নিজস্ব প্রতিবেদক
বাংলাদেশে আগামী নির্বাচন যদি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ছাড়া অনুষ্ঠিত হয়, তাহলে নির্বাচনের স্বচ্ছতা ও বৈধতা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন দেখা দিতে পারে। নির্বাচনের মূল উদ্দেশ্য হলো গণতান্ত্রিক শাসনের ভিত্তি গঠন করা, দেশের নাগরিকদের তাদের প্রতিনিধি বেছে নেওয়ার সুযোগ দেওয়া, এবং নির্বাচিত সরকারকে ভোটারের কাছে জবাবদিহি করা।
তবে দেশের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অংশ আওয়ামী লীগকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ থেকে বঞ্চিত বা নিষিদ্ধ করলে নির্বাচনের বৈধতা ও স্বচ্ছতা নিয়ে গুরুতর উদ্বেগ তৈরি হতে পারে। ইন্টারিম সরকার আওয়ামী লীগের কার্যক্রম ২০০৯ সালের অ্যান্টি-টারোরিজম আইন অনুযায়ী নিষিদ্ধ করেছে এবং নির্বাচন কমিশন দলটির নিবন্ধন বাতিল করেছে। এছাড়া আইন ও নির্বাচনী নিয়মে পরিবর্তন আনা হয়েছে যাতে দলটির নেতা ও কর্মীরা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবেও অংশ নিতে না পারে।
জুলাই-আগস্ট ২০২৪ সালের সহিংসতার ঘটনায় আওয়ামী লীগের শত শত কর্মী ও সমর্থকের বিরুদ্ধে ব্যাপকভাবে মামলা দেওয়া হয়েছে। যার মধ্যে হাজার হাজার মানুষ কয়েক মাস ধরে জামিন ছাড়া কারাগারে রয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দলের প্রতি সমর্থন প্রকাশ বা মিছিল করার জন্যও শত শত মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে নির্বাচন হলে নানা ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। আওয়ামী লীগ ছাড়া নির্বাচন হলে ভোটারের বিকল্প সীমিত হয়ে যাবে। আওয়ামী লীগের মতবাদ সমর্থনকারীদের যথাযথ প্রতিনিধিত্ব থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। গত কয়েকটি নির্বাচনের তথ্য বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, আওয়ামী লীগ ও তার মিত্ররা বাংলাদেশে প্রায় ৩৫–৪০% ভোটের সমর্থন রাখে।
আওয়ামী লীগ ছাড়া নির্বাচন হলে রাজনৈতিক প্রতিযোগিতা হ্রাস পাবে। আওয়ামী লীগের নিষিদ্ধ হওয়ার ফলে সরকারের মিত্র রাজনৈতিক দলগুলো ( এনসিপি, বিএনপি,জামায়াত) অযৌক্তিক সুবিধা পাচ্ছে। সম্প্রতি ডাকসু নির্বাচন এই অসমতা স্পষ্টভাবে প্রমাণ করেছে।
আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণে বাধা সৃষ্টি হলে সরকারের অগণতান্ত্রিক ও স্বৈরাচারী হিসেবে প্রতীয়মান হবে, যা নির্বাচনের প্রতি আস্থা ক্ষুণ্ণ করছে। এছাড়া প্রধান রাজনৈতিক দলকে বঞ্চিত করে ভোট হলে নির্বাচনের ফলাফল ও সরকারের বৈধতা প্রশ্নবিদ্ধ হবে। এতে ভবিষ্যতে ভোট বর্জন, প্রতিবাদ বা নাগরিক অশান্তি দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা আছে।
উল্লেখ্য যে, আওয়ামী লীগকে জোরপূর্বক নির্বাচন প্রক্রিয়ার বাইরে রাখা হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক, অন্যান্য সরকার ও মানবাধিকার সংস্থা নির্বাচনকে অন্যায় বা অসংগত হিসেবে দেখার সম্ভাবনা রয়েছে, যা কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ককেও প্রভাবিত করতে পারে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, যদি বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা স্বাভাবিক করতে হলে আগামী জাতীয় নির্বাচন হতে হবে সত্যিকার অর্থে স্বাধীন, স্বচ্ছ, অংশগ্রহণমূলক ও বৈধ। এজন্য প্রতিটি রাজনৈতিক দলকে নির্ভয়ভাবে প্রচার চালানো, জনমত গড়া ও নির্বাচনে অংশগ্রহণের পূর্ণ সুযোগ দিতে হবে।
মন্তব্য করুন