ভাষাসৈনিক, কবি, প্রাবন্ধিক ও রবীন্দ্রবিশেষজ্ঞ আহমদ রফিক আর নেই। বৃহস্পতিবার (২ অক্টোবর) রাত ১০টা ১২ মিনিটে রাজধানীর বারডেম হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৯৬ বছর।
চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে শেষ সময়
আহমদ রফিকের বিশেষ সহকারী মো. রাসেল গণমাধ্যমকে তাঁর মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন। হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, মৃত্যুর মাত্র কয়েক মিনিট আগে তাঁর কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয়। এর আগে বুধবার বিকেল থেকে লাইফ সাপোর্টে ছিলেন তিনি। কিডনির জটিলতা, একাধিকবার মাইল্ড স্ট্রোক ও শারীরিক নানা সমস্যায় তাঁর অবস্থা ক্রমেই খারাপ হচ্ছিল।
জন্ম ও ব্যক্তিজীবন
১৯২৯ সালের ১২ সেপ্টেম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় জন্ম নেওয়া আহমদ রফিক জীবনের বড় অংশ কাটিয়েছেন নিঃসঙ্গভাবে। ২০০৬ সালে স্ত্রীকে হারানোর পর থেকে নিউ ইস্কাটনের ভাড়া বাসায় একাই বসবাস করতেন তিনি। নিঃসন্তান এই মানুষটির একমাত্র ধন ছিল বইয়ের বিপুল ভাণ্ডার।
সাহিত্য-সংস্কৃতিতে অবদান
ভাষা আন্দোলনের অন্যতম ইতিহাসবিদ হিসেবে তিনি পরিচিত ছিলেন। শতাধিক গ্রন্থের রচয়িতা ও সম্পাদক আহমদ রফিক বাংলা সাহিত্যে রেখেছেন অনন্য স্বাক্ষর। একুশে পদক, বাংলা একাডেমি পুরস্কারসহ অসংখ্য সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন তিনি। রবীন্দ্রচর্চায় তাঁর অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে কলকাতার টেগর রিসার্চ ইনস্টিটিউট তাঁকে ‘রবীন্দ্রতত্ত্বাচার্য’ উপাধিতে ভূষিত করে।
শেষ বয়সের লড়াই
২০১৯ সাল থেকে দৃষ্টিশক্তি ক্ষীণ হয়ে যায় তাঁর। অস্ত্রোপচার করেও আশানুরূপ ফল মেলেনি। ২০২১ সালে পা ভেঙে যাওয়ার পর শারীরিক অবস্থার দ্রুত অবনতি ঘটে। ২০২৩ সালে তিনি প্রায় পুরোপুরি দৃষ্টিশক্তি হারান। তবে সাহিত্য, সংস্কৃতি ও চিন্তার আলো তাঁর মধ্যে জ্বলে ছিল শেষ দিন পর্যন্ত।
মৃত্যুতেও দানশীলতা
মৃত্যুর আগে নিজের মরদেহ ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতাল মেডিকেল কলেজে দান করে যান আহমদ রফিক। জীবনের মতোই মৃত্যুতেও জ্ঞানচর্চার আলো ছড়িয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার রেখে গেলেন তিনি।
জাতি হারাল এক ভাষাসৈনিক, কবি ও রবীন্দ্রতত্ত্বাচার্য। তাঁর জীবন ও কর্ম বাঙালি সংস্কৃতি ও ইতিহাসে অনন্তকাল আলো ছড়াবে।
মন্তব্য করুন