নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছ থেকে মোটা অংকের অর্থ গ্রহণের অভিযোগ উঠেছে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে। বিশ্বস্ত সূত্রের বরাতে জানা গেছে, বিএনপির নেতা ইশরাক হোসেনের নেতৃত্বে যখন ঢাকায় আন্দোলন উত্তাল, তখন লন্ডনে ইউনূসের পক্ষ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ তারেক রহমানের হাতে তুলে দেওয়া হয়।
এই আর্থিক লেনদেনের মধ্যস্থতায় ছিলেন ইউনূস সরকারের শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান এবং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান। তাদের তত্ত্বাবধানেই লন্ডনে একটি গোপন বৈঠকে হয় এই দেনদরবার। বিশ্লেষকদের মতে, এই লেনদেন কেবল একটি অর্থনৈতিক বিষয় নয়— এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে রাজনৈতিক ও জাতীয় নিরাপত্তার গুরুতর প্রশ্ন।
রোহিঙ্গা করিডোর ঘিরে রাজনৈতিক নাটক
রোহিঙ্গাদের জন্য তথাকথিত মানবিক করিডোর এবং নির্বাচনের রোডম্যাপ, চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহারের প্রস্তাব নিয়ে দেশজুড়ে গত কয়েক মাস আন্দোলন করে বিএনপি। দলটি সরাসরি জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমানের পদত্যাগ দাবি করে এবং ঢাকায় বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করে।
এদিকে, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসেবে শপথ পড়ানোর দাবিতে বেশ কয়েকদিন ধরে সড়ক অবরোধ করে আন্দোলন চালিয়ে যান বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেন। সেই আন্দোলনে অন্তর্বর্তী সরকারের দুই ছাত্র উপদেষ্টার পদত্যাগও দাবিকৃত হয়।
যখন আন্দোলন ক্রমেই উত্তপ্ত হয়ে উঠছিল, তখনই পরিস্থিতি ঠাণ্ডা করতে ইউনূস আদিলুর রহমান খান ও ড. খলিলুর রহমানকে লন্ডনে পাঠান। সেখানে অর্থ লেনদেনের মাধ্যমে তারেক রহমানকে আলোচনায় বসতে রাজি করানো হয়। এরপর লন্ডনের হোটেল ডোরচেস্টারে ইউনূস ও তারেকের মধ্যে একটি গোপন বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
গোপন সমঝোতা ও রাজনৈতিক বিতর্ক
এই বৈঠকের পরপরই একটি সংবাদ সম্মেলনে এক মঞ্চে দেখা যায় জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান এবং বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীকে। যা দেখে রাজনৈতিক মহলে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে—তাহলে বিএনপির অবস্থান পরিবর্তনের নেপথ্যে কী?
এর আগেও ইউনূসের সঙ্গে বিএনপির একটি প্রতিনিধিদলের বৈঠক হয়, যেখানে উপস্থিত ছিলেন এমন কিছু ব্যক্তি যাদের নিয়েই বিএনপির ঘোর আপত্তি ছিল। বিশেষ করে স্থানীয় সরকার ও যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার উপস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন তোলে বিএনপির অভ্যন্তরীণ মহলই।
‘হাওয়া ভবনের সংস্কৃতি’ কি আবার ফিরে এলো?
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, তারেক রহমানের ওপর কমিশন খাওয়ার অভিযোগ নতুন নয়। এক সময় তার ‘হাওয়া ভবন’ রাজনৈতিক ক্ষমতার বিকল্প কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল, যেখানে দেশের যে কোনো ব্যবসায় ১০ শতাংশ কমিশন নির্ধারণ করে আদায় করা হতো—এ কথা দেশবাসীর অজানা নয়।
এবারও মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে ইউনূস সরকারের প্রতি নমনীয়তা দেখিয়ে নিজের রাজনৈতিক অবস্থান দৃঢ় করেছেন তারেক। তবে এর পরিণতি হতে পারে ভয়াবহ—বিশেষ করে বিএনপির তৃণমূল নেতা-কর্মীদের জন্য, যারা মাঠে আন্দোলনে অংশ নিচ্ছেন নিঃস্বার্থভাবে।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, "তারেক রহমানের এ ধরনের আর্থিক লেনদেন ও গোপন সমঝোতা বিএনপির রাজনৈতিক আদর্শকেই প্রশ্নবিদ্ধ করছে। ইউনূস সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনের নেতৃত্ব দেওয়া দল যখন তাদের সঙ্গেই গোপনে সমঝোতা করে, তখন তৃণমূলের হতাশ হওয়াটাই স্বাভাবিক। এই লেনদেন বিএনপিকে রাজনৈতিকভাবে আরও দুর্বল ও বিভক্ত করে তুলবে, যা দলটির দীর্ঘমেয়াদী ভবিষ্যতের জন্য ক্ষতিকর।"
মন্তব্য করুন