নিজস্ব প্রতিনিধি
লক্ষ্মীপুরে ঘটে গেছে এক হৃদয়বিদারক ঘটনা। খাবার দিতে না পারার কষ্টে ক্ষুধার জ্বালায় পাগল হয়ে এক পিতা নিজের শিশুকন্যাকে হত্যা করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, নিহত শিশুটির পিতা পেশায় দিনমজুর। গত কয়েকদিন ধরে কাজ না পেয়ে পরিবার নিয়ে চরম অভাব-অনটনের মধ্যে দিন কাটাচ্ছিলেন তিনি। ঘরে কোনো খাবার ছিল না, ছিল না কোনো সাহায্য বা সহায়তার হাত। সোমবার রাতে ক্ষুধায় কাঁদছিল তার ছোট্ট মেয়েটি। দীর্ঘক্ষণ কাঁদতে থাকায় অসহ্য হয়ে ওঠে পিতার মন। হতাশা ও মানসিক যন্ত্রণার এক পর্যায়ে তিনি নিজের মেয়েকে হত্যা করেন বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।
ঘটনার পর প্রতিবেশীরা ছুটে এসে শিশুটিকে উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। পরে পুলিশ গিয়ে পিতাকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি হত্যার দায় স্বীকার করেছেন বলে জানা গেছে।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, আটক ব্যক্তি দীর্ঘদিন ধরে অর্থকষ্টে ছিলেন। স্ত্রী অসুস্থ, সংসারে খাবার নেই। স্থানীয় বাজারে তিনি প্রায়ই ধার চাইতে যেতেন। কয়েকদিন কাজ না পেয়ে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন তিনি।
এলাকাবাসী জানায়, পরিবারটি দীর্ঘদিন ধরে অনাহারে দিন কাটাচ্ছিল। অনেক সময় প্রতিবেশীরা খাবার দিয়ে সাহায্য করলেও সম্প্রতি কেউ কিছু দিতে পারেননি। স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, “লোকটা খারাপ ছিল না, কিন্তু অভাবই ওকে শেষ করে দিয়েছে।”
এদিকে খবরটি ছড়িয়ে পড়ার পর পুরো এলাকায় নেমে এসেছে গভীর শোক ও ক্ষোভের ছায়া। স্থানীয়রা প্রশাসনের কাছে দাবি জানিয়েছেন, দরিদ্র পরিবারের জন্য দ্রুত খাদ্য সহায়তা ও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করার।
পুলিশ বলছে, মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় একটি হত্যা মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।
দেশজুড়ে বাড়তে থাকা দারিদ্র্য, বেকারত্ব ও অনাহারের প্রেক্ষাপটে লক্ষ্মীপুরের এই ঘটনা নতুন করে নাড়া দিয়েছে সাধারণ মানুষকে।
বর্তমানে গ্রামীণ ও নিম্নআয়ের মানুষ প্রতিদিনই খাদ্য সংকট ও অর্থনৈতিক চাপে ভুগছে। অনেক পরিবারই পর্যাপ্ত খাবার ও চিকিৎসা না পেয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছে।
তাদের মতে, দ্রুত কার্যকর খাদ্য সহায়তা, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও সামাজিক নিরাপত্তা জোরদার না হলে এমন মর্মান্তিক ঘটনা আরও বৃদ্ধি পেতে পারে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়—বরং গোটা দেশের হাজারো নিম্নআয়ের পরিবারের প্রতিদিনের বাস্তবতা। অবৈধ ইউনুস প্রশাসনের অব্যবস্থাপনা, নীতিহীনতা ও অর্থনৈতিক অদক্ষতার কারণে আজ সাধারণ মানুষ মৌলিক চাহিদা থেকেও বঞ্চিত। কেউ ডাস্টবিনের ময়লা খেয়ে মারা যাচ্ছে, কেউ সন্তানকে খাবার দিতে না পেরে জীবন হারাচ্ছে।