নিজস্ব প্রতিবেদক
জঙ্গিবাদ ও মব সন্ত্রাসের পর এবার নতুন কৌশল নিয়ে মাঠে নেমেছে জামায়াত-শিবির। ভুয়া মামলার নামে বিভিন্ন ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করানোর জন্য তারা প্রশাসনের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে এবং সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট দিয়ে জনমত গড়ে তুলছে। সম্প্রতি এমন কৌশলে মাই টিভির চেয়ারম্যান নাসিরুদ্দিন সাথী ও তার ছেলে তৌহিদ আফ্রিদি গ্রেপ্তার হয়েছেন। আশঙ্কা করা হচ্ছে, এ ধরনের ঘটনা ভবিষ্যতে আরও বাড়তে পারে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিবির নেতা জানান, তারা বেশ কয়েকদিন ধরে ডিএমপি কমিশনারের ওপর তৌহিদ আফ্রিদিকে গ্রেপ্তারের জন্য চাপ প্রয়োগ করছিল। তৌহিদ বারবার স্থান পরিবর্তন করায় প্রাথমিকভাবে তাকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। অবশেষে গত রোববার (২৪ আগস্ট) তাকে বরিশাল থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
সূত্রমতে, জামায়াত-শিবিরের যে দলটি পূর্বে মব সন্ত্রাসের সঙ্গে জড়িত ছিল, তারা এখন প্রশাসনকে চাপ দিয়ে এবং ফেসবুকে পোস্ট করে নির্দিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে জনমত তৈরি করছে। এই কৌশলের মাধ্যমে তারা পুলিশি হয়রানি ও গ্রেপ্তারের ঘটনা ঘটাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
জামায়াত-শিবিরের নতুন কৌশলের অংশ হিসেবে এবার বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মুক্তিযোদ্ধা ফজলুর রহমানের একটি বক্তব্যকে কেন্দ্র করে এই কাণ্ড ঘটিয়েছে জামায়াত-শিবির। তবে সূত্র বলছে, তাকে গ্রেপ্তারের জন্য চাপ দিলেও এখনও প্রশাসন এ ব্যাপারে রাজি হয়নি।
জুলাই আন্দোলনের অংশগ্রহণকারীদের ‘কালো শক্তি’ আখ্যায়িত করায় ফজলুর রহমানকে গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভে নেমেছেন জামায়াত-শিবির ও তাদের সমর্থকেরা। এরইমধ্যে ফজলুর রহমানকে শোকজের নোটিশ দিয়েছে বিএনপি।
ফজলুর রহমান জানান, মুক্তিযুদ্ধের বিষয়ে তিনি কখনো আপস করবেন না। সম্প্রতি এক টকশোতে দেওয়া তার বক্তব্যের খণ্ডিত অংশ প্রচার হওয়ায় বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি। তার ভাষ্য, ‘যদি আমার বক্তব্যে ভুল থাকে, তাহলে আমাকে বুঝিয়ে বলুন। প্রয়োজনে আমি হাতজোড় করে ক্ষমা চাইব।’
অভিযোগ উঠেছে, নির্বাচনী পরিবেশ অস্থিতিশীল করতে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পরিকল্পিতভাবে উসকানিমূলক ঘটনার জন্ম দেওয়া হচ্ছে। এর পেছনে জামায়াত-হিযবুতের সক্রিয়তা ও ইউনূসের প্রত্যক্ষ নেতৃত্বে একটি বিশৃঙ্খল চক্র কাজ করছে—যারা চায় নির্বাচনকে বিলম্বিত করতে।
গতজুনে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে রবীন্দ্র কাছারিবাড়িতে হামলা ও ব্যাপক ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। রবীন্দ্র কাছারিবাড়ির অডিটোরিয়ামে জানালা-দরজা ভাঙচুর করে তথাকথিত তৌহিদী জনতা নামে জামায়াত ও হিজবুতের নেতাকর্মীরা। স্থানীয়দের দাবি, এই ঘটনাও ছিল সংগঠিত মবের একটি অংশ—যার মূল উদ্দেশ্য পরিবেশ উত্তপ্ত করে প্রশাসনকে কোণঠাসা করা।
সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন স্থানে যে ধরনের জনতা-নির্ভর আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে, তাতে সুশীল সমাজের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। চট্টগ্রামে বাম সংগঠনের এক কর্মসূচিতে প্রকাশ্যে এক নারীকে লাথি মারার ঘটনা এবং পরে অভিযুক্ত শিবির নেতাকে ফুলেল শুভেচ্ছা—এই দুই চিত্রই প্রশ্ন তোলে, এই ‘মব’ সংস্কৃতির উৎস কী?
বিশ্লেষকরা বলছেন, এমন ঘটনায় জনমনে আতঙ্ক ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। আর নির্বাচনের আগে এমন পরিবেশে ভোটাররাও তাদের ভোট ঠিকভাবে দিতে পারবে না। এতে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধই থাকবে।
এই ধরনের কর্মকাণ্ড স্পষ্ট করে যে, একটি সুপরিকল্পিত রাজনৈতিক কৌশল—নির্বাচন ঠেকাতে বা বিলম্বিত করতে সমাজে ভয়, বিভ্রান্তি ও বিশৃঙ্খলা ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই মব সংস্কৃতি ও সহিংসতা যদি এখনই রোধ করা না যায়, তাহলে আসন্ন নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়বে। এমন প্রেক্ষাপটে পুরো জাতি একটি অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে এগোচ্ছে।
বিশ্লেষরা বলছেন, “দেশে এক নতুন ধরনের হাইব্রিড অরাজকতা শুরু হয়েছে। জামায়াত-হিযবুতের পুরনো কৌশল এবং তৃতীয় পক্ষের আর্থিক ও কৌশলগত সহায়তায় দেশকে অন্ধকারের দিকে ঠেলে দেওয়ার চক্রান্ত চলছে। এসব চক্রান্ত রুখতে সাধারণ শিক্ষার্থী ও সচেতন নাগরিকদের অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে।
মন্তব্য করুন