নিজস্ব প্রতিবেদক
রাষ্ট্রক্ষমতা অবৈধভাবে দখল করা অন্তর্বর্তী সরকারের সময় ঘনিয়ে আসছে—এমন পরিস্থিতিতে আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে সরকারপন্থী জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তার মধ্যে দলটি এখন নানা অভিযোগ ও বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে।
সাম্প্রতিক ঘটনায় এনসিপির বিরুদ্ধে সবচেয়ে তীব্র সমালোচনা শুরু হয় টাঙ্গাইলের বিন্দুবাসিনী সরকারি উচ্চ বালক বিদ্যালয় থেকে। অভিযোগ রয়েছে, ক্লাস চলাকালীন সময় শিক্ষকদের অনুমতি না নিয়ে শিক্ষার্থীদের “জুলাই সমাবেশে” অংশ নিতে বাধ্য করে এনসিপি নেতারা। এ ঘটনায় টাঙ্গাইলে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।
বুধবার (৩০ জুলাই) শিক্ষার্থী ও প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের আয়োজনে শহরে বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়, যা পরে টাঙ্গাইল প্রেস ক্লাবে সমাবেশে রূপ নেয়। সেখানে বক্তারা বলেন, “শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে ছাত্রদের জোর করে রাজনৈতিক কাজে ব্যবহার করায় আমরা ক্ষুব্ধ। জড়িতদের শাস্তি ও জনসম্মুখে ক্ষমা প্রার্থনার দাবি জানাই। অন্যথায় কঠোর আন্দোলন চলবে।”
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই ঘটনা শুধু রাজনৈতিক অনৈতিকতা নয়, বরং শিশু আইন ২০১৩, সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১৭, ও বাংলাদেশ দণ্ডবিধির একাধিক ধারার লঙ্ঘন। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনাও এই ধরনের ঘটনা নিষিদ্ধ।
সূত্র জানায়, আমেরিকা পরিকল্পনার কিছুই এখনও তেমন বাস্তবায়ন করতে পারেনি ইউনূস সরকার। এদিকে নির্বাচনের সময়ও ঘনিয়ে আসছে। তাই দ্রুত ফ্রান্সে ফিরতে চাইছেন ইউনূস।
রাজনৈতিক বিরোধিতার কারণ দেশে এখনও মানবিক করিডোর বাস্তবায়ন হয়নি। সেইসঙ্গে জাতিসংঘের মানবাধিকার অফিস নিয়েও ইউনূসকে হুমকি দিয়ে রেখেছে জামায়াত ছাড়া বাকি ইসলামী দলগুলো। এছাড়া আমেরিকা বিভিন্ন দেশের ওপর আরোপিত শুল্ক কমালেও বাংলাদেশের বেলায় তা বহাল রেখেছে।
অপরদিকে ইউনূসের সমর্থন পাওয়া দল এনসিপিরও এখন বেহাল দশা। দলটি গণঅভ্যুত্থান ও নৈতিক রাজনীতির কথা বলে আত্মপ্রকাশ করা জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) এখন বিতর্কের কেন্দ্রে। চাঁদাবাজি, অর্থ কেলেঙ্কারি এবং অস্বচ্ছ অর্থ ব্যবস্থাপনার অভিযোগে দলটি সমালোচনার মুখে পড়েছে।
এনসিপির জুলাই পদযাত্রা ঘিরে চাঁদা আদায়ের অভিযোগ ওঠে বিভিন্ন জেলায়। দাবি করা হচ্ছে, কিছু জেলায় ৫০ লাখ টাকার বেশি ব্যয়ের কথা বলা হলেও, দলের ঘোষিত ২ কোটি টাকার ‘নাগরিক আমানত’ তহবিল তার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। এতে এনসিপির স্বচ্ছতা ও নৈতিক রাজনীতির দাবির বিরোধিতা দেখা যাচ্ছে।
সবশেষ গুলশান-২ এলাকায় আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য শাম্মী আহমেদের বাসায় চাঁদা চাইতে গিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তিন নেতা পুলিশের হাতে আটক হন।
অন্তর্বর্তী সরকারের ভবিষ্যৎ নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য এক সেমিনারে বলেন, “সরকারের সময় শেষের পথে। এখন এক্সিট পলিসি ও দায়বদ্ধতার প্রকাশ দরকার।” তিনি আরও বলেন, বর্তমান পদক্ষেপগুলো পরবর্তী সরকার কীভাবে গ্রহণ করবে, তা নির্ভর করবে এখনকার স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির ওপর।
বিশ্ব রাজনীতিতেও চাপ বাড়ছে। আমেরিকার পক্ষ থেকে বাংলাদেশে এখনও শুল্ক অব্যাহারার ক্ষেত্রে নমনীয়তা দেখানো হয়নি। মানবিক করিডোর নিয়েও ঐকমত্য না থাকায় ইউনূস সরকার নানামুখী চাপে রয়েছেন বলে সূত্রে জানা গেছে।
শিক্ষার্থীদের রাজনীতিতে ব্যবহার, চাঁদাবাজি, অর্থ কেলেঙ্কারি, এবং দলীয় দুর্বৃত্তায়নের অভিযোগে এনসিপির গ্রহণযোগ্যতা চরম সংকটে পড়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই ধারা চলতে থাকলে সরকার ও তার মিত্রদের জন্য পরিস্থিতি আরও সংকটময় হয়ে উঠবে।
মন্তব্য করুন