নিজস্ব প্রতিবেদক
ধর্ষণ, হত্যা, যৌন সহিংসতা ও মানবপাচার—নারী নির্যাতনের বৈচিত্র্যময় রূপে নাড়িয়ে দিচ্ছে সমাজের বিবেক।চলতি বছরের অক্টোবর মাসে সারাদেশে ২৩১ জন নারী ও কন্যাশিশু বিভিন্ন ধরনের সহিংসতা ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে ১৩০ জন প্রাপ্তবয়স্ক নারী এবং ১০১ জন কন্যাশিশু বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ।
সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য প্রকাশ করা হয়। মহিলা পরিষদের কেন্দ্রীয় লিগ্যাল এইড উপপরিষদ দেশের ১৫টি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত সংবাদ বিশ্লেষণ করে এই প্রতিবেদনটি প্রণয়ন করেছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, অক্টোবর মাসে ৬২ নারী ও কন্যাশিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছেন, যার মধ্যে ৪৪ জন একক ধর্ষণের এবং ১৩ জন দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার। এসব ঘটনার মধ্যে ১০ জন ছিলেন অপ্রাপ্তবয়স্ক কন্যাশিশু। আরও পাঁচজন নারী ও শিশু ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে, এবং ১৩ জনের ওপর ধর্ষণের চেষ্টা চালানো হয়।
একই সময়ে ৫৩ নারী ও কন্যাশিশু হত্যার শিকার হন, যার মধ্যে ৪৬ জন নারী এবং সাতজন কন্যাশিশু। হত্যাচেষ্টার শিকার হয়েছেন তিনজন এবং রহস্যজনক মৃত্যু ঘটেছে ২৬ জনের, যাদের মধ্যে নয়জন কন্যাশিশু।
এছাড়া প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, সাতজন নারী ও কন্যাশিশু আত্মহত্যা করেছেন, যার মধ্যে একজনকে আত্মহত্যায় প্ররোচিত করা হয়। যৌন সহিংসতার শিকার হয়েছেন ১২ জন, যার মধ্যে ১১ জন যৌন নিপীড়নের এবং একজন উত্ত্যক্ততার শিকার।
অগ্নিদগ্ধ হয়ে আহত হয়েছেন চারজন নারী, যাদের একজন পরবর্তীতে মারা যান। একজন নারী গৃহকর্মী নির্যাতনের পর নিহত হন। এছাড়া সাত কন্যাশিশু অপহৃত এবং দশজন নারী ও কন্যাশিশু মানবপাচারের শিকার হয়েছেন।
মোট ১৯ নারী ও কন্যাশিশু শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, এবং দুই কন্যাশিশুর বাল্যবিবাহের চেষ্টা চালানো হয়েছে। প্রতিবেদনে আরও দেখা যায়, যৌতুক-সম্পর্কিত সাতটি ঘটনায় পাঁচজন নারীকে হত্যা করা হয় এবং দুইজন নির্যাতনের শিকার হন।
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ তাদের প্রতিবেদনে বলেছে, দেশের সামাজিক নিরাপত্তা কাঠামো এখনো নারীর সুরক্ষায় যথেষ্ট কার্যকর নয়। সংগঠনটি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের কঠোর প্রয়োগ, বিচার প্রক্রিয়ার গতি বৃদ্ধি, এবং সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধির আহ্বান জানিয়েছে।
মহিলা পরিষদের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, সাম্প্রতিক সময়ে বাস, সড়ক ও কর্মক্ষেত্রসহ জনসমাগমস্থলে নারীর প্রতি হয়রানি ও সহিংসতা উদ্বেগজনক হারে বেড়েছে।
তারা মনে করে, সমাজে মানবিক মূল্যবোধ ও দায়বদ্ধতার পুনরুদ্ধার না ঘটলে এই সহিংসতার প্রবণতা কমানো কঠিন হবে।
মন্তব্য করুন