বিশেষ প্রতিবেদন
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময়ে কারাগারে মৃত্যুর ঘটনা নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে পুলিশি হেফাজতে থাকা অবস্থায় মারা গেছেন বাড্ডা থানা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও বাড্ডা থানা আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক ওয়াসিকুর রহমান বাবু। রোববার বিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়।
নিহতের পরিবার ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা এই মৃত্যুকে স্বাভাবিক হিসেবে দেখছেন না। তাদের ভাষ্য অনুযায়ী, দীর্ঘ সময় চিকিৎসা না পাওয়া এবং কর্তৃপক্ষের অবহেলার কারণেই ওয়াসিকুর রহমান বাবুর মৃত্যু হয়েছে, যা তারা পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড হিসেবে বিবেচনা করছেন।
দলীয় সূত্র ও প্রত্যক্ষদর্শীদের তথ্যমতে, গত ২৪ সেপ্টেম্বর পান্থপথ এলাকায় একটি মিছিল চলাকালে ওয়াসিকুর রহমান বাবু মারধরের শিকার হন। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে পুলিশে হস্তান্তর করা হয়। এরপর কারাগারে নেওয়া হলেও প্রয়োজনীয় চিকিৎসা নিশ্চিত করা হয়নি বলে জানা গেছে।
ছাত্রলীগের এক সাবেক নেতা বলেন, আহত অবস্থায় গ্রেপ্তার হওয়ার পরও ওয়াসিকুর রহমান বাবুকে কোনো চিকিৎসা দেওয়া হয়নি। জখম শরীর নিয়ে তিনি দিনের পর দিন কারাগারে অসুস্থ অবস্থায় কাটিয়েছেন, কিন্তু সংশ্লিষ্টদের পক্ষ থেকে কার্যকর উদ্যোগ দেখা যায়নি।
আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের তথ্যানুসারে, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে এ পর্যন্ত কারাগারে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের অন্তত ৫৬ জন নেতাকর্মীর মৃত্যু হয়েছে। তাদের মতে, রাজনৈতিক কারণে নির্দিষ্ট দলের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করে কারাগারে অমানবিক পরিস্থিতিতে রাখা হচ্ছে। তাদের বক্তব্য, এটি কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়; বরং ধারাবাহিকভাবে গ্রেপ্তার ও বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়ার একটি প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে ওয়াসিকুর রহমান বাবুর মৃত্যু ঘটেছে।
এ বিষয়ে সহকারী কারা মহাপরিদর্শক জান্নাত উল ফরহাদ জানান, রোববার বিকেলে রিমান্ডে নেওয়ার জন্য পুলিশের কাছে হস্তান্তরের সময় কারাগারের ফটকে ওয়াসিকুর রহমান হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে দ্রুত হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
তবে এই ব্যাখ্যা নিয়েও নানা প্রশ্ন উঠেছে। পর্যবেক্ষকদের মতে, একজন বন্দীর শারীরিক অবস্থা যদি গুরুতর হয়ে থাকে, তাহলে আগেই হাসপাতালে নেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া উচিত ছিল। শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত অপেক্ষা করায় কর্তৃপক্ষের দায়িত্বশীলতা নিয়ে সন্দেহ তৈরি হয়েছে।
ওয়াসিকুর রহমান বাবুর মৃত্যুর খবরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও রাজনৈতিক অঙ্গনে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। নেতাকর্মীরা কারা ব্যবস্থার ভূমিকা পর্যালোচনার দাবি জানিয়ে বলেছেন, এ ধরনের মৃত্যু বন্ধে অবিলম্বে কার্যকর ব্যবস্থা না নেওয়া হলে রাজপথে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
মন্তব্য করুন