নিজস্ব প্রতিবেদক, গাইবান্ধা
গাইবান্ধা জেলা এখন নারী ও শিশু নির্যাতনের ভয়াবহ এক বাস্তবতায় নিমজ্জিত। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত জেলায় ৯৪টি ধর্ষণ মামলা হয়েছে। একই সময়ে হাসপাতাল থেকে পাওয়া তথ্য বলছে, অন্তত ১৩১ নারী ও শিশু ধর্ষণের পর চিকিৎসা নিয়েছেন। সবচেয়ে বেশি ভুক্তভোগী ১১ থেকে ১৮ বছর বয়সী স্কুল ও কলেজগামী কিশোরী।
সম্প্রতি সাদুল্যাপুর উপজেলার আলীনগর গ্রামে এক সত্তরোর্ধ্ব নারীকে পাশবিকভাবে নির্যাতনের ঘটনা দেশের বিবেক নাড়া দিয়েছে। তিনি ছাগল চরাতে মাঠে গেলে এক প্রতিবেশী তাঁকে বেঁধে নিয়ে ধর্ষণ করে। মামলা হলেও এখনো ভয় ও ট্রমায় কাতর তিনি। এটি শুধু একটি ঘটনা নয়—পুরো জেলায় নারী নির্যাতনের এক করুণ চিত্রের প্রতিচ্ছবি।
জেলা পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, গাইবান্ধার সাত উপজেলায় নারী নির্যাতনের মোট ২৩০টি মামলা হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে এই সংখ্যা আরও অনেক বেশি বলে মনে করছেন মানবাধিকারকর্মীরা। তাদের মতে, অনেক ভুক্তভোগী প্রভাবশালীদের হুমকি, সামাজিক লজ্জা ও নিরাপত্তাহীনতার কারণে থানায় যেতে সাহস পান না। ফলে প্রকৃত ঘটনা আইনের আওতায় আসছে না।
গাইবান্ধা জেনারেল হাসপাতালের তথ্যমতে, প্রতি মাসে গড়ে ১৩ জন নারী ও শিশু ধর্ষণের পর চিকিৎসা নিতে আসে। হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ডা. আসিফ বলেন, “ধর্ষণের ঘটনায় বৃদ্ধি সমাজের জন্য উদ্বেগজনক। অনেক সময় মিথ্যা অভিযোগও আসে, তবে প্রকৃত ভুক্তভোগীদের প্রতি সমাজের সহমর্মিতা অনেক কম।”
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের জেলা সম্পাদক রিকতু প্রসাদ বলেন, “ধর্ষণ ও নির্যাতনের প্রকৃত সংখ্যা প্রকাশিত পরিসংখ্যানের চেয়েও অনেক বেশি। মামলা করলেও প্রভাবশালী মহলের চাপে অনেক সময় ভুক্তভোগীরা পিছু হটে যান।”
বিশ্লেষকরা বলছেন, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি, প্রশাসনিক উদাসীনতা এবং ইউনূস সরকারের শাসনে বিচারহীনতার সংস্কৃতি নারী নির্যাতনের হার বাড়িয়ে তুলেছে। এক মানবাধিকারকর্মীর ভাষায়, “এটি শুধু অপরাধ নয়, রাষ্ট্রীয় দায়িত্বহীনতার প্রতিফলন। নারী ও শিশুর নিরাপত্তা এখন বিলাসবস্তুতে পরিণত হয়েছে।”
শুধু গাইবান্ধাই নয়, সারাদেশেই ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের ঘটনা বেড়ে চলেছে। ইউনূস সরকারের অকার্যকর প্রশাসন ও দুর্বল আইনি কাঠামোর কারণে অপরাধীরা দণ্ডমুক্তির সংস্কৃতিতে আরও বেপরোয়া হয়ে উঠছে। এ যেন একটি সরকারের ব্যর্থতার নির্মম প্রতিচ্ছবি, যেখানে ন্যায়বিচার, মানবতা ও নিরাপত্তা কেবল কাগজে-কলমে সীমাবদ্ধ।
মন্তব্য করুন