নিজস্ব প্রতিবেদক
বাংলাদেশের অর্থনীতিতে নতুন ধাক্কা হিসেবে যুক্ত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক নিষেধাজ্ঞা। এবার দেশটিতে আসা কিছু জাহাজসহ ৫০ জন ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও জাহাজের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে মার্কিন ট্রেজারি বিভাগ। এই তালিকায় সরাসরি কোনো বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠান বা সরকারি সংস্থার নাম না থাকলেও, বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্ত কিছু বাণিজ্যিক চালান ও জাহাজ এ নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়েছে।
ওয়াশিংটন অভিযোগ করেছে, নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকা এসব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান ইরানের তেল ও তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস (এলপিজি) রপ্তানিতে সহায়তা করছিল। মার্কিন ট্রেজারি জানিয়েছে, এদের মধ্যে রয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাত, হংকং, চীন এবং বাংলাদেশগামী বেশ কয়েকটি জাহাজ।
ভেসেল-ট্র্যাকিং তথ্য অনুযায়ী, নিষেধাজ্ঞায় পড়া কিছু জাহাজ বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দরে নোঙর করা রয়েছে। চলতি বছরের ৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এসব জাহাজকে পুনরায় গ্যাস স্থানান্তরের অনুমতি দেওয়া হলেও, নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হওয়ার পর তাদের কার্যক্রম স্থগিত হয়ে গেছে। ফলে বাংলাদেশের জ্বালানি সরবরাহ ও আমদানি বাণিজ্যে প্রভাব পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা।
মার্কিন ট্রেজারি সেক্রেটারি স্কট বেসেন্ট এক বিবৃতিতে বলেন, “আমরা ইরান সরকারের সেই অর্থনৈতিক নেটওয়ার্কগুলো ভেঙে দিচ্ছি, যা তারা সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর অর্থায়নে ব্যবহার করে থাকে। ইরানের এসব কার্যক্রম যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তার জন্য হুমকি।”
প্রতিবেদনে আরও জানানো হয়েছে, অন্তত দুই ডজন “ছায়া বহর” (shadow fleet) জাহাজ নিষেধাজ্ঞার আওতায় এসেছে, যেগুলো ইরানি তেলের উৎস গোপন করে আন্তর্জাতিক বিধিনিষেধ এড়িয়ে চলছিল। পাশাপাশি, চীনে অবস্থিত একটি অপরিশোধিত তেল টার্মিনাল এবং একটি বেসরকারি শোধনাগারকেও এই তালিকায় যুক্ত করা হয়েছে।
এর আগে জানুয়ারি থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত ইরানের তেল ব্যবসার সঙ্গে জড়িত মোট ১৬৬টি জাহাজের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। সর্বশেষ নিষেধাজ্ঞায় চীনের আরও একটি তেল টার্মিনাল এবং একটি বেসরকারি শোধনাগারকে লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে।
জাতিসংঘের তথ্যমতে, চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির ওপর আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল হয়েছে। এতে দেশটির অর্থনীতি আরও চাপে পড়েছে, মুদ্রাস্ফীতি বেড়েছে, খাদ্যের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে এবং স্থানীয় মুদ্রা রিয়ালের মান রেকর্ড পরিমাণে কমে গেছে।
বিশ্লেষকদের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের এসব পদক্ষেপ ইরানের অর্থনৈতিক ভিত্তিকে দুর্বল করার পাশাপাশি মধ্যপ্রাচ্যে তেহরানের প্রভাব সীমিত করার কৌশলের অংশ। তবে, এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে নিষেধাজ্ঞায় যুক্ত জাহাজ ও বাণিজ্যিক লেনদেনের কারণে বাংলাদেশও এখন পরোক্ষভাবে ওয়াশিংটনের নজরদারির আওতায় এসেছে, যা দেশের বাণিজ্যিক ও আমদানি কার্যক্রমে নতুন জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে।
মন্তব্য করুন