বিশেষ প্রতিবেদক
বাংলাদেশে মৌলবাদ ও অসহিষ্ণুতার ছায়া যেন এখন সাংস্কৃতিক অঙ্গনেও গভীরভাবে বিস্তার লাভ করছে। দীর্ঘ ১৯ বছর ধরে আয়োজিত সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠীর ঐতিহ্যবাহী ‘শরৎ উৎসব ১৪৩২’ এ বছর পুলিশি বাধা ও প্রশাসনিক আপত্তির কারণে বাতিল হয়ে যায়।
আজ ১০ অক্টোবর সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের বকুলতলায় উৎসবটি অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আগের রাতেই কর্তৃপক্ষ “অনেকের আপত্তি”র কথা উল্লেখ করে ভেন্যু বাতিলের সিদ্ধান্ত জানায়। পরবর্তীতে আয়োজকেরা বিকল্প স্থান হিসেবে গেন্ডারিয়ার কচিকাঁচার মেলা প্রাঙ্গণ বেছে নিলেও, সেখানেও পুলিশ এসে অনুষ্ঠান বন্ধ করে দেয়।
সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠীর সাধারণ সম্পাদক মানজার চৌধুরী সুইট বলেন, “আমরা চারুকলায় ১৯ বছর ধরে শরৎ উৎসব আয়োজন করছি। এটি কোনো রাজনৈতিক অনুষ্ঠান নয়, বরং প্রকৃতির বন্দনা। অথচ এবার ‘ছাত্রলীগ বা যুবলীগের ব্যানারে অনুষ্ঠান হচ্ছে’ এমন সন্দেহে পুলিশ আমাদের অনুষ্ঠান বন্ধ করে দিয়েছে। এটি সাংস্কৃতিক দমন এবং মৌলবাদের নতুন রূপ।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা চারুকলার নিয়ম মেনে ভাড়া ও অনুমতি দুটোই নিয়েছিলাম। কিন্তু হঠাৎ করেই অনুমতি বাতিল করা হয়—এটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। কিছু পক্ষ সচেতনভাবে সাংস্কৃতিক মঞ্চ দখল করতে চাইছে।”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ডিন আজহারুল ইসলাম বলেন, “অনুষ্ঠান নিয়ে শিক্ষার্থীসহ অনেকের আপত্তি ছিল। তাই প্রশাসনিকভাবে ভেন্যু বাতিল করা হয়।” তবে কারা আপত্তি জানিয়েছে, সে বিষয়ে তিনি বিস্তারিত জানাতে পারেননি।
চারুকলার এক শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “মানজার চৌধুরীকে ‘কালচারাল ফ্যাসিস্ট’ আখ্যা দিয়ে অনুষ্ঠান চলাকালীন গোলযোগের আশঙ্কা ছিল। এজন্যই অনুষ্ঠান বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।”
গেন্ডারিয়া থানার এক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, “আমরা খবর পাই যে ছাত্রলীগ বা যুবলীগের ব্যানারে অনুষ্ঠান হচ্ছে। নিরাপত্তার স্বার্থে ফোর্স পাঠানো হয়েছে।”
ওয়ারী বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশিদ বলেন, “গেন্ডারিয়াতে উৎসব আয়োজনের বিষয়ে কোনো পূর্ব অনুমতি নেওয়া হয়নি।”
তবে অনুষ্ঠান বন্ধ হলেও শিল্পীগোষ্ঠীর সদস্যরা জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করেন এবং প্রয়াত সঙ্গীতশিল্পী ফরিদা পারভীনের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করেন।
মানজার চৌধুরী শেষ পর্যন্ত বলেন, “আমি এই দেশের নাগরিক হয়েও মৌলিক সাংস্কৃতিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। এটি কেবল একটি উৎসব নয়—এটি ছিল প্রকৃতির প্রতি ভালোবাসা ও মানবতার প্রকাশ, যা আজ মৌলবাদের চাপে স্তব্ধ হয়ে গেল।”
মন্তব্য করুন