নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রত্যক্ষ মদদে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ ও এর রাজনৈতিক মিত্র সংগঠন ‘জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)’ পরিণত হয়েছে দুর্নীতি, চাঁদাবাজি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের গোপন সিন্ডিকেটে।
‘বৈষম্যের বিরুদ্ধে’ স্লোগান তুলে যে সংগঠন শুরু হয়েছিল শিক্ষার্থী ও সাধারণ নাগরিকের অধিকার রক্ষার দাবিতে—তা আজ নিজেই রূপ নিয়েছে নির্যাতন, ঘুষ বাণিজ্য, তদবির সিন্ডিকেট এবং দখলদার মানসিকতার দুর্গে। রাজধানী থেকে শুরু করে মফস্বল, এমনকি সরকারি দপ্তরেও এই ছাত্র সংগঠনের নেতাদের বিরুদ্ধে উঠে এসেছে টর্চার সেল চালানো, অর্থ আদায়, চাকরি বিক্রির চেষ্টা এবং ভুয়া পরিচয়ে প্রভাব বিস্তারের গুরুতর অভিযোগ।
এতসব অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের পেছনে ছায়ার মতো কাজ করছে একটি বড়সড় পৃষ্ঠপোষকতা। অভিযোগ রয়েছে, ইউনূসপন্থী উপদেষ্টারা এবং ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক মহলের প্রভাব কাজে লাগিয়ে সংগঠনটির অধিকাংশ নেতা–কর্মী এখন ‘দুর্নীতি ও দখলের লাইসেন্সধারী’ হয়ে উঠেছে।
গত ১২ জুন, গাইবান্ধায় সাধারণ শিক্ষার্থীরা ব্যানার নিয়ে রাস্তায় নামে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের চাঁদাবাজির প্রতিবাদে শহরের ডিবি রোডে তারা মানববন্ধন করে।
৮ মে রংপুরে বৈষম্যবিরোধী নেতাদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি-টেন্ডার বাণিজ্যের অভিযোগ তুলে পদত্যাগ করেন সংগঠনের জেলা কমিটির সদস্য মাহমুদুর রহমান লিওন । তিনি অভিযোগ করেন, সংগঠনের জেলা আহ্বায়ক ও সদস্যসচিব চাঁদাবাজি, মামলার তদবির ও সরকারি প্রকল্পে দুর্নীতিতে জড়িত।
টঙ্গীতে এক কারখানায় বিশৃঙ্খলার ঘটনায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক নেতা গ্রেফতার হন। একাধিক ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, তিনি স্থানীয়দের কাছ থেকে ২০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন।
উপদেষ্টার কার্যালয়ে শতকোটি টাকার দুর্নীতি : উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার সাবেক এপিএস মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে শত কোটি টাকার তদবির বাণিজ্যের অভিযোগে তদন্ত করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সম্প্রতি অনুসন্ধানী সাংবাদিক নাজমুস সাকিব প্রকাশিত এক ভিডিওতে জানা যায়, ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ বদলির জন্য এক যুগ্ম সচিবের কাছ থেকে ২০ কোটি টাকা ঘুষ দাবি করেন।
ঢাকার মিরপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একটি অফিসে ব্যবসায়ীদের ধরে এনে মারধর, ব্ল্যাঙ্ক চেকে স্বাক্ষর ও স্টাম্পে সই নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এতে নেতৃত্ব দেন সংগঠনের ঢাকা মহানগর যুগ্ম আহ্বায়ক সাদমান সানজিদ ও রিফাতুল হক শাওন। তাদের সঙ্গে শাহ আলী থানার সদস্যসচিব পারভেজসহ আরও অনেকে জড়িত।
ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন, অভিযুক্তরা নিজেদের এনসিপি আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামের ছোট ভাই পরিচয় দিয়ে দফতরে প্রভাব বিস্তার করে। তাদের ছবি ব্যবহার করে মিরপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। ব্যবসায়ী ও বাসিন্দাদের উপর হামলা, লুটপাট এবং ভয়ভীতি প্রদর্শনের অভিযোগও পাওয়া গেছে।
এছাড়া সাবেক তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামের বিশেষ সহকারী (পিএ) আতিক মোর্শেদের আতিক মোর্শেদের বিরুদ্ধে ১৫০ কোটি টাকা বেহাতের অভিযোগ উঠেছে। নাহিদ ইসলামের পরামর্শেই আতিক মোর্শেদ এসব কাজে জড়িত কি না- এমন প্রশ্ন তুলেছেন গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খাঁন।
ফেনী সিভিল সার্জন অফিসে চাকরি দিতে ১০ লাখ টাকা ঘুষ চাওয়ার অডিও ফাঁস হয়েছে। এতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পরশুরাম উপজেলা সমন্বয়ক নাহিদ রাব্বিকে টাকা দাবি করতে শোনা যায়। কল রেকর্ডিংয়ে বলতে সগীবা যায়, লিখিত পরীক্ষার আগে বৃহস্পতিবারের (১৯ জুন) মধ্যে ৪ লাখ টাকা অগ্রিম দিতে হবে। বাকি টাকা পরীক্ষার পর দিতে হবে।
এই সব ঘটনায় প্রমাণ হয়, “বৈষম্যের বিরুদ্ধে” বলা আন্দোলন আসলে ক্ষমতা, প্রভাব, ও পৃষ্ঠপোষকতার আশ্রয়ে এক ধরনের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক দখলদারিত্বে পরিণত হয়েছে।এতে করে সত্যিকারের আন্দোলন, সাধারণ শিক্ষার্থী ও জনগণের ওপর প্রভাব ফেলছে ভয়াবহভাবে
বিশ্লেষকেরা বলছেন, তথাকথিত বৈষম্যের বিরুদ্ধে কথা বলা সংগঠনটি আদতে রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা ও ক্ষমতার আশ্রয়ে একটি দুর্নীতিবাজ চক্রে পরিণত হয়েছে। সাধারণ ছাত্র ও নাগরিকদের আন্দোলনের ব্যানারে তারা গড়ে তুলেছে অর্থনৈতিক দখলদারিত্ব, ভয়ভীতির সংস্কৃতি ও প্রশাসনিক জবরদখল। প্রশ্ন উঠছে—দলের পেছনে থাকা ড. ইউনূসের মতো মূল পৃষ্ঠপোষকরা এই অপকর্মের দায় এড়াতে পারেন?
মন্তব্য করুন