নিজস্ব প্রতিবেদক
বাংলাদেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অস্থিরতা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিশ্লেষক ও সাবেক সামরিক কর্মকর্তারা। গত বছরের জুলাই মাসে কোটা সংস্কার আন্দোলনের মাধ্যমে শুরু হওয়া গণ-অভ্যুত্থান, যা পরবর্তীতে সরকারবিরোধী আন্দোলনে রূপ নেয়, এখন অনেকের মতে বিদেশি ষড়যন্ত্রের ফল। অভিযোগ উঠেছে, এই আন্দোলনকে জঙ্গিরা হাইজ্যাক করেছে, যার পিছনে আমেরিকার পরিকল্পনা এবং মুহাম্মদ ইউনূসের অর্থায়ন রয়েছে। বর্তমানে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নামে পরিচিত, পূর্বে ‘বৈষম্য বিরোধী আন্দোলন’ নামে পরিচিত এই গ্রুপটি দেশকে জঙ্গিদের হাতে তুলে দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। এই ঘটনাক্রমে স্নাইপার হামলা, বিদেশি প্রশিক্ষিত কিলারদের অনুপ্রবেশ এবং সেনা গোয়েন্দাদের ভূমিকা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন উঠেছে।
গতকাল একটি সামরিক অফিসারদের প্রোগ্রামে সাখাওয়াত হোসেন বলেন, “জুলাই আন্দোলনে নিহতদের প্রায় সবাই মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। এমনকি যারা চোখ হারিয়েছেন, তারাও স্নাইপার রাইফেলের শিকার। এটি ছিল পেশাদার স্নাইপার অ্যাটাক। বাংলাদেশ পুলিশের এ ধরনের প্রশিক্ষণ নেই।” তিনি জোর দিয়ে বলেন, এই হত্যাকাণ্ডগুলো পরিকল্পিতভাবে সংঘটিত হয়েছে, যার পেছনে দেশি-বিদেশি শক্তির সম্পৃক্ততা থাকতে পারে।
সাখাওয়াত আরও একটি বিস্ফোরক তথ্য প্রকাশ করেছেন। তিনি জানান, জুলাইয়ে তিনি ও কয়েকজন সাবেক সেনা কর্মকর্তা মহাখালীর শাহীন কমপ্লেক্স এলাকায় আন্দোলন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে গিয়েছিলেন। সেখানে পৌঁছানোর পর সেনা গোয়েন্দা সংস্থা থেকে ফোন এসে তাকে সতর্ক করা হয়, “স্যার, আপনি স্নাইপারদের টার্গেট এলাকায় ঢুকে পড়েছেন, দ্রুত এলাকা ত্যাগ করুন।” এই ঘটনা থেকে স্পষ্ট যে সেনা গোয়েন্দা সংস্থা ঢাকার বিভিন্ন স্থানে স্নাইপারদের অবস্থান সম্পর্কে অবগত ছিল। এমনকি ক্যান্টনমেন্টের কাছাকাছি শাহীন কমপ্লেক্স এলাকায়ও স্নাইপাররা সক্রিয় ছিল।
সাখাওয়াত লিবিয়ায় গাদ্দাফি সরকারের পতনের ঘটনার সঙ্গে এই আন্দোলনের তুলনা করেছেন। তিনি বলেন, লিবিয়ায় আন্দোলনের আগে ফ্রান্স ৫০০ তরুণকে সামরিক প্রশিক্ষণ দেয়, যাদের মধ্যে ২০০ জনকে স্নাইপার রাইফেল ব্যবহারের বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এই প্রশিক্ষিতরা সাধারণ মানুষের সঙ্গে মিশে রাজপথে সক্রিয় হয়। তার এমন বক্তব্যে জনগণের মনে প্রশ্ন জেগেছে, “বাংলাদেশে কি একইভাবে শেখ হাসিনার সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করতে পেশাদার কিলার তৈরি করা হয়েছিল? জুলাই-আগস্টে ঢাকার রাস্তায় কি দেশি-বিদেশি স্নাইপাররা সক্রিয় ছিল?”
