নিজস্ব প্রতিবেদক
একসময় চারুকলায় জিনস আর টপস পরে ঘোরা বামপন্থী মেয়েটি এখন সবসময় হিজাব পরে থাকে। দেশ সম্পর্কেও সে বড় বড় কথা বলে। বলা হচ্ছিল, শিবিরের ছাত্রীসংস্থার গুপ্তশাখার বর্ণচোরা কথিত সাধারণ শিক্ষার্থী সমান্তা শারমিনের কথা। যিনি এখন ইউনূসের কিংস পার্টি এনসিপির মুখপাত্র।
শুধু সামান্তাই নয় শিবিরের অনেকেই একসময় গুপ্ত থেকে ছাত্রলীগসহ বিভিন্ন বামপন্থী দলে ঘাপটি মেরে ছিল। এখন সুযোগ বুঝে তারা নিজেদের মুখোশ উন্মোচন করেছে। তাদের দ্বারাই দেশবিরোধী বিভিন্ন কর্মকাণ্ড বাস্তবায়ন করছে জামায়াত।
সামান্তার মতোই আরেক নেত্রী ইনকিলাব মঞ্চের ফাতিমা তাসনিম জুমা। একসময়ের ছাত্রলীগের এই নেত্রী তার ভোল পাল্টে ফেলেছে। তিনি ডাকসু নির্বাচনে শিবিরের প্যানেলে নির্বাচনও করছে। সূত্র বলছে, শিবিরের কর্মীরাই এক সময় মদের বার ও পতিতালয়ে দাপিয়ে বেড়িয়েছে। এখন তারা ধর্মের নাম নিয়ে জনগণকে ধোঁকা দেওয়ার চেষ্টা করছে।
ছাত্র সংসদ নির্বাচনের আগে শিবিরের সাইবার বুলিংয়ের শিকার হচ্ছেন নারীরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে ছাত্রশিবির সমর্থিত ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট প্যানেলের মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন-বিষয়ক সম্পাদক প্রার্থী ফাতিমা তাসনিম জুমা জানিয়েছেন, তিনিও শিবিরের বট আইডির বুলিংয়ের শিকার হয়েছেন।
গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক আবদুল কাদেরও শিবির সম্পর্কে আরও ভয়াবহ তথ্য ফাঁস করেছেন। এক ফেসবুক পোস্টে তিনি লেখেন, ‘হলে থাকার কারণে ছাত্রশিবিরের যে ছেলেগুলো সক্রিয়ভাবে ছাত্রলীগ করত, তারা মূলত আইডেনটিটি ক্রাইসিস (আত্মপরিয়ের সংকট) থেকে উত্তরানোর জন্য কিছু ক্ষেত্রে অতি উৎসাহী কর্মকাণ্ডে জড়াত। সেটা নিজেকে ছাত্রলীগ প্রমাণের দায় থেকে। ছাত্রলীগ যে নিপীড়ন-নির্যাতন চালাত, তারা সেগুলার অংশীদার হতো, লীগের কালচারই চর্চা করত।’
বাংলাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্রীদের ইসলামী ছাত্রী সংস্থায়, বিশেষ করে জামায়াতে ইসলামীর সাথে যুক্ত সংগঠনগুলোতে যোগ দিতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে চাপ প্রয়োগের অভিযোগ দীর্ঘদিন ধরে উত্থাপিত হয়ে আসছে। সম্প্রতি ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আমানউল্লাহ আমান এ বিষয়ে গুরুতর অভিযোগ তুলেছেন। তিনি দাবি করেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) এবং অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রীদের উপর প্রশাসনিক চাপ এবং ভয়ভীতির মাধ্যমে তাদের ইসলামী ছাত্রী সংস্থায় যোগ দিতে বাধ্য করা হচ্ছে।
আমানউল্লাহ আমানের দাবি অনুযায়ী, শিবিরের প্রভাব শুধুমাত্র শিক্ষার্থীদের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কিছু অংশও এতে জড়িত। তিনি আরও দাবি করেছেন যে, শিবিরের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অস্বাভাবিক সংখ্যক সমর্থন বা কমেন্ট তাদের বট আইডির ব্যবহার নির্দেশ করে, যা তাদের প্রকৃত শক্তির সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয়।
আমানউল্লাহ আমানের বক্তব্য অনুযায়ী, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছয়টি হলে ছাত্রীদের কমিটি গঠন না করার পেছনে প্রশাসনের চাপ একটি বড় কারণ। তিনি বলেন, “রাবির রাজনীতি অন্যান্য ক্যাম্পাস থেকে আলাদা। হল প্রভোস্টরা ছাত্রীদের ইসলামী ছাত্রী সংস্থায় যোগ দিতে চাপ দেন। ছাত্রদলে যোগ দিতে চাওয়া ছাত্রীরা ভয়ে আসছে না।” এই অভিযোগের মাধ্যমে তিনি ইঙ্গিত করেছেন যে, হল প্রভোস্টরা সরাসরি বা পরোক্ষভাবে ছাত্রীদের উপর প্রভাব খাটিয়ে তাদের রাজনৈতিক পছন্দকে নিয়ন্ত্রণ করছেন। এই ধরনের চাপের ফলে ছাত্রীরা ছাত্রদলের মতো অন্যান্য ছাত্র সংগঠনে যোগ দিতে ভয় পাচ্ছেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) সাম্প্রতিক একটি ঘটনা এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে গুরুত্বপূর্ণ। ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ইসলামী ছাত্রশিবির সমর্থিত একজন প্রার্থীর বিরুদ্ধে রিট করার কারণে নারী শিক্ষার্থী বিএম ফাহমিদা আলম গণধর্ষণের হুমকির সম্মুখীন হন। অভিযুক্ত শিক্ষার্থী ছাত্রশিবির আলী হুসেন, যিনি ঢাবির সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ২০২০-২০২১ সেশনের ছাত্র। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তদন্ত কমিটি গঠন করে এবং আলী হুসেনকে ছয় মাসের জন্য বহিষ্কার করে। এই ঘটনা প্রমাণ করে যে, ছাত্রীদের উপর হুমকি ও ভয়ভীতির ঘটনা শুধুমাত্র রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় নয়, বরং দেশের শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও ঘটছে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো একই চিত্র দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়েও লক্ষ্য করা যায়। চট্টগ্রাম প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভে দেখা গেছে যে, শিবিরের নেতাকর্মীদের দ্বারা নারী শিক্ষার্থীদের সাইবার বুলিং ও হেনস্থার ঘটনা ঘটছে। এই ধরনের ঘটনাগুলো ছাত্রীদের মানসিক ও সামাজিক নিরাপত্তার উপর গভীর প্রভাব ফেলছে।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে এই ধরনের অভিযোগের তদন্তে স্বচ্ছতা ও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের অভাব লক্ষ্য করা যায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হুমকির ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হলেও, এই ধরনের ঘটনা বারবার ঘটছে, যা প্রশাসনের দায়িত্বশীলতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে।
জামায়াতে ইসলামী-সংশ্লিষ্ট ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র শিবির বহুদিন ধরেই ক্যাম্পাসে সহিংসতা ও ভীতিপ্রদর্শনের অভিযোগে আলোচনায় রয়েছে। প্রকাশ্যে শান্তিপূর্ণ সংগঠনের দাবি করলেও, শিবির এখনও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত করার চেষ্টা এবং উগ্রবাদী মতাদর্শ প্রচারের অভিযোগে অভিযুক্ত।
অভ্যন্তরীণ সূত্র বলছে, জামাতের উদ্দেশ্য ১৯৭১ সালের আগের অবস্থায় দেশকে নিয়ে যাওয়া। এতে তাদের মুক্তিযুদ্ধের প্রতিশোধ নেওয়াও হয়ে যাবে। এর আগে পাকিস্তানি বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমেও সেই কথা জানিয়েছে। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর পাকিস্তানি কূটনৈতিক তৎপরতা সেই ইঙ্গিতই দিচ্ছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, পাকিস্তানি কর্মকররাদের সাম্প্রতিক সফর ও প্রচারণা কেবল কূটনৈতিক নয়; এর পেছনে স্পষ্টভাবে একধরনের ঐতিহাসিক রিভার্স ইঞ্জিনিয়ারিং চলছে, যেখানে বাংলাদেশকে আবারও পাকিস্তানের প্রভাববলয়ে টানার চেষ্টা রয়েছে। আর এর পেছনে রয়েছে জামায়াত। এই দলটির পরিকল্পনাতেই তরুণদের বিভ্রান্ত করতে নানা ধরনের চক্রান্ত চালাচ্ছে শিবিরের কর্মীরা।
এর আগে বিভিন্ন বিরোধী ছাত্রদের রগ কেটে দেওয়ার মাধ্যমে তারা ‘রগকাটা’ শিবির পরিচিতি পায়। পাশাপাশি অস্ত্রধারী ক্যাডার রাজনীতি, পরিকল্পিতভাবে খুন, শিক্ষক হত্যাসহ নানা কারণে আলোচিত এরা। ২০১৩ সালে মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত নেতাদের বাঁচাতে বেপরোয়া হয়ে ওঠে শিবির।
১৯৭৭ সালে প্রতিষ্ঠার পর দেশজুড়ে এত বেশি সহিংসতা আর কখনো করেনি শিবির। প্রকাশ্যে শিবির শান্তিপূর্ণ সংগঠনের দাবি করলেও বাস্তবে তারা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতি ও উগ্রবাদী মতাদর্শ ছড়ানোর অভিযোগে অভিযুক্ত। এসব কারণে বহুবার সন্ত্রাসবাদী সংগঠন হিসেবেও চিহ্নিত হয়েছে শিবির।
মন্তব্য করুন