নিজস্ব প্রতিবেদক
রাজধানীর উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ এলাকায় বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একটি যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় দেশজুড়ে শোক, উদ্বেগ এবং নানা জল্পনা-কল্পনা ছড়িয়ে পড়েছে। ঘটনাটিকে নিছক দুর্ঘটনা হিসেবে না দেখে অনেক বিশ্লেষক এবং গোয়েন্দা সংস্থা একে একটি পরিকল্পিত ঘটনা হিসেবে বিবেচনা করছেন।
ঘটনার পর আজ বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান হাদি সরকারের প্রতি আমেরিকা থেকে যুদ্ধবিমান কেনার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “একবেলা না খাইয়া হইলেও আমরা আমাদের সামরিক খাতকে বিশ্বের শ্রেষ্ঠ সামরিক খাতের একটা বানাইতে চাই। আমাদের অত্যাধুনিক সামরিক সক্ষমতা বাড়াইতে হবে। প্রয়োজনে আমেরিকা ও চীন থেকে ব্যালেন্স করে যুদ্ধবিমান ও নৌ প্রতিরক্ষা উপকরণ কিনতে হবে।”
তবে রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, এ দাবির পেছনে বড় ধরনের বিদেশি প্রভাব কাজ করছে। একটি সূত্র জানিয়েছে, এই দাবির নেপথ্যে রয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস, যিনি আমেরিকার কৌশলগত পরিকল্পনা বাস্তবায়নে শরীফ হাদির মাধ্যমে এই বার্তা দিচ্ছেন।
গোয়েন্দা সূত্রের দাবি, বিমান বিধ্বস্তের ঘটনাটি পরিকল্পিত, যাতে দেশবাসীর দৃষ্টি ঘুরিয়ে দেওয়া যায় ঢাকায় জাতিসংঘ মানবাধিকার হাইকমিশনের মিশন চালুর সিদ্ধান্ত থেকে। এই পরিকল্পনায় যুক্তরাষ্ট্র এবং ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের জড়িত থাকার আশঙ্কা করছে সংশ্লিষ্ট মহল।
বিশ্ব রাজনীতিতে ইসরায়েলের ‘টার্গেট কিলিং’ বা গুপ্তহত্যার ইতিহাস দীর্ঘ। বিশিষ্ট সাংবাদিক রনেন বার্গম্যান তার বই “Rise and Kill First”-এ দাবি করেন, গত ৭০ বছরে ইসরায়েল ২,৭০০ জনেরও বেশি ব্যক্তিকে গুপ্তহত্যা করেছে, যাদের অনেকেই ফিলিস্তিনি আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। বার্গম্যানের মতে, ইয়াসির আরাফাতকেও তেজস্ক্রিয় পদার্থ প্রয়োগ করে হত্যা করা হয়।
২০২৪ সালে ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনাও এ ধরনের ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে, যেখানে ইসরায়েলের প্রযুক্তিগত হস্তক্ষেপ ছিল বলে অভিযোগ রয়েছে। ১৩ জুন ইসরায়েল ‘রাইজিং লায়ন’ নামক এক অভিযানে ইরানের রেভ্যুলিউশনারি গার্ডস করপস (আইআরজিসি) এর উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তা ও পারমাণবিক বিজ্ঞানীদের হত্যা করে। এতে এমনকি ড্রোন হামলা ব্যবহার করে বিজ্ঞানীদের শুধু নিজ ঘরেই হত্যা করা হয়, আশপাশের কিছুই ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বাংলাদেশে জাতিসংঘ মানবাধিকার হাইকমিশনের উপস্থিতি মার্কিন স্বার্থ বাস্তবায়নের সূক্ষ্ম কৌশল। তাদের আশঙ্কা, এই উপস্থিতি দেশের সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে ফেলতে পারে। তাদের ভাষায়, "এটি একটি 'প্রক্সি শাসনব্যবস্থা' কায়েমের কৌশল, যার নেতৃত্বে রয়েছেন ড. ইউনূস ও তাঁর ঘনিষ্ঠ মহল।"
বিশ্লেষকরা আরও মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্র বর্তমানে বাংলাদেশকে দক্ষিণ এশিয়ায় তাদের কৌশলগত কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে চাইছে, যেখানে রোহিঙ্গা করিডোর, বঙ্গোপসাগরে সামরিক দখল এবং চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভকে ঠেকানোই মূল লক্ষ্য।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ বিষয়ে আগে থেকেই সতর্কবার্তা দিয়েছিলেন। ২০২৪ সালের ২৩ মে তিনি বলেন, “বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের কিছু অংশ নিয়ে পূর্ব তিমুরের মতো খ্রিস্টান দেশ গঠনের ষড়যন্ত্র চলছে। বাংলাদেশে এয়ারবেজ বানানোর প্রস্তাবও এসেছে।”
বিশ্লেষকদের মতে, বাংলাদেশের বর্তমান ভূরাজনৈতিক অবস্থান একটি অগ্নিগর্ভ অঞ্চলের মতো। এমন পরিস্থিতিতে একটি অংশগ্রহণমূলক, গ্রহণযোগ্য ও স্বচ্ছ নির্বাচন ছাড়া দেশের স্থিতিশীলতা এবং সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে পড়তে পারে।
মন্তব্য করুন