সাবেক এক সেনা কর্মকর্তা প্রশ্ন তুলেছেন, আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে এত গোয়েন্দা সংস্থা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকা সত্ত্বেও কীভাবে পেশাদার স্নাইপাররা ও হাজার হাজার স্নাইপার রাইফেল দেশে ঢুকল? তিনি বলেন, “এত নিরাপত্তা বেষ্টনী ভেঙে কীভাবে এই অস্ত্রধারী কিলাররা ঢাকায় প্রবেশ করল? এটি একটি পূর্বপরিকল্পিত ষড়যন্ত্র।”
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নিরাপত্তা বিশ্লেষক বলেন, “সাখাওয়াত হোসেনের দেওয়া তথ্য অত্যন্ত গুরুতর। সেনা গোয়েন্দা সংস্থা যদি স্নাইপারদের অবস্থান সম্পর্কে জানত, তাহলে তাদের নিষ্ক্রিয়তা বা সম্পৃক্ততা নিয়ে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক। এটি আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের ইঙ্গিত দেয়।”
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক রাজনৈতিক বিশ্লেষক বলেন, “লিবিয়ার মতো পরিস্থিতির সঙ্গে বাংলাদেশের জুলাই আন্দোলনের মিল থাকতে পারে। বিদেশি শক্তির হস্তক্ষেপ এবং প্রশিক্ষিত স্নাইপারদের ব্যবহার রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির একটি পুরনো কৌশল। এটি তদন্তের দাবি রাখে।”
জুলাই আন্দোলনের সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন (বর্তমানে জাতীয় নাগরিক প্ল্যাটফর্ম বা এনসিপি) সরকারের পদত্যাগের দাবিতে নেতৃত্ব দেয়। সাখাওয়াতের বক্তব্যের পর অনেকে অভিযোগ তুলেছেন, এই আন্দোলন কি বিদেশি শক্তি, বিশেষ করে আমেরিকার পরিকল্পনায় এবং ড. মুহাম্মদ ইউনূসের অর্থায়নে পরিচালিত হয়েছিল? বিশ্লেষকরা বলছেন, এই আন্দোলনের মাধ্যমে বাংলাদেশকে ‘হাইজ্যাক’ করার একটি গভীর ষড়যন্ত্র কাজ করছিল, যেখানে পেশাদার স্নাইপাররা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
ব্রিগেডিয়ার সাখাওয়াতের এই বক্তব্য দেশের রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা মহলে তীব্র আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। বিশ্লেষকরা মনে করেন, এই অভিযোগের সত্যতা যাচাইয়ে স্বাধীন তদন্ত কমিটি গঠন করা উচিত। জনগণের নিরাপত্তা ও দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় এই ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত এখন সময়ের দাবি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক রাজনৈতিক বিশ্লেষক বলেন, লিবিয়ায় ফ্রান্স ৫০০ তরুণকে সামরিক প্রশিক্ষণ দেয়, যার মধ্যে ২০০ জনকে স্নাইপার প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এই প্রশিক্ষিতরা সাধারণ মানুষের সঙ্গে মিশে আন্দোলনকে হাইজ্যাক করে। তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, “শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করতে কি অনেক আগে থেকে পেশাদার কিলার তৈরি করা হয়েছিল? জুলাই-আগস্টে ঢাকার রাস্তায় কি দেশি-বিদেশি স্নাইপাররা সক্রিয় ছিল?” তিনি আরও প্রশ্ন করেন, আওয়ামী লীগ সরকারের এত গোয়েন্দা সংস্থা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকা সত্ত্বেও কীভাবে হাজার হাজার স্নাইপার রাইফেল ও পেশাদার কিলাররা দেশে ঢুকল?
