নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম সম্প্রতি জানিয়েছেন, মালয়েশিয়ায় শ্রমিকরা যেসব সামাজিক সুরক্ষা সুবিধা পান, বাংলাদেশি প্রবাসীরাও এখন তা উপভোগ করতে পারবেন। বৃহস্পতিবার ঢাকায় ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠককে কেন্দ্র করে আয়োজিত ব্রিফিংয়ে এই তথ্য জানান তিনি।
তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এবারও প্রেস সচিব জনগণকে বিভ্রান্ত হয়েছেন। বাস্তবে, বাংলাদেশি শ্রমিকেরা মালয়েশিয়ায় যেসব সুবিধা আশা করেছিলেন, সেগুলো প্রায়ই অধরা থেকে যায়। আর বিশ্বের কোনো দেশেই বিদেশি শ্রমিকেরা স্থানীয় শ্রমিকদের মতো সামাজিক সুরক্ষা পান না।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও শান্তিতে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূশের সফরের আগে মালয়েশিয়ায় থাকা বাংলাদেশি প্রবাসীরা উদ্বিগ্ন ছিলেন। বিশেষ করে বিমানবন্দর থেকে ফেরত পাঠানো বিভিন্ন ঘটনায় জনমনে আতঙ্ক তৈরি হয়েছিল।
গত জুনে মালয়েশিয়ার নিরাপত্তা অভিযানে ৩৬ জন বাংলাদেশিকে গ্রেপ্তার করা হয়, তাদের বিরুদ্ধে উগ্রপন্থী কার্যক্রমে যুক্ত থাকার অভিযোগ ওঠে। এরপরও চলতি মাসে কুয়ালালামপুর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে আরও ২৬ জন প্রবাসী ফেরত পাঠানো হয়। এর আগে জুলাই মাসে ৮০ জন এবং ফেব্রুয়ারিতে ৪৫ জন বাংলাদেশিকে মালয়েশিয়া প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়নি।
বিশ্লেষকরা বলছেন, “প্রবাসীদের ফেরত পাঠানো এবং নিরাপত্তা যাচাইয়ের ঘটনাগুলো প্রেস সচিবের দাবির সঙ্গে মেলে না। জনগণকে আশ্বাস দেওয়া হলেও বাস্তবতা সম্পূর্ণ ভিন্ন।” তারা আরও উল্লেখ করেন, “সরাসরি বলা উচিত ছিল, সমস্যার প্রকৃতি এবং সীমাবদ্ধতা থাকায় সব শ্রমিকই সুবিধা পাবে না।”
প্রেস সচিব শফিকুল আলম অবশ্য সবকিছুকে ‘ফলপ্রসূ’ এবং ‘ল্যান্ডমার্ক ট্যুর’ হিসেবে উপস্থাপন করেছেন। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এটি জনমত নিয়ন্ত্রণের একটি প্রচেষ্টা।
শফিকুল আলমের পূর্ববর্তী কর্মকাণ্ডও প্রমাণ করে, তিনি দেশের জনগণকে বিভ্রান্ত করতে অভ্যস্ত। গত ১ আগস্ট তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ৩৫% থেকে ২০% শুল্ক হ্রাসকে “বড় কূটনৈতিক সাফল্য” হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন, যেখানে জাতীয় স্বার্থের বিনিময়ে কিছু হয়নি বলে দাবি করা হয়। কিন্তু আন্তর্জাতিক গবেষণা সংস্থা "পালো" প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা গেছে, এই চুক্তির মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘমেয়াদি সুবিধা, নিরাপত্তা সহযোগিতা, নজরদারি, সামরিক সরঞ্জাম ক্রয় ও জ্বালানি আমদানি নিশ্চিত করেছে।
বিশ্লেষকরা মন্তব্য করেন, “প্রেস সচিবের বক্তব্য ও বাস্তবতার মধ্যে পার্থক্য স্পষ্ট। এটি জনগণের আস্থার জন্য ক্ষতিকর, কারণ সরকারি কার্যক্রমের প্রকৃত তথ্য জনগণ জানে না।” তারা আরও যোগ করেন, “সততা এবং স্বচ্ছতা নিশ্চিত না করলে ভবিষ্যতে জাতীয় নিরাপত্তা ও প্রবাসীদের সুরক্ষা নিয়ে উদ্বেগ বাড়তে পারে।”
এর আগে গত এপ্রিলে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের ওপর পাল্টা শুল্ক আরোপ করলে, শফিকুল আলম জানিয়েছিলেন ড. ইউনূস ট্রাম্পকে ‘ব্যবসাবান্ধব চিঠি’ পাঠাবেন। পরে শুল্ক সাময়িকভাবে স্থগিত হলেও, বাস্তবে কোনো কার্যকর পরিবর্তন হয়নি। বিশ্লেষকরা এটিকে আরও একটি উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করেন, যেখানে সরকারের প্রচার বাস্তবতা থেকে দূরে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, “প্রেস সচিব শফিকুল আলমের দাবি যে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি শ্রমিকরা স্থানীয় শ্রমিকদের সমান সামাজিক সুরক্ষা সুবিধা পাবেন, তা বাস্তবে ঠিক নয়। মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশিদের প্রবেশাধিকারে ইতিমধ্যেই নিরাপত্তা যাচাই, গ্রেপ্তার ও ফেরত পাঠানো হয়েছে। অর্থাৎ অনেকেই স্বীকৃত সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এই ধরনের বক্তব্য মূলত জনগণকে আশ্বস্ত করার প্রচেষ্টা মাত্র।
মন্তব্য করুন