নিজস্ব প্রতিবেদক
চীনের সহায়তায় তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে চায় বাংলাদেশ। এ জন্য দেশটির কাছে ঋণও চেয়েছে ঢাকা। আর এ প্রকল্পটিতে বেইজিংয়েরও যে তীব্র আগ্রহ রয়েছে, তা পররাষ্ট্র সচিব আসাদ আলম সিয়ামকে জানিয়েছেন ঢাকায় চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন। সোমবার সকালে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে ঘণ্টাব্যপী বৈঠক করেন চীনের রাষ্ট্রদূত।
সূত্র বলছে, এ প্রকল্পের মাধ্যমে মূলত ভারতকে উস্কানি দিচ্ছে মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকার। তারা চাইছে, ভারতের সঙ্গে একটি যুদ্ধ বাঁধাতে। এতে করে লাভবান হবে তাদের পশ্চিমা মিত্র। বিপাকে পড়বে দেশের জনগণ। ঝুঁকিতে পড়বে দেশের সার্বভৌমত্ব।
বৈঠক সূত্র জানায়, তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে চীনের কাছে প্রায় ৫৫ কোটি ডলার ঋণ চেয়েছে বাংলাদেশ। আর এ ঋণের বিষয়েও ইতিবাচক দেশটি। তার পরিপ্রেক্ষিতে এ প্রকল্পটির বিষয়ে চীন যে তীব্র আগ্রহী, তা সচিবকে জানিয়েছেন রাষ্ট্রদূত। বাংলাদেশও বিষয়টি ইতিবাচকভাবে নিয়েছে।
সূত্র জানায়, ইউক্রেনকে উস্কানি দিয়ে পশ্চিমারা রাশিয়াকে যুদ্ধে নামিয়েছে। ঠিক একইভাবে বাংলাদেশকেও ভারতের সঙ্গে যুদ্ধে নামানোর পরিকল্পনা করা হচ্ছে। এতে আমেরিকার এই অঞ্চলে প্রবেশ আরও সহজতর হবে। সেইসঙ্গে দেশের ক্ষয়ক্ষতিও ব্যাপক হওয়ার শঙ্কা রয়েছে।
২০২৪ সালের ১৪ জুলাই এক সংবাদ সম্মেলনে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানিয়েছিলেন তিনি ভারতের সঙ্গে তিস্তা প্রকল্প চুক্তি করতে আগ্রহী। এর কারণ হিসেবে তিনি বলেছিলেন, “কারণ তিস্তার পানিটা ইন্ডিয়াই আটকে রেখেছে, কাজেই তাদের কাছ থেকে আমাদের যদি আদায় করতে হয়, প্রজেক্টের কাজ তাদেরই করা উচিত।
তিস্তা প্রকল্পের প্রথম পর্যায় বাস্তবায়নে ব্যয় হবে ৭৫ কোটি ডলার। এর মধ্যে চীন থেকে ঋণ চাওয়া হয়েছে ৫৫ কোটি ডলার। বাকিটা করা হবে সরকারি অর্থায়নে। ২০২৬ সালে এ প্রকল্পের কাজ শুরু করে ২০২৯ সালে শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি উন্নয়ন উদ্যোগ, কারণ এর মাধ্যমে নদী খনন, সেচ, কৃষি ও জনজীবনে সরাসরি সুফল আসবে। তবে অর্থায়নের উৎস এবং বাস্তবায়নকারী দেশ বেছে নেওয়া কেবল অর্থনৈতিক নয় বরং ভূরাজনৈতিক বিষয়। চীনকে অন্তর্ভুক্ত করা মানেই ভারতের সঙ্গে সংবেদনশীল সমীকরণে প্রবেশ করা। ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের সম্পর্ক ও অভিন্ন সীমান্ত বাস্তবতার কারণে এ প্রকল্পে কোনো তৃতীয় পক্ষকে যুক্ত করা হলে দিল্লির শঙ্কা তৈরি হওয়া স্বাভাবিক।
বিশ্লেষকরা সতর্ক করছেন— যদি প্রকল্প বাস্তবায়নে কূটনৈতিক ভারসাম্য রক্ষা না করা যায়, তবে তা দেশের জন্য অর্থনৈতিক সুফল আনার বদলে রাজনৈতিক অস্থিরতা ও আঞ্চলিক উত্তেজনার ঝুঁকি তৈরি করবে।
মন্তব্য করুন