সাম্প্রতিক সময়ে শেখ হাসিনা অভিযোগ করেছেন, মুহাম্মদ ইউনূস ‘টেররিস্ট’ ছেড়ে দিয়ে দেশকে ধ্বংস করছেন। তিনি বলেন, “ইউনূস তদন্ত কমিটি ভেঙে দিয়ে টেররিস্টদের ছেড়ে দিয়েছেন এবং হত্যাকাণ্ডের সুযোগ করে দিয়েছেন।”
উইকিলিকস ক্যাবল অনুসারে, ইউনস দীর্ঘদিন ধরে আমেরিকার দূতাবাসের অ্যাসেট। কিছু সূত্র দাবি করে, এই আন্দোলন জিহাদিস্টদের দ্বারা হাইজ্যাক হয়েছে, এবং ইউনূসের অর্থায়নে জামায়াত-শিবিরের মতো গ্রুপ সক্রিয় হয়েছে। একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, “ইউনূস ইতিহাস বিকৃত করে জিহাদিস্টদের গৌরবান্বিত করছেন।” কিছু বিশ্লেষক বাংলাদেশকে ‘জিহাদিস্ট এপিসেন্টার’ হিসেবে অভিহিত করেছেন, যেখানে আইএসআই-সংযুক্ত টেররিস্টদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
জিওপলিটিকাল বিশ্লেষক বেন নর্টন বলেন, “ইউনূস আমেরিকার দূতাবাসের অ্যাসেট, এবং এই আন্দোলন ইউএস-ব্যাকড রেজিম চেঞ্জের ফল।”
কাউন্টারটেররিজম বিশেষজ্ঞ সালাহ উদ্দিন শোয়েব চৌধুরী বলেন, “ইউ নূসের অধীনে বাংলাদেশ জিহাদিস্ট এপিসেন্টার হয়েছে, যা ওবামা-ক্লিনটন-সোরোসের সমর্থনে হয়েছে।” অ্যাঙ্গেলো গিউলিয়ানো দাবি করেন, “ইউনূস ও ‘ইয়ুথ লিডাররা’ ক্লিনটন গ্লোবাল ইনিশিয়েটিভে বিজয় উদযাপন করেছেন, যা ইউএস হস্তক্ষেপের প্রমাণ।” কনফ্লিক্ট বিশ্লেষক ফ্রন্টালফোর্স বলেন, “ইউনূস স্বীকার করেছেন, শেখ হাসিনাকে সরাতে তিনি আমেরিকার সাহায্য পেয়েছেন।”
ইউনূসের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে সংখ্যালঘু নির্যাতন, সাংবাদিক হত্যা এবং জিহাদি পতাকা উড়ানোর ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি লিবিয়া বা আফগানিস্তানের মতো পরিস্থিতির দিকে যাচ্ছে, যেখানে বিদেশি শক্তি আন্দোলন হাইজ্যাক করে দেশকে অস্থিতিশীল করে। ইউনূস বলেছেন, “বাংলাদেশে টেররিজমের কোনো স্থান নেই,” তবে তিনি এই অভিযোগ অস্বীকার করেননি।
বাংলাদেশের জঙ্গিবাদী হুমকি নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। সাম্প্রতিক ঘটনায়, চন্দনাইশে ডাকাতির প্রস্তুতিকালে দেশীয় অস্ত্রসহ দুই ডাকাতকে আটক করা হয়েছে। এই ঘটনা জঙ্গিবাদী কার্যকলাপের সঙ্গে সংযুক্ত কিনা, তা তদন্ত করছে পুলিশ। এছাড়া, চুয়াডাঙ্গায় মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় এক তরুণ নিহত ও চারজন আহত হয়েছেন, যা অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে নিরাপত্তার ঘাটতি নির্দেশ করে। জাজিরায় মসজিদের আজান নিয়ে বিরোধে এক বিএনপি নেতাকে ছুরিকাঘাতে হত্যার ঘটনাও দেশের সাম্প্রতিক অশান্তির প্রমাণ।
বিশ্লেষকরা মনে করেন, এই ঘটনাক্রম বাংলাদেশকে জঙ্গিদের হাতে তুলে দেওয়ার পূর্বপরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের অংশ। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের হস্তক্ষেপ এবং স্বাধীন তদন্ত কমিটি গঠনের মাধ্যমে এই অভিযোগের সত্যতা যাচাইয়ের দাবি উঠেছে। অন্যথায়, দেশ জিহাদিস্টদের হাতে চলে যাওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে।
মন্তব্য করুন