেট ব্যবসায় জড়িত এবং দেশের অন্যান্য এজেন্সিগুলিকে বাজার থেকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে।

বিএমইটির এক কর্মকর্তা বলেন, “রাজনৈতিক অস্থিরতা, সিন্ডিকেট রাজত্ব এবং প্রভাবশালী মহলের হস্তক্ষেপের কারণে গত এক বছরে জনশক্তি রপ্তানি প্রায় ৩০ শতাংশ কমে গেছে। ইউনূসের ঘনিষ্ঠরা শ্রমবাজারে একক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছে।”

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই প্রবণতা শুধু প্রশাসনিক নয়, অর্থনৈতিক ও নীতিগতভাবে ভয়াবহ। শ্রমবাজারে ভারসাম্যহীনতা সৃষ্টি হচ্ছে এবং রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর উপর উদ্যোক্তাদের আস্থা কমে যাচ্ছে।

অর্থনীতিবিদ ও সমাজ বিশ্লেষকরা আশঙ্কা প্রকাশ করছেন, এই একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ ভবিষ্যতে শ্রমবাজারে বড় ধরনের অস্থিরতা ডেকে আনবে। সরকারি পদ ব্যবহার করে বেসরকারি স্বার্থ চরিতার্থ করার বিষয়টি গভীর উদ্বেগের কারণ।

এক বিশ্লেষক বলেন, “যদি এই সিন্ডিকেটিক নিয়ন্ত্রণ চলতে থাকে, তাহলে জনশক্তি রপ্তানিতে স্বচ্ছতা থাকবে না। ইউনূসের প্রতিষ্ঠানকে প্রশ্ন করার সাহস কেউ দেখাতে পারবে না, কারণ তিনি রাষ্ট্রীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে একটি অপ্রতিরোধ্য ব্যক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত।”

প্রধান উপদেষ্টার বিদেশ সফর ও সরকারের স্বার্থসংশ্লিষ্টতা

ড. মুহাম্মদ ইউনূস ১০ মাসে ১০ বার বিদেশ সফর করেছেন, যা বিশ্বের অনেক শীর্ষ রাষ্ট্রনায়কের চেয়েও বেশি। তবে এসব সফর দেশের জন্য কতটা ফলপ্রসূ হয়েছে, তা প্রশ্নবিদ্ধ। এ সময়ে সৌদি আরবসহ অনেক মধ্যপ্রাচ্যের দেশ, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া ও থাইল্যান্ডের মতো দেশ বাংলাদেশিদের ভিসা বন্ধ করেছে।

ড. ইউনূস দিল্লি থেকে ইউরোপের রাষ্ট্রদূতদের ডেকে পাঠিয়ে বাংলাদেশ থেকে ভিসা ও আনুষঙ্গিক কার্যক্রম চালানোর অনুরোধ করেছিলেন, কিন্তু সাড়া মেলেনি, বরং ইউরোপের ভিসা বন্ধের পথে।

ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে ৬৬৬ কোটি টাকার কর আরোপ হয়েছিল, যা তিনি প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব নেওয়ার পর মওকুফ করিয়ে নেন। একই সময়ে গ্রামীণ ব্যাংকের সরকারি শেয়ার কমানোসহ স্বার্থসংঘাতজনক কিছু কাজ করা হয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসব কাজ একটি নির্বাচিত সরকারের বদলে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার মাধ্যমে হওয়ায় তা যথেষ্ট সমালোচিত।

ড. ইউনূসের প্রতিষ্ঠানগুলো রিক্রুটিং এজেন্সির অনুমোদন পাওয়াসহ একের পর এক বিশেষ সুবিধা পেয়েছে, যা নৈতিক ও প্রশাসনিকভাবে বিতর্কের কারণ।

বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলছেন, একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ ও সিন্ডিকেটের কারণে শ্রমবাজারে স্বচ্ছতা এবং প্রতিযোগিতার অভাব দেখা দিয়েছে। এর ফলে শ্রমিকদের জন্য সুযোগ-সুবিধা কমে যাচ্ছে, খরচ বেড়ে যাচ্ছে এবং দেশের বৈদেশিক কর্মসংস্থান খাতে দীর্ঘমেয়াদে বিরূপ প্রভাব পড়ছে। এমন পরিস্থিতিতে নিয়ন্ত্রণ করা না হলে দেশের শ্রমবাজারে সংকট গড়াবে এবং প্রবাসীদের সুরক্ষা ঝুঁকির মুখে পড়বে। একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ ও প্রভাব খাটানোর প্রবণতা শ্রমবাজারে ভারসাম্যহীনতা তৈরি করছে এবং এর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ভয়াবহ হতে পারে।

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ইউনূসের হাজার কোটি টাকা কর ফাঁকির খবর গায়েব

1

অপকর্ম আড়ালেই ভরসা “গুজব যন্ত্রে”: সক্রিয় ইউনূস গোষ্ঠী

2

ইউনুস গংদের দ্বৈত নাগরিকত্বই দ্বিচারিতার মূল কারণ

3

নসিপি ও বৈষম্যবিরোধী প্ল্যাটফর্মে নিরাপদ নয় নারী নেত্রীরা

4

দলে ফিরলেন শামীম-নাঈম, ওয়ানডেতে প্রথমবার তানভির

5

মব নিয়ে বিএনপির দ্বিচারিতা, থামছে না সন্ত্রাস

6

মব উস্কে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান ধ্বংসের চেষ্টায় ইউনূস গং

7

উপদেষ্টা আসিফের মদদে কুমিল্লায় হিন্দু নারী গণধর্ষণের শিকার!

8

রজার রহস্যে মুখে কুলুপ খলিলুরের, নাগরিকত্ব বিতর্কে দেশজুড়ে

9

ইউনূস সরকারের ছত্রছায়ায় জঙ্গিবাদে শিশু-কিশোররাও, দেশে বাড়ছে

10

কারা ও পুলিশ হেফাজতে ২৬ আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীকে হত্যা

11

এইচএসসি পরীক্ষা পেছানোর দাবিতে চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের সামনে

12

তিন বাহিনীকে নিয়ে জাতির সঙ্গে ইউনুসের প্রেস উইংয়ের মিথ্যাচ

13

সেবা নিতে হয় ঘুষ দিয়ে, মত প্রকাশেও শ্বাসরোধ

14

থানায় প্রশ্নপত্রের ট্রাংক খোলা: রাজশাহীতে এইচএসসির একটি প্রশ

15

সিলেটে প্রকাশ্যেই পাথর লুট করছে বিএনপি নেতারা, প্রশাসনের নীর

16

আন্তর্জাতিক সহায়তা বিতর্কে ইউনুসের অন্তর্বর্তী সরকার

17

কোটায় অস্ত্রের লাইসেন্স আসিফ মাহমুদের?

18

চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট আবার সাধারণ রোগীদেরও হবে কবে?

19

তবে কি আরেক পিলখানা হত্যাযজ্ঞ দেখতে যাচ্ছে বাংলাদেশ?

20