নিজস্ব প্রতিবেদক
২০২৪ সালের ৫ আগস্টের ভয়াবহ সহিংসতা ও পুলিশ হত্যার পর থেকে দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা চরম হতাশা ও মানসিক চাপে রয়েছেন। হামলা, নির্যাতন ও হত্যার শিকার হওয়া সহকর্মীদের কোনো বিচার না হওয়ায় মাঠ পর্যায়ের পুলিশ সদস্যদের মধ্যে ক্ষোভ দিন দিন বেড়ে চলেছে। এমন বাস্তবতার মধ্যে কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) হাবিবুল্লাহ খান সম্প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “পুলিশ হয়ে গেছে এখন বানরের মতো। রিকশাওয়ালার মার খায় পুলিশ, বানরের খাঁচায় বন্দি করে নাচাচ্ছে আমাদের। আমি অন্য চাকরির চিন্তা করছি।”
বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) রাতে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে তিনি এ মন্তব্য করেন। সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে এই মন্তব্য করেন বলে জানা গেছে। ঘটনাটির একটি ভিডিও স্থানীয় সাংবাদিকদের হাতে এসেছে। এর আগে ৭ অক্টোবর কটিয়াদী থানায় পিকনিকের আয়োজন করা হয়। পরদিন খাবার খেয়ে পরিদর্শকসহ অন্তত ১০ জন পুলিশ সদস্য অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে এ বিষয়ে স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হলে সাংবাদিকরা তার খোঁজ নিতে থানায় গেলে তিনি উত্তেজিত প্রতিক্রিয়া জানান।
সাংবাদিকদের উদ্দেশে হাবিবুল্লাহ খান বলেন, “আমি অসুস্থ ছিলাম কখন? যিনি রিপোর্ট করেছেন, তাকে জিজ্ঞেস করুন। থানায় পিকনিক হলে সেটা কি নিউজের বিষয়? আমরা নিজের টাকায় খেয়েছি, কারও কাছ থেকে চাঁদা নেইনি।” এরপর তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে আরও বলেন, “পুলিশ হয়ে গেছে এখন বানরের মতো। রিকশাওয়ালার মার খায় পুলিশ, বানরের খাঁচায় বন্দি করে নাচাচ্ছে আমাদের। আমি অন্য চাকরির চিন্তা করছি।”
এমন বক্তব্যের বিষয়ে কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাছান চৌধুরী বলেন, “এভাবে কথা বলা সমীচীন নয়। কোনো কর্মকর্তা সাংবাদিকদের প্রতি ক্ষোভ দেখাতে পারেন না। বিষয়টি আমি দেখবো, তবে চাকরি করবেন কি করবেন না, সেটা তার ব্যক্তিগত বিষয়।”
৫ আগস্টের পর থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে পুলিশের উপর হামলা ও হত্যার ঘটনার বিচার না হওয়ায় অনেক পুলিশ সদস্যের মধ্যে মনোবল ভেঙে পড়েছে। তারা মনে করছেন, রাষ্ট্র তাদের সুরক্ষা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে প্রাণ হারানো সহকর্মীদের কোনো বিচার না হওয়ায় এখন নিজের নিরাপত্তা নিয়েও উদ্বেগে রয়েছেন অনেকে।
একজন সিনিয়র পুলিশ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “যখন দেখি আমাদের সহকর্মীরা হামলায় মারা যায়, অথচ কোনো বিচার হয় না, তখন মনোবল ভেঙে যায়। যারা রাষ্ট্রকে রক্ষা করে, তারাই আজ নিজেদের নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে।”
কটিয়াদী থানার পিকনিক-পরবর্তী খাদ্য বিষক্রিয়ায় অসুস্থদের মধ্যে ছিলেন হাবিবুল্লাহ খান, এসআই বাছেদ মিয়া, কনস্টেবল উজ্জ্বল মিয়া, কাওসার মিয়া, সাদ্দাম হোসেন, সোহাগ মিয়া, সাথী আক্তার ও মো. ওয়াসিমসহ আরও কয়েকজন। এর মধ্যে ছয়জন হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা শেষে বাড়ি ফিরেছেন।
পুলিশ বাহিনীর এই পরিস্থিতি সামগ্রিকভাবে একটি গভীর সংকটের ইঙ্গিত দিচ্ছে। জনগণের নিরাপত্তার প্রতীক যে বাহিনী, আজ তারাই পরিণত হয়েছে নিরাপত্তাহীনতার শিকার। বিচারহীনতা, রাজনৈতিক চাপ ও অবমূল্যায়ন—সব মিলিয়ে পুলিশ সদস্যদের মানসিক অবস্থা আজ চরম দুঃসহ হয়ে উঠেছে।
মন্তব্য করুন