নিজস্ব প্রতিবেদক
জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সফরকে কেন্দ্র করে নতুন বিতর্কের জন্ম হয়েছে। কারণ, তাঁর সফরসঙ্গী তালিকায় স্থান পেয়েছেন এমন কয়েকজন ব্যক্তি, যাদের রাজনৈতিক পরিচয় ও অতীত কর্মকাণ্ড বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মানবতার নীতির পরিপন্থী।
বিশেষ করে মানবতা বিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত সাবেক জামায়াত আমির মতিউর রহমান নিজামীর পুত্র ড. নকিবুর রহমান তারেকের উপস্থিতি জাতির বিবেককে নাড়া দিয়েছে। একই তালিকায় রয়েছেন এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্য সচিব ডা. তাসনিম জারা এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা হুমায়ুন কবির যিনি অতীতে মার্কিন সিনেটরদের স্বাক্ষর জাল করার অভিযোগে দণ্ডপ্রাপ্ত হন।
এর পাশাপাশি জামায়াতের নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহেরও এই সফরে অংশ নিয়েছেন। তাঁর সাম্প্রতিক বিদেশি এক বৈঠকে করা মন্তব্য—“ইউনূস সরকারের সহযোগিতায় ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে ৫০ লাখ যোদ্ধা প্রস্তুত” শুধু দায়িত্বজ্ঞানহীন নয়, বরং বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সম্পর্ক ও আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য এক বিপজ্জনক ইঙ্গিত বহন করে।
প্রশ্ন উঠছে, জাতিসংঘের মতো গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক ফোরামে রাষ্ট্রের প্রতিনিধিত্বের সফরে কেন এবং কীভাবে এমন বিতর্কিত ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত করা হলো? এটি কি রাজনৈতিক সমঝোতার ফল, নাকি এর পেছনে আরও গভীর কোনো কৌশলগত উদ্দেশ্য কাজ করছে—তা এখন জাতির জানার দাবি।
শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ গত দেড় দশকে জঙ্গিবাদ, মৌলবাদ ও মানবতা বিরোধী শক্তির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছিল। সেই সময়ে দেশ জঙ্গি-সন্ত্রাসমুক্ত একটি প্রগতিশীল রাষ্ট্রে পরিণত হয়। অথচ আজ দেখা যাচ্ছে, সেই পরাজিত শক্তিগুলো আবারও রাষ্ট্রীয় মঞ্চের আশ্রয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে মুখ তুলে দাঁড়াচ্ছে। এটি শুধু রাজনৈতিক বিচ্যুতি নয়, বরং মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রতি এক স্পষ্ট অবমাননা।
একটি জাতির পররাষ্ট্রনীতি তার মর্যাদা ও মূল্যবোধের প্রতিফলন। বঙ্গবন্ধুর সময় থেকে শেখ হাসিনা পর্যন্ত বাংলাদেশ “সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়” নীতিতে বিশ্বাস করে এসেছে। কিন্তু আজকের এই সফর ও সফরসঙ্গীদের রাজনৈতিক পরিচয় সেই নীতির ভিত্তিকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। বিশেষ করে ভারতের বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মক বক্তব্য শুধু কূটনৈতিক সম্পর্কই নয়, দক্ষিণ এশিয়ার শান্তি ও আঞ্চলিক ভারসাম্যকেও হুমকির মুখে ফেলতে পারে।
যদি ড. ইউনূস সত্যিই রাষ্ট্রের প্রতিনিধি হিসেবে সফর করে থাকেন, তবে তাঁর প্রথম দায়িত্ব ছিল মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী, পেশাদার ও নিরপেক্ষ ব্যক্তিদের নিয়ে দল গঠন করা। পরিবর্তে সেখানে জায়গা পাচ্ছেন এমন ব্যক্তিরা, যাদের অতীত রেকর্ড বাংলাদেশ রাষ্ট্রের নৈতিক ভিত্তির সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এটি নিঃসন্দেহে জাতীয় স্বার্থ ও মর্যাদার পরিপন্থী।
আজ জাতি জানতে চায় রাষ্ট্রের নামে বিদেশ সফরে গিয়ে কারা আসলে প্রতিনিধিত্ব করছেন? বাংলাদেশ না জামায়াত-বিএনপির পুনর্বাসন চেষ্টায় লিপ্ত কিছু মুখ? এই প্রশ্নের উত্তর এখন ড. ইউনূসকেই দিতে হবে।
বাংলাদেশের মানুষ মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী। তারা জানে, মানবতা বিরোধীদের উত্তরাধিকার কখনোই জাতির প্রতিনিধি হতে পারে না। জাতিসংঘের মতো ফোরামে রাষ্ট্রের মর্যাদা যেন রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র ও ব্যক্তিগত উচ্চাকাঙ্ক্ষার বলি না হয় এটাই আজকের সময়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বার্তা।
মন্তব্য করুন