নিজস্ব প্রতিবেদক
বাংলাদেশের কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ চট্টগ্রাম অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক তৎপরতা বেড়ে যাওয়ায় উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। এটি শুধু বাংলাদেশের ভেতরেই নয় এটি মিয়ানমার ও ভারতের জন্যও মাথাব্যথার কারণ হতে পারে।
সূত্র বলছে, মার্কিন ও মিশরের সামরিক পরিবহণ বিমান বাংলাদেশে নামছে—কোনো অনুমতি ছাড়াই! মার্কিন সেনাদের ইমিগ্রেশন ছাড়াই বাংলাদেশে ঢোকার অনুমতি দেওয়া হচ্ছে। এটি কেবল বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের প্রতি প্রকাশ্য অবমাননা নয়, বরং এক গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, মিশরের কাছে ৪.৬৭ বিলিয়ন ডলারের ক্ষেপণাস্ত্র বিক্রির অনুমোদন দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। আল-জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই অস্ত্র চুক্তিতে রয়েছে ভূমি থেকে আকাশে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র, উন্নত রাডার সিস্টেম এবং লজিস্টিক ও প্রকৌশল সহায়তা। এ পরিস্থিতিতে দেশে আমেরিকা ও মিশর থেকে সামরিক বিমান আসায় দেশের সার্বভৌমত্ব নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
গত রোববার যুক্তরাষ্ট্র বিমানবাহিনীর আধুনিক কৌশলগত পরিবহন বিমান সি-১৩০জে সুপার হারকিউলিস চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। এই বিন্মান সাধারণত জাপানের ইয়োকোটা এয়ারবেস থেকে পরিচালিত হয়। বিষয়টিকে নিছক কাকতালীয় বলা যাচ্ছে না, কারণ ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও মিয়ানমার নিয়ে আমেরিকার তৎপরতার খবর এখন ওপেন সিক্রেট। বলা হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্র ও চীন – উভয়েই মিয়ানমারের বিদ্রোহীদের কাছে টানার চেষ্টা করছে।
মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই ওই এলাকায় যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক উপস্থিতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে, কখনো জরিপের জন্য, কখনো যৌথ মহড়ার জন্য। কয়েক মাস আগে চট্টগ্রামে যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের মধ্যে “অপারেশন প্যাসিফিক এঞ্জেল-২৫” এবং “টাইগার লাইটনিং-২০২৫” নামে দ্বিপক্ষীয় সামরিক মহড়া অনুষ্ঠিত হয়।
সূত্র জানিয়েছে, চট্টগ্রামে আরও একটি যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ যৌথ মহড়ার পরিকল্পনা চলছে এবং গত সপ্তাহে একটি মার্কিন সেনা দল ওই এলাকায় পৌঁছেছে। গত মাসে ঢাকার একটি অভিজাত হোটেলে যুক্তরাষ্ট্র স্পেশাল ফোর্সেস কমান্ড (এয়ারবর্ন)-এর একজন অফিসারের মৃতদেহ পাওয়া যায়। যৌথ মহড়ার বাইরে মার্কিন সেনাদের উপস্থিতি নিয়ে বাংলাদেশের সেনাবাহিনী অস্বস্তি বোধ করছে।
এছাড়া অভিযোগ উঠেছে, যুক্তরাষ্ট্র কথিত বিপ্লবের মাধ্যমে ২০২৪ সালের আগস্টে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করার আন্দোলন সংগঠনে ভূমিকা রেখেছিল। শেখ হাসিনা অভিযোগ করেছিলেন, তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে সেন্টমার্টিন দ্বীপ হস্তান্তর করতে অস্বীকৃতি জানানোয় তাকে ক্ষমতা থেকে সরানো হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০২৪ সালের ২৩ মে এক অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের কিছু অংশ নিয়ে "পূর্ব তিমুরের মতো খ্রিষ্টান দেশ" গঠনের ষড়যন্ত্র চলছে। বাংলাদেশে এয়ার বেজ স্থাপনেরও প্রস্তাব এসেছে, যদিও কোন দেশ প্রস্তাব দিয়েছে, তা তিনি তখন প্রকাশ করেননি।
বাংলাদেশে জাতিসংঘের মানবাধিকার হাই কমিশনারের একটি স্থায়ী মিশন বাংলাদেশে স্থাপনের প্রস্তাব অনুমোদিত হয়েছে, যা নতুন করে রাজনৈতিক বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। সমালোচকদের ভাষায়, এটি বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বে হস্তক্ষেপ এবং “আমেরিকার স্বার্থ বাস্তবায়নের কৌশলগত ধাপ”। অনেকে বলছেন, এটি “দেশকে আমেরিকার হাতে তুলে দেওয়ার ষড়যন্ত্র” এবং ড. ইউনূস সেই চক্রান্তের নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
এ প্রেক্ষাপটে শেখ হাসিনার পূর্ববর্তী বক্তব্য আরও গুরুত্ব পাচ্ছে। কারণ পূর্ব তিমুরে জাতিসংঘের মানবাধিকার অফিস খোলার পরই সেখানে বিভাজন শুরু হয়েছিল। অনেকেই আশঙ্কা করছেন, বাংলাদেশেও সেই রূপান্তর প্রক্রিয়া শুরু হতে পারে।
নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে এই ষড়যন্ত্রে “প্রক্সি নেতা” হিসেবে ব্যবহার করছে মার্কিন প্রশাসন। তাঁকে জাতিসংঘ মহাসচিব করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে পশ্চিমা স্বার্থ রক্ষায় ব্যবহৃত হচ্ছে। এই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে মিয়ানমারের বিদ্রোহীদের সহায়তা, চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড প্রকল্পে বাধা এবং বাংলাদেশে অস্থিরতা সৃষ্টির মতো উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
বাংলাদেশ এখন দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ভূ-রাজনৈতিক প্রতিযোগিতার কেন্দ্রবিন্দুতে। একদিকে বঙ্গোপসাগর, রোহিঙ্গা করিডোর, অন্যদিকে চট্টগ্রাম বন্দর ও কৌশলগত ভূখণ্ড নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র-চীন দ্বন্দ্বে বাংলাদেশ একটি গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, এই মুহূর্তে একটি গ্রহণযোগ্য ও স্বচ্ছ নির্বাচন না হলে দেশের সার্বভৌমত্ব, নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা হুমকির মুখে পড়তে পারে।
মন্তব্য করুন