নিজস্ব প্রতিবেদক
শঙ্কাই সত্যি হলো। জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিতে যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়া প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস প্রবাসী বাংলাদেশিদের প্রতিরোধের মুখে পড়েন। স্থানীয় প্রবাসীরা তার সফরের বিরোধিতা করে বাধা দেন। তবে শেষ পর্যন্ত জামায়াতের নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহেরকে সঙ্গে নিয়ে তিনি নিরাপদে সরে যেতে সক্ষম হলেও, বিপাকে পড়েন এনসিপি ও বিএনপির নেতারা।
এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন প্রবাসীদের ডিম নিক্ষেপের শিকার হন। একইসঙ্গে প্রতিবাদকারীদের মুখোমুখি হন এনসিপি নেত্রী তাসনিম জারা ও বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
এই ঘটনায় ড. ইউনূসের স্বার্থপর আচরণের সমালোচনা করেছেন রাজনৈতিক নেতারা। গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান ফেসবুকে লিখেছেন, “রাজনীতিকরা কেন নিরাপত্তা পেল না? কেন স্বার্থপরের মতো তিনি (ইউনূস) ও তার কর্মকর্তারা নিরাপদে সরে গেলেন?”
ডাকসু নির্বাচনে ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেলের সাবেক ভিপি প্রার্থী আবিদুল ইসলাম খান বলেন, রাজনৈতিক নেতাদের অনিরাপদ অবস্থায় রেখে সরকারপ্রধানের বিমানবন্দর ত্যাগ করা লজ্জাজনক।
স্বার্থপর ইউনূস ও সুবিধার ব্লুপ্রিন্ট
ড. ইউনূস ক্ষমতায় আসার পর দেশের রাষ্ট্রীয় কাঠামোয় যে নাটকীয় ও অস্বচ্ছ পরিবর্তন ঘটেছে, সেটি অনেকের কাছে ইতিহাসের এক অন্ধকার অধ্যায় হিসেবে দেখা দিচ্ছে। সমালোচকদের দাবি, তিনি নানা সুবিধা নিজের জন্য নিশ্চিত করেছেন, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য—
১. নিজের সব মামলা অদৃশ্যভাবে খারিজ করে ফেলা। ২. ৬৬৬ কোটি টাকার কর মওকুফ। ৩. আগামী পাঁচ বছরের করও মওকুফ নিশ্চিত। ৪. গ্রামীণ ব্যাংকে সরকারের মালিকানা ২৫% থেকে কমিয়ে ১০%-এ নামানো। ৫. ‘গ্রামীণ ইউনিভার্সিটি’ অনুমোদন। ৬. জনশক্তি রপ্তানিতে একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা। ৭. গ্রামীণ টেলিকমকে ডিজিটাল ওয়ালেট চালুর অনুমতি। ৮. ৭০০ কোটি টাকার সামাজিক নিরাপত্তা তহবিল গ্রামীণ ট্রাস্টে স্থানান্তর। ৯. প্রশাসনে আত্মীয়-ঘনিষ্ঠদের বসানো।
সহযোগীরাও ক্ষুব্ধ
ইউনূসের আচরণে তার ঘনিষ্ঠ সহযোগীরাও হতাশা প্রকাশ করেছেন। তার তথাকথিত ‘গুজব সেল’-এর অন্যতম সদস্য পিনাকী ভট্টাচার্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছেন, “প্রফেসর ইউনূস এভাবেই সবাইকে একা ফেলে চলে যাবেন—এটা লিখে রাখুন।”
সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়ের তার ফেসবুক পোস্টে লেখেন, আয়োজন করে যাদের অতিথি হিসেবে সাথে নিয়ে গেলেন, তাঁদের নিরাপত্তার বিষয়টাও তো আপনার বিবেচনা করা উচিত ছিলো ইউনুস সাহেব। ফ্লাইটের ভেতর এত খাতির যত্ন করে ছবি তুললেন, সেসব আবার ফলাও করে প্রচার করলেন, আর ল্যান্ড করার পর, নিজে চলে গেলেন ভেজা বেড়ালের মতো নিরাপত্তার চাদরে, আর অতিথিদের অরক্ষিত রেখে এমন অপমানজনক পরিস্থিতিতে ফেললেন। ফ্লাইটের ভেতর যেসব সরকারি কর্মকর্তারা এত মাখামাখি করে ফটোসেশন করলেন, আপনারাই বা কোথায় ছিলেন? সম্মানিত ব্যক্তিদের রেখে স্রেফ হাওয়া হয়ে গেলেন? শেইম অন ইউ অল।
এনসিপির মুখপাত্র সামান্তা শারমিন তার ফেসবুক পোস্টে বলেন, ড. ইউনুস নিজের স্বার্থে পার্টিগুলোকে ব্যবহার মারফত ম্যান্ডেট কামাই করে যাচ্ছে। কিন্তু বৈছাআ, জানাক পরর্বতীতে এনসিপির রাজনৈতিক শক্তিকে নিজের পক্ষে শো অফ করে শক্তিশালী হয়েছেন ষোল আনা। কিন্তু নিজের সফরসঙ্গীদের, তার চেয়ে বড় কথা জুলাই অভ্যুত্থানের নেতা আখতার হোসেনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা নূন্যতম আদব না দেখিয়ে তিনি তার দুরভিসন্ধি প্রকাশ করে দিয়েছেন। বিদেশে, প্লেনে, ইউএন বাংলাদেশ বিষয়ক সমঝোতার জায়গা না। এটা আমি দুদিন ধরে বলছি।
জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের সমন্বয়ক আব্দুল কাদের বলেন, ইউনুস সাহেব রাষ্ট্রীয় সফরে সফরসঙ্গী হিসেবে রাজনৈতিক নেতাদের সাথে নিয়ে গেলেন। বিপদের মুখে রাজনৈতিক নেতাদের অরক্ষিত রেখে নিজে নিরাপদে প্রস্থান করলেন। আগামীদিনে এমন আচরণ মোটাদাগে পুনরাবৃত্তি করেন কি না, সেটা নিয়েও যথেষ্ট সন্দেহের উদ্রেক হয়।
দিশেহারা এনসিপি, নির্বাচন বর্জনের হুমকি
এই ঘটনায় দিশেহারা হয়ে পড়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। আখতার হোসেনের ওপর হামলার পর দলটি রাজনৈতিকভাবে ব্যাকফুটে চলে গেছে। দলটির উত্তরাঞ্চলীয় মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেন, “শাপলা প্রতীক ছাড়া ভোট কীভাবে হয় দেখে নেব।” বিশ্লেষকদের মতে, ইউনূসের আচরণ দেখে এনসিপিও এখন তার ওপর আস্থা রাখতে পারছে না। ফলে তারা আবারও ছাত্র আন্দোলন উসকে দেওয়ার পরিকল্পনা করছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, নিউইয়র্কে প্রবাসীদের প্রতিবাদ প্রমাণ করেছে—বাংলাদেশের রাজনীতি কেবল ভেতরেই সীমাবদ্ধ নয়, প্রবাসীরাও এতে সক্রিয়। এটি সরকারের ও রাজনৈতিক নেতাদের আন্তর্জাতিক জনসংযোগে বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে।
তারা আরও বলছেন, আন্তর্জাতিকভাবে সম্মানিত হলেও অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে ড. ইউনূস এখন বিতর্কিত। সফরসঙ্গীদের সঙ্গে স্বার্থপর আচরণ তার নিরপেক্ষ ভাবমূর্তিকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।
মন্তব্য করুন