নিজস্ব প্রতিবেদক
জুলাই গণ–অভ্যুত্থান দিবস উপলক্ষে দেওয়া এক বাণীতে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বলেছেন, “একটি সুখী-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলতে ফ্যাসিবাদের মূলোৎপাটন করে জুলাইয়ের চেতনার পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন করতে হবে।” তিনি আরও বলেন, “জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের পরবর্তী সময়ে রাষ্ট্র একটি ব্যাপকভিত্তিক সংস্কারপ্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে অগ্রসর হচ্ছে। এই সংস্কারের মধ্য দিয়ে গণ–অভ্যুত্থানের আশা-আকাঙ্ক্ষা প্রতিফলিত হবে, প্রকৃত গণতান্ত্রিক উত্তরণের মধ্য দিয়ে গড়ে উঠবে একটি ন্যায় ও সাম্যভিত্তিক নতুন বাংলাদেশ।”
আজ সোমবার অন্তর্বর্তী সরকারে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে রাষ্ট্রপতির এই বাণীটি গণমাধ্যমে পাঠানো হয়।
বাণীতে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, “জুলাই গণ–অভ্যুত্থান ছিল দীর্ঘদিনের বঞ্চনা, দুঃশাসন, দুর্নীতি, লুটপাট, গুম, খুন, অপহরণ, ভোটাধিকার হরণসহ সব ধরনের অত্যাচার, নিপীড়নের বিরুদ্ধে তরুণ প্রজন্ম ও আপামর জনতার ক্ষোভের বিস্ফোরণ। এই বৈষম্যমূলক ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা বিলোপ করে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা, জনগণের ক্ষমতায়ন এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে সুনিশ্চিত করাই ছিল জুলাই অভ্যুত্থানের মূল লক্ষ্য।”
তিনি বলেন, “আমি গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করি জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের সকল শহীদকে, যাঁরা দেশকে স্বৈরাচারমুক্ত করতে গিয়ে সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করেছেন। আমি তাঁদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করি। এই গণ–অভ্যুত্থানে আহত, পঙ্গুত্ব বরণ করা ও দৃষ্টিশক্তি হারানো সকল বীর জুলাই যোদ্ধার ত্যাগ ও অবদানকে আমি শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করি। জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে শহীদদের পরিবার ও আহতদের জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের পবিত্র দায়িত্ব। এই দায়িত্ব পালনে রাষ্ট্র অঙ্গীকারবদ্ধ।”
জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তিতে দেশের মুক্তিকামী ছাত্র-জনতাকে অভিনন্দন জানিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, “বৈষম্যমূলক রাষ্ট্রব্যবস্থা ও ফ্যাসিবাদী অপশাসনের বিরুদ্ধে ছাত্র-শ্রমিক-জনতা সম্মিলিত প্রতিরোধ গড়ে তুলে ২০২৪ সালের আজকের এই দিনে চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করে।”
তবে রাষ্ট্রপতির এই বাণী নিয়ে তৈরি হয়েছে বিতর্ক। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, এটি আসলে রাষ্ট্রপতির নয়। সাধারণত তথ্য মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতির বার্তা প্রকাশ করা হয়ে থাকে। কিন্তু এবারের বাণীটি তৈরি করেছেন তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম, যিনি তাঁর অধীনস্থ কর্মকর্তাদের দিয়ে রাষ্ট্রপতির নামে এই বাণী ছড়িয়েছেন। প্রেস উইংয়ের শফিকুল আলমের নেতৃত্বে এটি বিভিন্ন গণমাধ্যমে পাঠানো হয়।
এ বিষয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন বিশ্লেষকেরা। সাংবাদিক আনিস আলমগীর তাঁর ফেসবুক স্ট্যাটাসে প্রশ্ন তোলেন—“ফ্যাসিবাদের মূল উৎপাটন করে জুলাইয়ের চেতনার পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন করতে হবে”—এমন কথা যে রাষ্ট্রপতি বলেছেন, তা শুনে তিনি ‘বিভ্রান্ত’ হয়েছেন।
আনিস আলমগীর লেখেন, “ফ্যাসিবাদ মানে কী? আর ফ্যাসিবাদী ছিল কারা? যে রাষ্ট্রপতি ফ্যাসিবাদের মূল উৎপাটনের ডাক দিচ্ছেন, তিনি তো সেই আমলেই নির্বাচিত, যে আমলের বিরুদ্ধে ফ্যাসিবাদের অভিযোগ সবচেয়ে বেশি! তাহলে কি তিনি এখন নিজেরাই শিকড় কাটতে নেমেছেন? নাকি শুধু গাছের পাতা ছেঁটে চেতনা রক্ষার অভিনয়? নাকি এটা নতুন সরকারের কাছে ‘প্রগতিশীল’ প্রমাণের মরিয়া প্রচেষ্টা? নাকি তার স্টেটমেন্ট তার অনুমতি ছাড়া প্রকাশ পেয়েছে?”
শেষে তিনি লেখেন, “আমি এখন সত্যিই চিন্তায় পড়ে গেছি—ফ্যাসিবাদ কী, ফ্যাসিবাদী কে, আর চেতনা কার? এইসব চুপ্পু-প্রশ্নের উত্তর যদি কারো কাছে থাকে, প্লিজ কমেন্ট করুন। নইলে আমি হয়তো ফ্যাসিবাদ শব্দটাকেই ভুল বুঝে ফেলব। ‘ফ্যাসিস্ট’, ‘ফ্যাসিস্টের দোসর’ আর ‘ফ্যাসিবাদ’ ড. ইউনূসের আমলে এসে সত্যিই এক তামাশার শব্দমালায় পরিণত হয়েছে। আসল দোসরদের পালাতে দিয়ে তারা দেশজুড়ে এখন দোসর খুঁজছে।”
এ নিয়ে এখনো রাষ্ট্রপতির দপ্তর কিংবা তথ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো ব্যাখ্যা আসেনি।
মন্তব্য করুন